ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

আ. লীগের কড়াইলের ইউনিট কমিটির বিরোধিতার বলি আলামিন

মিরাজ মাহবুব ইফতি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
আ. লীগের কড়াইলের ইউনিট কমিটির বিরোধিতার বলি আলামিন নিহত আলামিন

ঢাকা: রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কড়াইল ১ নম্বর ইউনিট আওয়ামী লীগের কমিটির বিরোধিতার জেরে হত্যার শিকার হয়েছেন মুদি দোকানদার আলামিন। এমনটাই দাবি করছেন তার স্বজনরা।

 

ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল আলামিনের চাচাতো ভাই জসীমউদ্দীন রিপন। ২২ জুলাই তাকে বাদ দিয়ে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই কমিটির বিরোধিতা করে আসছিল তাদের পরিবার।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাজধানীর বনানী এলাকার কড়াইল বস্তিতে গিয়ে কথা হয় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে। তারা বলেছেন, রাজনৈতিক রেষারেষির কারণে খুন হয়েছেন আলামিন।  

বুধবার (১৭ আগস্ট) রাতে রাজধানীর বনানীর কড়াইল বস্তিতে আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আলামিনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে হামলায় নারীসহ ছয়জন আহত হন। আর মসজিদের ভেতরে কোপানো হয় আলামিনের ভাই নাসিরকে।  

বৃহস্পতিবার এ ঘটনায় বনানী থানায় ২২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আলামিনের মেজো ভাই মো. জুয়েল সরকার। মামলার আসামিরা হলেন- মো. নুর আলম নুরু (৩৮), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. খাজা (৪৫), মো. আমজাদ (৩০), মো. রাসেল (৩৫), মো. মাহাবুর আলম (২১), মো. কবির (৩৮), মো. মাসুদ রানা (১৯), মো. আলী হোসেন (২৭), মো. আজিজুল (৩২), মো. সেন্টু মৃধা (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম রাজু (৪০), মো. মাহবুব আলম (৩৫), মো. তানভীর (২০), মো. মামুন (২০), মো. সাব্বির (১৯), মো. মেহেদী (১৯), মো. ইলিয়াস আহমেদ (২২), মো. শহিদুল (৩৫), স্বাধীন (১৯), মো. নাজির (৪০) ও কাউসার (৫৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের আসামি করা হয়েছে।

নিহত আলামিনের ভাই মো. জুয়েল সরকার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চাচাতো ভাই জসীমউদ্দীন রিপন কড়াইল থানা ১ ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিলেন। তাকে বাদ দিয়ে গত মাসের ২২ জুলাই কমিটি ঘোষণা করা হয়। আমার চাচাতো ভাইকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বাদ দিয়ে নতুন কমিটি ঘোষণা দেয়। এরপর থেকেই তাদের সঙ্গে বিরোধিতা চলে আসছিল। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি কাদের খান, কাশেম,আজাদ, মাসুদ এরা সবাই সন্ত্রাসীদের মদতদাতা। কাদের খানের আশকারায় এরা (সন্ত্রাসীরা) একজন মানুষকে মসজিদের ভেতরে ঢুকে হামলা করে। আরেকজনকে হত্যা করে।

তিনি বলেন, বুধবার দুপুর ২টায় এরশাদ স্কুল মাঠে গেলে আমার চাচাতো ভাই রিপনের ছেলে মো. নিহাদ সরকারকে (৭) মারধর করে আসামি নুরুর ছেলে। এই ঘটনার জেরে ওই দিন বিকাল ৫ টায় আসামিরা চাপাতি, চাকু, ছোরা, চাইনিজ কুড়াল, লাঠিসহ অন্যান্য দেশীয় অস্ত্রসহ আমার ভাতিজা জুবায়ের সরদারকে (১২) বাসা থেকে ডেকে নিয়ে বাসার সামনে এলোপাথারি মারধর করে। আমার ভাতিজাকে মারধরের বিষয়ে জানতে চাই আসামি নুরুর কাছে। নুরু উত্তেজিত হয়ে আমাকে বলে- দেখতেছি বিষয়টা। কথা বলা শেষে এশার নামাজ পড়তে মসজিদে যাই আমি। আর এ সময়ের মধ্যে হামলা চালায় নুরুর লোকজন। ওই হামলায় আমার ছোট ভাই আলামিন নিহত হযন। আরেক ভাই নাসির গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।  

নিহত আলামিনের বোন আকলিমা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, এক মাস ধরে আমার ভাইদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল সন্ত্রাসীরা। ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠানেও আমার ভাইদের ওপর হামলা করা হয়।  

তিনি জানান, আওয়ামী লীগের কড়াইল বস্তির উত্তর ইউনিটের কমিটি দেওয়া নিয়ে মোহাম্মদ আলী, নুরুসহ ওই গ্রুপের সঙ্গে তার ভাইদের বিরোধ ছিল।  

হামলাকারীদের হাত থেকে দুই ভাইকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসে আহত হয়েছেন প্রতিবেশী তিন নারী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাদের একজন বলেন, ওরা আমাদের বাড়িঘরেও হামলা চালিয়েছে। হামলায় একজন মারা গেলেও পুলিশ এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।

এলাকাবাসী বলছেন, আওয়ামী লীগের কমিটি দেওয়াকে কেন্দ্র করে হামলার ঘটনা ঘটলেও এর পেছনে রয়েছে এলাকার নিয়ন্ত্রণ। আল আমীন ও তার ভাই ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমানের অনুসারী। আর হামলাকারীরা আজাদ নামের আরেকজনের অনুসারী। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। গত কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি মফিজুর রহমানের কাছে হেরে যান। কড়াইল বস্তি এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে তারাই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি এলাকাবাসীর।  

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান বলেন, এ হামলার পেছনে রাজনৈতিক কোনো না কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। না হলে এত বড় ঘটনা ঘটত না। কোন নেতার ইন্ধনে ঘটেছে, তা আমি জানি। যেহেতু আমি রাজনীতি করি, তাই তার নামটা বলতে পারছি না।  

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, কড়াইল বস্তি এলাকায় আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপের মধ্যে একটি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় একজন মারা গেছেন। থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদের ধরতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।  

পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এ ধরনের অভিযোগ অসত্য। পুলিশের সামনে কোনো হামলা হয়নি।  

>>আরও পড়ুন: কড়াইল বস্তিতে আ. লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত এক

>>আরও পড়ুন: কড়াইলে খুন: কী হবে আল আমিনের ছেলে রাইয়ানের!

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২২
এমএমআই/এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।