ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ: পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ প্রার্থীদের

 ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২২
গাইবান্ধা-৫ উপনির্বাচন বন্ধ: পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ প্রার্থীদের

গাইবান্ধা: সিসি ক্যামেরায় গোপন কক্ষে একাধিক ব্যক্তির প্রবেশসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা) আসনের উপনির্বাচন বন্ধ করেছে নির্বাচন কমিশন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।

 

অপর দিকে নির্বাচন বন্ধের জন্য আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের দায়ী করেছেন অপর সব প্রার্থী। তবে প্রতিপক্ষ জাতীয় পার্টি কর্মী-সমর্থকরা পূর্বপরিকল্পিত ভাবে এসব ঘটিয়েছে বলে দাবি নৌকার প্রার্থীর।

বুধবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নির্বাচন ভবনে আসনটির উপ-নির্বাচন বন্ধের ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। এর আগে ৫০টি কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বলে জানান তিনি।

সিইসি বলেন, সকাল ৮টায় ভোট শুরু হয়। নির্বাচন ভবনে সিসি ক্যামেরায় ভোট পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। আমরা বসে ভোট পর্যবেক্ষণ করেছি। আমরা প্রথম থেকেই লক্ষ্য করেছি ভোটগ্রহণে অনিয়ম হচ্ছে এবং অনেকের গোপন কক্ষে অনুপ্রবেশ লক্ষ্য করেছি। অবৈধভাবে প্রবেশ করে ভোটারকে ভোট দিতে সহায়তা বা বাধ্য করছে- এটা সুস্পষ্ট লক্ষ্য করেছি। যেটি নিয়ম নয়। তারপরও আমরা দেখেছি- পোলিং এজেন্ট সম্ভবত তাদের অনেকের গায়ে যে পোশাক, সেখানে প্রতীক ছাপানো ছিল। মেয়েদের একই রকমের শাড়ি, ওড়না ছিল যেটা নির্বাচনী আচরণবিধির পরিপন্থী।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দৃষ্টিতে মনে হয়েছে- একটি পক্ষ বা একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ভোট প্রভাবিত করতে পারছেন। ফলে সুষ্ঠু নির্বাচন গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় অর্ধশত ভোটকেন্দ্র বাতিলের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ায় আইন কানুন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এ ঘোষণার প্রতিবাদ ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

বিকেল ৪টার দিকে মিছিল নিয়ে সাঘাটা উপজেলার সাঘাটা-বোনারপাড়া সড়কের চৌমাথা মোড়ে অবস্থান নেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় তারা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের শাস্তি চেয়ে স্লোগান দিয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে মিছিলটি সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

পরে বিকেল ৫টার দিকে সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন, নৌকার প্রার্থী মাহামুদ হাসান রিপন। তিনি তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ভোট চলাকালীন কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি, কোনো সংঘর্ষ-সংঘাত হয়নি। অথচ বাস্তবসম্মত যৌক্তিক কোনো কারণ ছাড়াই নির্বাচন কমিশন বেশ কিছু কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ স্থগিত করেন। যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তারপরেও আমরা নির্বাচন কমিশনের এক তরফা সিদ্ধান্ত মেনে চলি। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে দুপুরে নির্বাচন কমিশন পুরো নির্বাচন স্থগিত করে, যা সাধারণ জনগণ ও ভোটারদেরকে হতবাক করেছে। আমি নির্বাচন কমিশনের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।  পাশাপাশি যেসব কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে, সেসব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণাসহ বাকি কেন্দ্রে পুনরায় ভোট গ্রহণের দাবি জানান তিনি।

এসময় জাতীয় পার্টির উপর দোষ চাপিয়ে রিপন বলেন, প্রতিপক্ষ একটি পক্ষ পূর্বপরিকল্পিতভাবে কিছু কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। তারা আমার নাম ছবি ব্যবহার করে টিশার্ট বানিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর লোকজন ভোটকেন্দ্রে নৈরাজ্য করেছে। পরিকল্পিতভাবে ভোটকে বাধাগ্রস্ত করতেই তারা এ কাজ করেছে।

এসময় সাঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সামশীল আরেফিন টিটু, সাধারণ সম্পাদক নাছিরুল আলম স্বপনসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, সংবাদ সম্মেলনে নৌকার প্রার্থীর আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে লাঙ্গল মার্কার প্রার্থী গোলাম শহীদ রনজু বলেন, ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা প্রমাণিত। এটা নিজেদের অভিযোগ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। নির্বাচন কমিশনের ভোট বন্ধের সিদ্ধান্তে দারুণ খুশি পধান প্রতিদ্বন্দ্বী এ প্রার্থী।  এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু ভোটে আজ কী হয়েছে সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।  

এর আগে ভোট চলাকালে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) প্রার্থী ছাড়াও বিকল্পধারা বাংলাদেশের জাহাঙ্গীর আলম (কুলা), স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদ (আপেল) ও আরেক নির্দলীয় প্রার্থী সৈয়দ মাহবুবুর রহমান (ট্রাক) ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

বেলা সাড়ে বারোটার দিকে সাঘাটা উপজেলার বগারভিটা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একত্রিত হয়ে ভোট বর্জনের এ ঘোষণা দেন তারা। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী নাহিদুজ্জামান নিশাদের ফেসবুক আইডি ‘নিশাদ ভাইয়ের সমর্থক গোষ্টি’ থেকেও লাইভে বিষয়টি প্রচার করা হয়।

তারা অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগ নিজেরাই তাদের অফিস ভাঙচুর করে আমাদের নামে মামলা দিয়েছেন। আমাদের লোকদের গ্রেফতার করিয়েছেন। ভোট কেন্দ্রে আমাদের এজেন্টদের কক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটারদের ফিঙ্গার নেওয়া হলে তারা তাদের ইচ্ছেমতো নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র দখল করে গোপন কক্ষে গিয়ে তারা ভোট মেরে নেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশন যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। পরবর্তীতে সুষ্ঠু পরিবেশে নতুন করে ভোট আয়োজনের দাবি জানান তারা।

গাইবান্ধা-৫ আসনটি ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে সাঘাটা উপজেলার ১০টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ০৭ টিসহ মোট ১৭টি ইউনিয়নে ভোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭৪৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৮৩ জন এবং নারী ভোটার ১ লাখ ৭০ হাজার ১৬০ জন।

বুধবার উপ-নির্বাচনে সাঘাটা উপজেলায় ৮৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলায় ৫৭টিসহ মোট ১৪৫টি কেন্দ্রে ৯৫২টি বুথে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া টানা ৯ মাস মরণব্যাধি ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই শেষে গত ২২ জুলাই দিনগত রাত ২টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন। এ কারণে ওই আসনে উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছিল।

বাংলাদেশ সময়: ২৩২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২২ 
এসএ


 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।