ঢাকা : এক মাসের ব্যবধানে আবারও বাড়ানো হলো পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের দাম। প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ২৮ পয়সা।
বর্ধিতমূল্য চলতি মার্চ মাস থেকেই কার্যকর হবে। সর্বশেষ এক আদেশে দুই দফায় যথাক্রমে ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।
এতে করে পাইকারি বিদ্যুতের গড় বর্তমান দাম ৩ টাকা ৭৪ পয়সা থেকে ৭.৪৯ ভাগ বাড়িয়ে ৪.০২ পয়সা এবং খুচরা বিদ্যুতের বর্তমান গড় দর ৫.০২ টাকা থেকে শতকরা ৬.২৫ ভাগ বাড়িয়ে ৫.৩২ টাকা করা হলো। বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো চলতি মাসের বিলেই এই হারে বিল আদায় করবে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এই বর্ধিত দাম ঘোষণা করা হয়। তেলের দাম বাড়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন কারণে বিদ্যুতের এ দাম বাড়ানো হলো বলে জানা গেছে।
পাইকারি :
দাম বাড়ানোর ফলে চলতি মাস থেকে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ১৩২ কেভি লাইনের বিদ্যুৎ ৪.২০ টাকার পরিবর্তে ৪.৫৩ টাকা, ৩৩ কেভির ক্ষেত্রে ৪.২৪ টাকার পরিবর্তে ৪.৫৭ টাকা মূল্য পরিশোধ করতে হবে। একই দরে মূল্য পরিশোধ করতে হবে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডকে (ডেসকো)।
এছাড়া বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লি. (ওজোপাডিকো) ১৩২ কেভিতে ৪.২০ এর পরিবর্তে ৪.৫৩ টাকা ও ৩২ কেভির ক্ষেত্রে ৩.৯৮ টাকার পরিবর্তে ৪.২৫ টাকা পরিশোধ করতে হবে। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডর ক্ষেত্রে (আরইবি) যথাক্রমে ৪.২০ টাকা ও থেকে বাড়িয়ে ৪.৫৩ টাকা ও ৩.১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.৪২ টাকা করা হয়েছে।
শুনানিতে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) পাইকারি (বাল্ক) বিদ্যুতের দাম প্রায় ১১ শতাংশ সমান ইউনিট প্রতি ৪১ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়। এ প্রস্তাবের পর পর বিইআরসির মূল্যায়ন কমিটি ২২ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিলো।
পিডিবির প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১১-১২ অর্থবছরে কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রি করায় ৩ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা ঘাটতি হয়েছে।
গ্রাহক/খুচরা
গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আবাসিকের ক্ষেত্রে ইউনিটভেদে চলমান ৫টি ধাপ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে পিক- অফপিক আওয়ারে বিভক্ত থাকা বর্তমান দর থেকে ৬.২৫ ভাগ বাড়ানো হয়েছে।
পিডিবি, ওজোপাডিকো, ডিপিডিসি ও ডেসকোর আবাসিক গ্রাহকদের বর্তমান দর ১০০ ইউনিট পর্যন্ত ২.৮৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩.০৫ টাকা, ১০১ থেকে ৪০০ ইউনিট পর্যন্ত ৪.০৪ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪.২৯ টাকা, ৪০১ ইউনিটের উর্ধ্বে ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে ৭.৪৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.৮৯ টাকা করা হয়েছে।
পিডিবি, ওজোপাডিকো, ডিপিডিসি ও ডেসকোর সেচ গ্রাহকদের জন্য বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে ১৩ পয়সা বাড়িয়ে ২.২৬ টাকা। বাণিজ্যিক ব্যবহারে প্রতি ইউনিটে ৪৬ পয়সা বাড়িয়ে ৭.৭৯ টাকা করা হয়েছে। ক্ষুদ্র শিল্পে প্রতি ইউনিটের দাম ৩৫ পয়সা বাড়িয়ে ৬ .০২ পয়সা করা হয়েছে।
অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে সেচ গ্রাহকদের সর্বনিম্ন ২.৮৭ সর্বোচ্চ ৩.৩৬ থেকে যথাক্রমে ১৮ ও ২১ হারে বাড়িয়ে ৩.০৫ ও ৩.৫৭ টাকা করা হয়েছে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডর আবাসিক গ্রাহক
আরইবির ১০০ ইউনিট পর্যন্ত আবাসিক গ্রাহকদের ২.৯০ সর্বোচ্চ ৩.৩৪ থেকে বাড়িয়ে ৩.০৮ সর্বোচ্চ ৩.৫৫ টাকা, ১০১ থেকে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত ৩.৪৫ সর্বোচ্চ ৩.৯৫ টাকা থেকে যথাক্রমে ২২ ও ২৫ পয়সা বাড়িয়ে ৩.৬৭ সর্বোচ্চ ৪.২০ টাকা, ৩০১ থেকে ৫০০ ইউনিট পর্যন্ত ৫.৬৩ সর্বোচ্চ ৫.৯৮ থেকে বাড়িয়ে ৫.৯৮ সর্বোচ্চ ৬.৩৫ টাকা ও ৫০০ ইউনিটের উর্ধ্বে ইউনিট প্রতি ৭.৪২ সর্বোচ্চ ৮.৮৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.৮৮ সর্বোচ্চ ৯.৩৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অনেকে অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেন। এ কারণে অনেক সময়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। আমরা মনে করব বিষয়টি সকলে ভালোভাবেই নেবে।
বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সমাধান নয় উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিদ্যুতের দাম নিয়ন্ত্রনে কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রধান উপায় হতে পারত। কিন্তু আমরা সেখান থেকে পিছিয়ে আছি।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন বিইআরসি সমস্য ড. সেলিম মাহমুদ ও প্রকৌশলী ইমদাদুল হক।
উল্লেখ্য গত বছরের ২২ ডিসেম্বর দুদফায় গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম যথাক্রমে ১৩ দশমিক ২৪ ও ৭ দশমিক ০৯ শতাংশ বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে পাইকারি বিদ্যুতের দামও বাড়ায় বিইআরসি। যা যথাক্রমে ডিসেম্বর ও ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যকর করা হয়।
এর আগে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে পাইকারি দাম বাড়ানোর সময়ে অন্তবর্তীকালীন গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বাড়িয়েছিলো বিইআরসি।
বাংলাদেশ সময় : ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১২
ইএস
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর