ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

১৯ বছর পর রামগতি উপজেলা আ.লীগের সম্মেলন

ভোটের মাধ্যমে নেতা বানাতে চায় তৃণমূল

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০২২
ভোটের মাধ্যমে নেতা বানাতে চায় তৃণমূল

লক্ষ্মীপুর: দীর্ঘ ১৯ বছর পর লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আ স ম আবদুর রব সরকারি কলেজ মাঠে সোমবার (১০ অক্টোবর) সম্মেলন হওয়ার প্রস্তুতি চলছে।

 

নেতাদের ছবি সম্বলিত তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুনে চেয়ে গেছে গোটা উপজেলা। দৌড়-ঝাঁপ দিচ্ছে পদপ্রত্যাশীরা।  

দীর্ঘ সময় পর সম্মেলন হওয়ায় চাঙ্গা ভাব স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। সিলেকশন নয়- তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং কাউন্সিলররা চাচ্ছেন, ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করার।  

উপজেলা আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, এবং ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামী নেতারা জানায়, বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৬ বছর আগে। ২০০৩ সালের ৩ অক্টোবর সম্মেলনের মাধ্যমে বৃহত্তর রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠিত হয়। এরপর কেটে গেছে ১৯ বছর। সম্মেলনের তারিখ দেওয়া হয়েছে ১৩ বার। কিন্তু অদৃশ্য কারণে সম্মেলন করা হয়নি।  

তারা আরও জানায়, রামগতি উপজেলা ভাগ হয়ে কমলনগর উপজেলা গঠিত হয়। পরে ২০১২ সালের আগের কমিটির নেতাদের একটি অংশ দিয়ে আরেকটি কমিটির অনুমোদন দেয় জেলা আওয়ামী লীগ।  

৬৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাওলা চৌধুরীসহ ১২ জন এরই মধ্যে প্রয়াত হয়েছেন। পরে সহসভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন আবদুল ওয়াহেদ, তিনিই দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলেন।  

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দলের সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মুরাদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ, উপজেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম নিজাম, আশরাফ আলী চৌধুরী সারু, নাহিদ ফরিদা মুনমুন, মো. মোরশেদ, আবুল কালাম, আবদুর জাহের।  

তাদের মধ্যে আশরাফ আলী সারু একসময় জেলা বিএনপির সদস্য ছিলেন, আর নাহিদ ফরিদা মুনমুনের বাবা একেএম আজাদ উদ্দিন ছিলেন রামগতি উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং তার ভাই শরাফ উদ্দিন আজাদ রামগতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা।  

সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী পদে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও রামগতি পৌরসভার মেয়র এম মেজবাহ উদ্দিন মেজু, চরগাজী ইউপি চেয়ারম্যান তাওহিদুল ইসলাম সুমন, আবদুর জাহের সাজু, আবু নাসের, অ্যাডভোকেট শরীফ, সাহেদ আলী মনু, মাহবুবুর রহমান বাবু সহ অন্তত ১৭ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।  

কাউন্সিলরা বলেন, আমরা চাই, সম্মেলনে যেন কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হয়। তাহলে প্রকৃত আওয়ামী প্রেমী নেতা কমিটিতে আসতে পারবেন।  

তারা জানায়, জনবিচ্ছিন্ন এবং বিএনপি ঘরোনায় বা নব্য আওয়ামী লীগ দাবিদার কেউ কেউ সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছেন। সামনে জাতীয় নির্বাচন, বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন সংগ্রামে তাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ থাকবে।  

সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী চট্টগ্রাম হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ৯০ এর দশকের ছাত্রনেতা মাহবুবুর রহমান বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামে দলের পক্ষে কাজ করেছি। আশা করি, এ সম্মেলনের মাধ্যমে দলের জন্য যারা অতীতে ত্যাগ স্বীকার করেছেন এবং শেখ হাসিনার পরিক্ষিত কর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে। দলকে সুসংগঠিত করে আগামী নির্বাচনে দলকে ক্ষমতায় আনতে সবাই একসঙ্গে কাজ করবো।

সভাপতি প্রার্থী আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী সারু বলেন, দীর্ঘদিন সম্মেলন না হওয়ায় আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। আমি যদি সভাপতি পদে আসতে পারি, তাহলে দলকে সুসংগঠিত করবো।  

বিএনপির রাজনীতি করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি কখনো বিএনপির রাজনীতি করিনি। ২০০১ সালের পর থেকে সবগুলো জাতীয় নির্বাচনে আমি নৌকার পক্ষে কাজ করেছি।  

আরেক সভাপতি প্রার্থী নাহিদ ফরিদা মুনমুন বলেন, আমার পরিবারের সদস্যরা বিএনপি করলেও আমি কখনো বিএনপির রাজনীতি করিনি। আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, ওনার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আছে। আমিও সেই আদর্শ লালন করি। আমি ২০১৭ সাল থেকে রামগতি উপজেলা ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছি। আশা করি, কেন্দ্রীয় নেতারা আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।  

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি প্রার্থী আবদুল ওয়াহেদ বলেন, সম্মেলনের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উপজেলা কমিটির ৬৯ জন কাউন্সিলর, প্রতিটি ইউনিয়নে ৩১ জন, বিশেষ কাউন্সিলর ১৫ জনসহ মোট ৩৬১ জন কাউন্সিলর রয়েছে। তাদের বেশিরভাগই চাচ্ছে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত করার।  

তিনি আরও বলেন, এতো বছর দলকে আগলে রেখেছি। আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে ছিলাম। এবার আমি সভাপতি পদে প্রার্থী হয়েছি। আবার দায়িত্ব পেলে অতীতের ন্যায় দলের জন্য কাজ করে যাবো।  

সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক ও জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক রাসেল মাহমুদ মান্না জানান, সম্মেলন সফল করার জন্য ছয়টি উপ-কমিটি করা হয়েছে। এরই মধ্যে ওইসব কমিটির আলাদা পাঁচটি সভা করে নেতাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। সম্মেলনস্থলে ১০ থেকে ১৫ হাজার নেতাকর্মীর  জমায়েত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।