ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে আত্মহত্যা: সেলিম

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া মানে আত্মহত্যা: সেলিম

ঢাকা: এলডিপির একাংশের মহাসচিব সাবেক ছাত্রনেতা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষীপুর-১ আসনে ২০দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা সমান কথা। আমরা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের অপসারণ ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন চাই।

সে লক্ষ্যে বিএনপির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে আন্দোলন করে যাচ্ছি।

নিজের কার্যালয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাচারিতায় তিনি এ কথা বলেন। সাক্ষাতকারের কিছু অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

বাংলানিউজ: নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ২০দলীয় জোটের সঙ্গী হিসেবে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন। সরকারবিরোধী সেই আন্দোলন কবে নাগাদ বেগবান হবে বলে মনে করেন?
সেলিম: আমরা এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের অপসারণ ও নিরপেক্ষ একটা নির্বাচন চাই। দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, এটি এখন বাংলাদেশে সুপ্রতিষ্ঠিত। প্রত্যেকটা ব্যক্তি এখন স্বীকার করছেন, দলীয় সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনো নির্বাচন কমিশনের দ্বারা সম্ভব নয়। সেই জনমতকে আমরা সামনে এগিয়ে এনে একটা তীব্র আন্দোলন করে এই সরকারকে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য করবো। সেই আন্দোলনের প্রক্রিয়া চলমান। আন্দোলনকে বেগবান করার জন্য বিএনপির নেতৃত্বে রাজনৈতিক দলগুলোকে এক কাতারে আনার প্রচেষ্টা চলছে। আমরা তারই একটা অংশ হিসেবে এর সফলতা কামনা করছি। আলোচনা শেষ করে জনগণকে সম্পৃক্ত করে এক সময় আমরা শক্ত একটা আন্দোলনের ডাক দেব।

বাংলানিউজ: তাহলে বর্তমান সরকারের অধীনে আপনারা নির্বাচনে যাবেন না।
সেলিম: বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা একই সমান। এই সরকারকে বিশ্বাস করে ২০১৮ সালের নির্বাচনে কি পরিণতি ঘটেছে সেটা সকলেই জানে। সুতরাং কোনো অবস্থাতেই আমরা সে নির্বাচনে যাবো না। সরকারি দল যদি পৃথিবীর সবচেয়ে পবিত্রতম স্থানে গিয়ে শপথ করে বলে তার অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে, আমরা সেটাও বিশ্বাস করি না। সে নির্বাচনে আমরা যাবো না। সে নির্বাচন হতেও দেব না, প্রতিহত করবো। সে নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতাও পাবে না। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক মহল নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেছে। সরকার যদি মনে করে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো ধোঁকা দিয়ে ভোট চুরি করে রাতের অন্ধকারে আবার নির্বাচিত হবে, তাদের সে স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে। আমরা আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।  

বাংলানিউজ: দেশের সবশেষ রাজনীতি নিয়ে কিছু বলেন।
সেলিম: রাজনীতি যেমন চলার তেমন চলছে। ক্ষমতাসীনরা প্রবল প্রতাপে সরকার পরিচালনা এবং লুণ্ঠন দুটোই করে যাচ্ছে। রাজনীতিবিদ হিসেবে আমরা সেটা ঠেকাতে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি। সরকার সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে কুক্ষিগত করে ফেলেছে। সেখান থেকে সরে আসতে হলে আমাদেরকে যে কোনোভাবে হোক নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নিজস্ব দলকে শক্তিশালী করতে হবে এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। যে কোনো কারণেই হোক জনগণকে হয়তো সম্পূর্ণ সম্পৃক্ত করা যাচ্ছে না। সরকারের বাহিনীগুলোর গুম-খুন-লুণ্ঠন ইত্যাদি জনমনে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করছে। এর মধ্যে দিয়ে আমরা আশাবাদী, আমরা একটা জিনিস প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি যে বর্তমান দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সম্ভব নয়। এ নিয়ে আমরা জাতীয় ঐক্যমত্য সৃষ্টি করেছি। দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন হবে না, হতে দেওয়া যাবে না। আমরা এ প্রশ্নে একমত।

বাংলানিউজ: গত রমজানের ঈদের আগে শোনা যাচ্ছিল সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বিএনপিসহ বিরোধীদলগুলো। তখন অনেকে বলেন, ঈদের পরে আন্দোলন হবে। এখন আবার রাজনীতির মাঠ অনেকটা শীতল। কারণ কী?
সেলিম: যুগ যুগ ধরে আমরা যেটা দেখে আসছি, বর্ষাকালে কোনো আন্দোলন করা যায় না। আবার দেশ বন্যা কবলিত। আসলে যেটা দরকার সাংগঠনিক শৃঙ্খলা এবং সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা। এটা থেকে বিএনপি অনেক পিছিয়ে আছে। এখানে ব্যাপক দীর্ঘসুত্রিতা কাজ করছে। যেটা বিএনপির শুভাকাঙ্খী রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যথিত করে। স্টিয়ারিং বিএনপির হাতে, সমর্থনও বিএনপির হাতে, অন্য রাজনৈতিক দলের তেমন সমর্থন সারা বাংলাদেশে নেই। দুই একটা দল ছাড়া অন্যদলগুলো ব্যক্তিকেন্দ্রিক ও রাজধানীকেন্দ্রিক। যেহেতু ঐক্যের একটা কথা আছে, সেহেতু ঐক্যটাকে ত্বরান্বিত করা দরকার। আমি মনে করি, অসময়ে অপ্রয়োজনীয় আন্দোলন করে শক্তি ক্ষয় করার চেয়ে সাংগঠনিক শক্তিকে আরও বৃদ্ধি করে সময়মতো একটা ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার। একটা ‘ডু অর ডাই’ পজিশনে আসা দরকার। সেটা হয়তো ২০২৩ সালের শেষের দিকে যখন সরকার নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চাইবে, পাতানো নির্বাচন হোক অথবা একতরফা নির্বাচন। সেটার বিরুদ্ধে সর্বশক্তি নিয়ে আমাদের সবাইকে মাঠে নামতে হবে।

বাংলানিউজ: তাহলে আমরা বলতে পারি, ২০২৩ সালের ডিসেম্বরের আগে আর তেমন কোনো আন্দোলন হচ্ছে না? 
সেলিম: ঠিক ডিসেম্বর না, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে আসলে ওয়ার্ম আপ হওয়া উচিত। সরকার যদি দাবি না মেনে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে গায়ের জোরে নির্বাচন করতে চায়, সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় একটা সর্বাত্মক আন্দোলনে যেতে হবে। এটার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে, সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে।

বাংলানিউজ: সম্প্রতি পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে সবাই দাবি করছে এই সেতু উদ্বোধনের কারণে সরকারের জনপ্রিয়তা অনেক বেড়ে গেছে। এ বিষয় আপনার মন্তব্য কী? 

সেলিম: সরকার তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেও একটা ফ্লপ অনুষ্ঠান করেছে। মানে রাষ্ট্রীয় টাকা তছনছ করে একটা উৎসব করতে চেয়েছে। মানুষের মনের মধ্যে তো আনন্দ উচ্ছ্বাস নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, হাহাকার, ইত্যাদির মধ্যে সরকারের লুণ্ঠনকারীদের মধ্যে একটা আনন্দ উল্লাস থাকতে পারে। পদ্মা সেতু আমাদের একটা প্রয়োজনীয় বিষয়। আমরা আমাদের ট্যাক্সের টাকা দিয়ে করেছি। যদিও সেখানে পুকুর চুরি, সাগর চুরি হয়েছে। যার বিরুদ্ধে আমরা সব সময় সোচ্চার থাকবো। এক পদ্মা সেতু দেখিয়ে সরকার অনেক কিছু করতে চাচ্ছে। তাদের সেই প্রচেষ্টা একদম মাঠে মারা গেছে। জনগণ থেকে সাড়া পায়নি। যেটা অনেক ক্ষেত্রে হাসির পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা সিস্টেমটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।  

বাংলানিউজ: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের বর্তমান অবস্থা কী?
সেলিম: ২০দলীয় জোট একটি পরীক্ষিত জোট। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির পাশে আছে। হয়তো সবার শক্তি সমান না। ২০দল গঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রত্যেকটা দলেই একাধিকবার ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙছে, অনেকে চলে গেছে, অনেকে পুরো দল নিয়ে ২০দল থেকে চলে গেছে, তারপরও ২০দলীয় জোটের একটা আবেদন আছে, একটা ব্রান্ডিং নেইম। এখন আমরাতো চাইবো ২০দলকে আরও সক্রিয় করতে। পাশাপাশি অন্য রাজনৈতিকগুলোকেও জোটে আনতে চাইবো। তবে আমি যতটুকু জানি, বিএনপির নীতি নির্ধারণী মহল চায় যে একটা যুগপৎ আন্দোলন। প্রত্যেকে তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন করবে। বিএনপি হয়তো একটা লিয়াঁজো কমিটি করবে। সেই কমিটির মাধ্যমে প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের হোক অথবা ছোট ছোট জোটগুলোর প্রতিনিধি হোক তারা বসে কর্মসূচি প্রণয়ন করবেন এবং মাঠে বাস্তবায়ন করবেন। এটিই আমাদের কাছে মনে হচ্ছে। আলাপ আলোচনা চলছে।  

বাংলানিউজ: আমরা জানি এলডিপি গঠনে আপনার বড় ভূমিকা ছিল। সম্প্রতি এলডিপি থেকে একটি বড় অংশের নেতাকর্মী নিয়ে আবদুল করিম আব্বাসী ও আপনি বেরিয়ে এসে নতুন কমিটি করেছেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
সেলিম: এলডিপি বাংলাদেশের একটি পরিচিত নাম। যদিও কর্নেল অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপির অন্তশারশূন্যতা প্রমাণিত হয়েছে। কর্নেল অলির সাথে যারা এলডিপিতে যোগদান করেছিল ওনার দাম্ভিকতার কারণে কেউ এখন ওনার সাথে নেই। ওনার দাম্ভিকতা, অহংকার এবং অরাজনৈতিক মানসিকতার কারণে আমরা ওনার কাছ থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমরা ২০দলের সাথে আছি। আমাদের অংশ সরকারবিরোধী অবস্থানে আছি। নির্বাচন কমিশন নিবন্ধনের জন্য যে ঘোষণা দিয়েছে আমরা ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভা ডেকে সে বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা দলের নিবন্ধনের যে আইন সেটা মেনে দলকে নিবন্ধন করবো এবং দলকে শক্তিশালী করবো। সাংগঠনিক মাস পালন করবো। অচিরেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের করণীয়, চিন্তা চেতনা, নিবন্ধন, দলের নাম পুরো বিষয় জাতিকে অবহিত করবো।

বাংলানিউজ: নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধনে এলডিপিতো কর্নেল অলি আহমদের নামে আছে, তাহলে আপনাদের এলডিপি কি অন্য নামে নিবন্ধন নেবেন?
সেলিম: আগের এলডিপি কর্নেল অলি আহমদের নামে থাকলেও আমরা জন্মলগ্ন থেকে আছি। আমাদের সঙ্গে একটা বড় অংশ আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে ইতোমধ্যে কয়েকবার চিঠি দিয়েছি আমাদের অংশকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য। এখন আমরা কোন নামে নিবন্ধন নেব সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। বাংলাদেশে কোনো রাজনীতিক দলের নাম কারও পৈত্রিক সম্পত্তি না। যেটা কর্নেল অলি দাবি করেন। ব্রিটিশ আমল বা তার পর থেকে একই নামে একাধিক রাজনৈতিক দল তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আমরা নিবন্ধনের আইন মেনে দলের নামের যদি কোনো সংশোধন করতে হয় সেটা করার ব্যাপারে বর্ধিত সভা আহবান করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত হলে জানাবো। আমাদের এলডিপির অবস্থান সম্পূর্ণ বিএনপির রাজনীতির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজনীতি করা। জিয়া পরিবার, তারেক রহমানের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আছে। আমাদের সবার বিএনপির প্রতি সমর্থন আছে, সেভাবে এগিয়ে যাবো। তারেক রহমান যেভাবে চাচ্ছেন এই কর্তৃত্ববাদী সরকারের অপসারণ করা সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। আমরা তারেক রহমানের নেতৃত্বে পূর্ণ আস্থাশীল হয়ে কাজ করছি।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
এমএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।