ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জাপা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: জাপা

ঢাকা: জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনই প্রমাই করে, কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।

সরকার ও সরকারি দলকে খুশী করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করে। গত ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে ব্যাপক জাল-জালিয়াতির জন্য আমরা ইসিকে নির্বাচন বাতিল করতে বলেছিলাম। তারা নির্বাচনটি বন্ধ ঘোষণা করেছে। সেজন্য আমরা তাদের ধন্যবাদ জানিয়েছি। আমরা আবারও দাবি করছি, নতুন তফসিল ঘোঘণার মাধ্যমে পুনরায় নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। কোন জালিয়াতির নির্বাচন আমরা মেনে নেব না।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে উত্তরখান কলেজিয়েট স্কুল মাঠে থানা জাতীয় পার্টির (জাপা) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, শুরু থেকেই আমরা ইভিএমে নির্বাচনের বিরোধিতা করছি। কারণ, ইভিএমে ঘোষিত ফলাফল চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব হয় না। কোনো প্রার্থী সংক্ষুব্ধ হলে, কোনো প্রমাণ নিয়ে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। আবার, যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, সেই মাঠ প্রশাসন সরকারের অনুকূল্য পেতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ইভিএমের দোষ না থাকলেও, যারা যারা এটা পরিচালনা করেন তারা তো নিরপেক্ষ নয়। তাই কর্তৃত্ববাদী কোনো সরকারে অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবার সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার সমর্থকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা সহ্য করতে পারেন না। প্রতিটি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চায় সরকার। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলে হামলা ও হয়রানিমূলক মামলার শিকার হতে হয়।

তিনি বলেন, নেত্রকোনা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাপা নেতা আসমা আশরাফ। তার মনোনয়নপত্র দাখিলে বারবার বাধা দেওয়া হয়েছে। পরে, তার ওপর সন্ত্রাসী হামলা করেছে সরকার সমর্থক সন্ত্রাসী বাহিনী। আসমা আশরাফকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আবার পিরোজপুরের তুষখালী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইউনিয়ন জাপার সাধারণ সম্পাদক সফিকুল ইসলাম অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। দলীয় প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে সহায়তা দিয়েছেন তিনি। তবে, সরকার সমর্থকরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হতে চেয়েছিল। তারা নির্বাচনে জিতে জাপা নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতেছে। এমন একটি মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন সফিকুল ইসলাম। পথিমধ্যে সরকার সমর্থকরা তাকে কুপিয়ে একটি পা বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক)হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। প্রাণে বাঁচলেও আজীবনের জন্য তাকে পঙ্গুত্ব বরণ করতে হবে।

এসময় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে জাপা প্রধান বলেন, ভয়াবহ লোড শেডিংয়ে নাকাল দেশ। ডলারের অভাবে জ্বালানি তেল কিনতে পারে না সরকার। তাই চাহিদা মতো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছে না তারা। কলকারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। হুমকির মুখে পড়েছে রফতানি শিল্প। বৈদেশিক মুদ্রা আয় হুমকির মুখে পড়েছে। কর্মহীন হয়ে বেকারত্বের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। ঘরে ঘরে চাকরি দেওয়ার কথা বলে, সরকার ঘরে ঘরে বেকার সৃষ্টি করেছে। মানুষের আয় বাড়েনি, কিন্তু প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। এতে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। শিশুখাদ্য কিনতে পারছে না বাবা-মায়েরা। এভাবে চলতে থাকলে আগামী প্রজন্ম পুষ্টিহীন জাতিতে পরিণত হবে। মানুষ বাজার করতে পারছে না, বাজারে যেন আগুন লেগেছে। বাজারের আগুনে পুড়ছে কোটি কোটি পরিবার। টাকার অভাবে মানুষ চিকিৎসা করতে পারছে না, ওষুধ কিনতে পারছে না।

তিনি বলেন, যারা সরকারি দল করেন শুধু তারাই যেন বেহেস্তে আছেন। দেশের মানুষ যেন দোজখের আগুনে জ্বলছে। দেশের বেশির ভাগ মানুষ টাকার অভাবে বাজার করতে পারছে না, আর একটি অংশ দেশে টাকা রাখার জায়গা পাচ্ছে না। তারা হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা নেই, মৌলিক অধিকার নেই মানুষের। কিন্তু হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যায়ে উন্নয়নের নামে লুটপাট চলছে।

উত্তরখান থানা জাপার আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান আলালের সভাপতিত্বে সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। বিশেষ অতিথি চিলেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহ্বায়ক শেরিফা কাদের এমপি।
এছাড়া বক্তৃতা করেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহবুবুর রহমান লিপটন,  দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম পাঠান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মঞ্জুর হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম পিন্টু, হাজী নাসির উদ্দিন সরকার,  মো. হেলাল উদ্দিন,  কাজী আবুল খায়ের, এনাম জয়নাল আবেদিন, কেন্দ্রীয় সদস্য এসএম হাসেম, এমএ সাত্তার, শরীফুল ইসলাম,  শাহীন মাহমুদ, আলাল উদ্দিন আলাল, শরিফুল আলম সোহেল, মো আশিকুল আমিন, মোহাম্মদ আলী, আবুল হোসেন, মো. শিশির প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০২২
এসএমএকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।