ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২
সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের  তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ

ঢাকা: সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই)। ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

পল্লীজীবনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন এরশাদ।

পল্লীজীবনের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটিয়ে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন এরশাদ।  সাবেক এ রাষ্ট্রপতির কীর্তি অক্ষয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশে।

এরশাদ ১৯৩০ সালের ২০ মার্চ বর্তমান কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলায় তার নানার বাড়িতে জন্ম নেন। তার পৈত্রিক নিবাস অবিভক্ত ভারতের  কোচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমা শহরে।

তার পিতার নাম মৌলভী মকবুল হোসেন। তিনি ছিলেন একজন খ্যাতনামা আইনজীবী। তার পিতামহ মৌলভী শাহাদৎ হোসেনও ছিলেন একজন প্রখ্যাত আইনজীবী এবং তিনিই ছিলেন কোচবিহার অঞ্চলের প্রথম মুসলিম আইনজীবী। এরশাদের মায়ের নাম মজিদা খাতুন।

এরশাদ ছিলেন নয় ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান এবং চার ভাইয়ের মধ্যে প্রথম। তার ডাকনাম ছিল পেয়ারা। তার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে দিনহাটায়। দিনহাটা হাইস্কুল থেকে তিনি ১৯৪৬ সালে ম্যাট্রিক পাস করেন।

 ম্যাট্রিক পাসের পর দিনহাটা ছেড়ে এরশাদ ১৮৪৬-৪৭ শিক্ষাবর্ষে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে ভর্তি হন। এ কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি ক্রীড়া ও সাহিত্য উভয় ক্ষেত্রে সমানভাবে যুক্ত হন। ১৯৫০ সালে তিনি কারমাইকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে বি.এ. পাস করেন। পরে তার বাবার ইচ্ছায় তিনি এম.এ. করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।

১৯৫২ সালের ১ জানুয়ারি তিনি তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের কোহাট সেনানিবাসে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৫৪ সালে তিনি ময়মনসিংহের স্বনামধন্য খানসাহেব উমেদ আলি সাহেবের কন্যা রওশন আরা ডেইজিকে বিয়ে করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে পশ্চিম পাকিস্তানে আটকা পড়েন তিনি। ১৯৭৩ সালে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে তিনি আবার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

১৯৭৯ সালের ৭ নভেম্বর তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল পদে উন্নীত হন। বিচারপতি আব্দুস সাত্তার তার মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত ঘোষণা করে সামরিক আইন জারির মাধ্যমে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে সেনাপ্রধান হিসেবে এরশাদ ১৯৮৪ সালের ২৪ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন।

১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি তিনি জাতীয় পার্টি গঠন করেন এবং তিনি এ পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে রাজনীতি এবং সাংগঠনিক যাত্রা শুরু করেন। রাজনৈতিক দল গঠনের পর তিনি দেশে সাধারণ নির্বাচনের ঘোষণা দেন। ১৯৮৬ সালের ৭ মে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ১৫৩ আসন লাভ করে সরকার গঠন করতে সক্ষম হয়।

১৯৮৬ সালের অক্টোবর মাসে তিনি সেনাবাহিনী থেকে অবসর নেন। ১৯৮৬ সালের ১৫ অক্টোবর দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে এরশাদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের রাষ্ট্রপতি হন। ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর তিনি জাতীয় সংসদে ভাষণ দিয়ে সামরিক আইন তুলে দেন।

উন্নয়ন-সমৃদ্ধি-সংস্কার কর্মসূচিতে দেশ পরিচালনার ইতিহাসে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেন এরশাদ। তার দু’টি কালজয়ী স্লোগান হচ্ছে ‘৬৮ হাজার গ্রাম বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’ এবং ‘মুক্তিযোদ্ধারা এদেশের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান’। গ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের জন্য তিনি ১৯৮৬ সালের ৬ অক্টোবর ঢাকার শেরে বাংলা নগরে বিশাল কৃষক সমাবেশে ‘পল্লীবন্ধু’ উপাধি পান।

তার যুগান্তকারী কার্যক্রম হচ্ছে- উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন, দেশের সব মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা, ভূমি সংস্কার, ওষুধ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন, পথকলি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠাতা, গুচ্ছগ্রাম কর্মসূচি বাস্তবায়ন, সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন, গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ ঘটানো, শান্তি মিশনে সেনা পাঠানো এবং সারাদেশে ৫০৮টি বড় ধরনের ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও ১০ হাজার কিলোমিটার নতুন পাকা রাস্তা নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধন।

তিনি ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা করেন। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি ও সংস্কারে তিনি এদেশের সব খাতেই অবদান রেখেছেন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষের মনে যেভাবে জায়গা করে নিয়েছেন, তা অমলিন থাকবে চিরকাল।

তবে এরশাদ তাঁর জীবনদশায় পার্টির দায়িত্ব ছোট ভাই জিএম কাদেরের হাতে তুলে দিলেও এখন দলটির মধ্যে অস্থিরতা বিরাজমান। এরশাদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী থেকে শুরু করে এখনো এই দিনে এরশাদ কল্যাণ ট্রাস্ট্র ও জাতীয় পার্টি আলাদা আলাদা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরশাদ কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ব্যানারে এরশাদের সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদ এই দিনে আলাদা কর্মসূচি পালন করে আসছেন। এবারও এর ব্যাতিক্রম ঘটবে না বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে এরশাদ ট্রাস্ট স্মরণসভা করবে। দিনব্যাপি কোরআন খতম, মিলাদ-মাহফিল এবং দুপুরে হাইকোর্ট মাজারে  দুস্থদের মাঝে বিরিয়ানি বিতরণ করবেন বিদিশা এরশাদ।

এদিকে দিনটি উপলক্ষে সাদামাটা কর্মসূচি নিয়েছে জাতীয় পার্টি। জাপা কাকরাইল মসজিদে এরশাদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে নেতাকর্মীরা। এরপর ১০ টা থেকে বিকেল পর্যন্ত কুলখানি, বিকেলে মিলাদ মাহফিল, তোবারক বিতরণ করবেন দলটির নেতাকর্মীরা। তবে দলটি বলছে, দেশে করোনার সংক্রমণ বাড়ায় ও বন্যার কারণে কোনো কর্মসূচি রাখা হয়নি।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২২ 
এসএমএকে/ইআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।