ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুর

নিশাত বিজয়, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করায় শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুর

ঢাকা: ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরদিন (১৬ আগস্ট) যশোরে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল জাতীয় যুবলীগের তৎকালীন প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শেখ সাহাবুর রহমানের নেতৃত্বে। সে সময় শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় আন্দোলন সংগঠিত হচ্ছিল।

সেই প্রতিবাদ, আন্দোলন স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্য ৩০ আগস্ট খাজুরা বাজারের অজিত পুরীর দোকান থেকে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাবুর রহমানকে সেনাবাহিনী তুলে নিয়ে যায় যশোর সেনানিবাসে। তখন যশোরের প্রতিরোধ আন্দোলনের কারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহম্মাদ মজনুসহ আরও অনেককে গ্রেফতার করা হয়।

পরে ১৭ সেপ্টেম্বর যশোর শহরের ঢাকা মহাসড়কের বারান্দিপাড়া ব্রিজের নিচে বস্তাবন্দি মরদেহ পাওয়া যায় সাহাবুরের রহমানের। এরপর পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনকেই তার শহীদ দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

সে সময় সাহাবুর রহমান ছিলেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা।

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খয়রাত হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সাহাবুর ভাইয়ের নেতৃত্বে যশোরের পাড়া মহল্লায় আমরা আন্দোলন গড়ে তুলতে মিছিল করা শুরু করেছিলাম। সেই এ আন্দোলনকে বানচাল করতে ৩০ আগস্ট সাহাবুর ভাই, মজনুসহ বিভিন্ন এলাকার কর্মীদের গ্রেফতার করে সেনাবাহিনী যশোর ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে নির্যাতন শুরু করলে আমরা গাঁ ঢাকা দেই। ১৭ সেপ্টেম্বরে সাহাবুর ভাইর বস্তাবন্দি মরদেহ বারান্দিপাড়া ব্রিজের নিচে পাওয়া যায়। তাকে বৈদ্যুতিক শকসহ অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।  

তিনি আরও বলেন, সাহাবুর রহমান যুবলীগের জাতীয় নেতা হলেও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। তার বাড়ি ছিল বাঘারপাড়ার সেকেন্দারপুর গ্রামে। সংসার চালানোর জন্য তিনি শহরের কাপুড়িয়া পট্টি রোডে ‘শাড়ি বিতান’ নামে একটি দোকান দিয়েছিলেন। ওই দোকানের আয়ে তার সংসার চলতো।

এ প্রভাবশালী যুবলীগ নেতার মৃত্যুর পর স্ত্রী ও ছোট চার সন্তানের ওপর নেমে আসে কালো অন্ধকার। তখন তিন মেয়ে- নাসিমা পারভীন (১০), শাহনাজ পারভীন (৬), সেলিনা পারভীন (৩) এবং একমাত্র ছেলে শেখ আসাদুজ্জামান চক্ষুকে (২) নিয়ে বাবার বাড়ি যশোর সদরের সরুইডাঙ্গা গ্রামে চলে আসেন তার স্ত্রী হাসিনা বেগম।

অস্বচ্ছলতার কারণে সন্তানদের পড়ালেখাও বেশি দূর আগাতে পারেনি। এরমধ্যে দীর্ঘ ২১ বছর পরে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালের ১০ এপ্রিল সাহাবুর রহমানের স্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
 
প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বামী হত্যার বিচার এবং ছেলে চক্ষুকে সরকারি চাকরি দেওয়ার অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার অনুরোধ গ্রহণ করেন। তার কার্যলয়ের পরিচালক আব্দুস সালাম খান স্বাক্ষরিত চিঠি আসে ৩০ এপ্রিল, ১৯৯৭ সালে। তাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে তার চাকরির ব্যবস্থা করার কথা উল্লেখ ছিল। কিন্তু সে চাকরি আর পাওয়া হয়নি তার। কারণ পুনরায় আর প্রধানমন্ত্রীর কার্যলায়ে যোগাযোগ করতে পারেনি সাহাবুর রহমানের পরিবার।

শেখ সাহাবুর রহমানের ছেলে শেখ আসাদুজ্জামান চক্ষু বলেন, আমার বাবা হত্যার বিচার পাইনি। বাবাকে হত্যার পর নিজেদের বাড়ি ছেড়ে মাকে চলে আসতে হয়েছিল নানাবাড়িতে। অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে সেখানে বড় হয়েছি আমরা। আমার মা মারা গেছেন ১১ বছর আগে। আমার বাবা দেশের জন্যে, বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন উৎসর্গ করলেও আমাদের দেখার কেউ নেই।

তিনি বলেন, আমার মা গল্প করতেন, বাবাকে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডিতে বাড়ি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু বাবা যশোর ছেড়ে যেতে চাননি কোথাও। অথচ বাবাকে হত্যার পরে আমাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। নানার বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছিল তখন, এখনো সেখানেই আছি। আমাকে চাকরি দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠি পাঠালেও আমরা আর কোনো দিন যোগাযোগ করতে পারেনি বলে সেই চাকরিও হয়নি। এক সময় ধান চালের ব্যবসা করতাম, তাও এখন বন্ধ।

আক্ষেপ করে এ শহীদের ছেলে বলেন, আমাদের অভাব-অনটন আর দূর হল না। কেউ কোনো দিন আমাদের খোঁজ নেয়নি। বাবা যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। সেই যুবলীগও কোনো দিন আমাদের পাশে দাঁড়ায়নি। আমি একটু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।

এ বিষয়ে খুলনা বিভাগ আওয়ামী যুবলীগের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সোহাগ বলেন, উনি জাতির দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছেন এবং জীবন দিয়েছেন। তাকে সম্মান দেওয়া আমাদের দ্বায়িত্ব। উনি আমাদের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন, একই সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।

'যেহেতু আজকেই বিস্তারিত জানলাম, দেরি হয়ে গেছে। কিন্তু আগামী বছর দলের পক্ষ থেকে ওনাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হবে।

যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল পারভেজ বলেন, 'উনি আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা ছিলেন। পার্টি চেয়ারম্যানকে জানানো হবে ওনার ব্যাপারে'।

বাংলাদেশ সময়: ২০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।