ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

লক্ষ্মীপুর জেলা আ.লীগের সম্মেলন

বর্তমানরা চান থাকতে, নতুন-পুরোনোরা চান পদে আসতে

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩৫৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
বর্তমানরা চান থাকতে, নতুন-পুরোনোরা চান পদে আসতে

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ডজনখানেক প্রার্থী রয়েছেন। শীর্ষ এই দুই পদে আট জনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

 

এর মধ্যে বর্তমান সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু ও সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন নিজেদের পদ ধরে রাখতে চান। স্ব-স্ব পদে তারা নিজেদের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। অতীতের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডকে আড়ালে রেখে ইতিবাচক কর্মকাণ্ড সামনে এনে প্রচার করছেন তারা। যদিও বর্তমান এ কমিটির বিরুদ্ধে রয়েছে ইউপি নির্বাচনের মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ।  

এই কমিটির সময়কালে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে দীর্ঘ সাত বছরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় স্থাপন না করার ব্যর্থতা রয়েছে তাদের। নিজ নিজ অনুসারীদের ভিত্তিতে দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব থাকলেও তৃণমূল নেতাকর্মীদের সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে সুনাম রয়েছে সাধারণ সম্পাদকের।

সম্মেলন নিয়ে কথা হয় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের সময়ে আওয়ামী লীগ সুসংগঠিত ছিল। রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য আমরা প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের নিয়ে আমরা রাজপথে ছিলাম।  

তিনি আরও বলেন, যতগুলো ইউপি নির্বাচন হয়েছে, এর মধ্যে বেশিরভাগ ইউপিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে নৌকাকে জয়ী করেছি। তবে দু-একটি ইউপিতে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকাতে সেখানে নৌকা জয় পায়নি। জেলার চারটি পৌরসভার মধ্যে দুটিতে অতীতে বিএনপির মেয়র ছিল। কিন্তু আমাদের সময়ে নির্বাচনে আমরা চারটিতেই জয়ী হয়েছি। আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় এমনটি সম্ভব হয়েছে।  

তিনি বলেন, যারা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে বিএনপি-জামায়তের অপরাজনীতি রুখে দিয়েছেন, দল তাদের মূল্যায়ন করবে। আগামীতে আশা করি তারাই দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন। সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী তিন বছরের জন্য ৭৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হবে, যারা আগামী দিনে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলন মোকাবিলা করতে পারবে। আসন্ন সংসদ নির্বাচনেও জেলার চারটি আসনে নৌকাকে জয়ী করতে এই কমিটির অবদান থাকবে।  

এদিকে চতুর্থ ধাপের ইউপি নির্বাচন ঘিরে জেলা সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকুর বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। তার নিজ ইউনিয়ন হাজিরপাড়াতেই তিনি সমালোচিত হন। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আ.লীগের বহিষ্কৃত সভাপতি শামসুল আলম বাবুল দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি পিংকুর বিরুদ্ধে নৌকা প্রতীকের মনোনয়ন বাবদ টাকা দাবির অভিযোগ আনেন।  

তবে তার এ অভিযোগকে ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ বলছেন সভাপতি পিংকু। নির্বাচন ঘিরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে ওই ইউনিয়নসহ একইদিন অনুষ্ঠিত সদর উপজেলার ১৫টি ইউপি নির্বাচনে সাতটি দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও দুটিতে বিএনপির প্রার্থী জয়ী হন। নৌকার এমন ভরাডুবিতে তখন দলের মধ্যেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। মনোনয়ন বাণিজ্যকে দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতাকর্মীরা।

সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু বলেন, অতীতে আমার সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ভালো ছিল। আমার সময়ে লক্ষ্মীপুরে কোনো সন্ত্রাস ছিল না, চাঁদাবাজি ছিল না। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে দল পরিচালিত করেছি। সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে কোনো দূরত্ব ছিল না। সাত বছর সুন্দরভাবে চলছে। আওয়ামী লীগের ভোট বেড়েছে, সমর্থন বেড়েছে। আমাদের প্রতি সাধারণ মানুষ এবং নেতাকর্মীদের আস্থা আছে। দলের ভেতর কোনো গ্রুপিং নেই।  

তিনি বলেন, আমি নেত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি, আমি আমার কথা তাকে বলেছি। তিনি মনোযোগ সহকারে আমার কথা শুনেছেন। আমি আশা রাখি আবারও সভাপতির দায়িত্ব পাব।  

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আলোচনায় রয়েছে বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহিম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের নাম।  

অন্যদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শাহজাহান কামাল, সাবেক সভাপতি এম আলাউদ্দিন এবং এক সময়ের বহুল আলোচিত লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র আবু তাহেরও প্রার্থী হয়েছেন। তবে মাঠ পর্যায়ে তাদের নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। ব্যানার-ফেস্টুনও দেখা যায়নি তাদের।  

সাধারণ সম্পাদক পদে নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়নের পাশাপাশি আলোচনায় রয়েছেন আমরা ক’জন মুজিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট নুরুল হুদা পাটওয়ারী, মোজাম্মেল হক মিলন, জেলা জজ আদালতের পিপি জসিম উদ্দিন, অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান মান্না, বর্তমান পৌর মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট ফিরোজ আলমসহ অন্তত ১০ জন।  

লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আহসানুল কবীর রিপন বলেন, বিগত সময়ে যারা পদ ও মনোনয়ন বাণিজ্য করেছেন, তাদের বাদ দিয়ে পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন করতে হবে।  

বর্তমান কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান মান্না বাংলানিউজকে বলেন, যাদের জন সম্পৃক্ততা এবং কর্মীদের সাথে যাদের সম্পর্ক আছে, যারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরবে তাদের যেন নেতৃত্ব দেওয়া হয়। আমরা সেই প্রত্যাশাই করি।  

বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং সভাপতি প্রার্থী সফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এখন নেতৃত্বের পরিবর্তন চাচ্ছেন। বর্তমান কমিটির কিছু কিছু বিষয়ে তারা অসন্তুষ্ট। আমি সম্মানের সঙ্গে দীর্ঘ সময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছি। দলে আমার ত্যাগ আছে, আশা করি দল আমার বিষয়টি বিবেচনা করবে।

সম্মেলন ঘিরে জেলা শহরের আনাচে-কানাচে পদপ্রত্যাশীদের ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়কের দুই পাশে টানানো হয়েছে হাজারো ফেস্টুন। কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাগত জানিয়ে সড়কে শতাধিক তোরণও দেওয়া হয়েছে।  

সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু নতুন নেতৃত্ব নিয়ে। অনেকেই চাচ্ছেন নেতৃত্বের পরিবর্তন। আসুক নতুন মুখ। আবার কেউ বলছেন- আন্দোলন সংগ্রামে রাজপথে যাদের অবদান রয়েছে তারাই আসুক নেতৃত্বে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) সকাল ১০টায় জেলা স্টেডিয়ামে ত্রি-বার্ষিক এ সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। বিশেষ বক্তা থাকবেন লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য শাহজাহান কামাল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাইদ আল মাহমুদ স্বপন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।  

সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম ফারুক পিংকু, সঞ্চালনায় থাকবেন সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন।  

সম্মেলনের সব প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। সাজানো হয়েছে জেলা স্টেডিয়াম। সম্মেলন সফল করতে নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে আটটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে। সম্মেলনস্থলে প্রায় অর্ধ লাখেরও বেশি লোক জড়ো করা হবে বলে জানিয়েছেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।  

বাংলাদেশ সময়: ২৩৪৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০২২
আরএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।