ঢাকা : বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কপোরেশনের (বিপিসি) মজুদাগারের ধারণক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব ঝুলে রয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। বর্তমানে দেশে সাড়ে আট লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি মজুদ করার ক্ষমতা রয়েছে।
জ্বালানি তেলের ব্যবহার যে হারে বেড়েছে তাতে নিরাপত্তার জন্য মজুদাগার বাড়ানো খুবই জরুরি বলে দাবি করেছে বিপিসির অপারেশন ও পরিকল্পনা বিভাগ।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, তেলের আন্তর্জাতিক বাজার সব সময়েই অস্থিতিশীল রয়েছে। দেশের সার্বিক জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য মজুদাগার বাড়ানো জরুরি।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা ছিলে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৬৬৫ মে. টন। যা গত অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৮ লাখ ৬৮ হাজার ২৪ মে. টনে। চলতি বছরে চাহিদা ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার মে. টন ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে বিপিসি। এর মধ্যে ডিজেল ৪০ লাখ মে. টন, ফার্নেস অয়েল ১৫ লাখ মে. টন অবশিষ্ট অন্যান্য।
এই যখন দেশের চাহিদার অবস্থা ঠিক সেই সময়ে দেশের জ্বালানি তেলে মজুদক্ষমতা রয়েছে মাত্র সাড়ে আট লাখ টন। চলতি বছরের মধ্যেই মজুদাগার বাড়িয়ে ১১ লাখ মে. টনে উন্নীত করতে চায় সরকার।
এ জন্য ছোট কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও ঝুলে রয়েছে বৃহৎ চারটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম ইস্টার্ন রিফাইনারিতে ৩৯ হাজার মে. টন ধারণক্ষমতা তিনটি ট্যাংক নির্মাণ। এই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি এক লাখ টাকা। যা ২৯ ডিসেম্বর থেকে পড়ে আছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে।
একই তারিখ থেকে পড়ে রয়েছে গোদনাইল ডিপোতে দুটি ৭ হাজার মে. টন ধারণক্ষমতার ডিজেল ও একটি আট হাজার মে. টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন জেট ফুয়েল ট্যাংক নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পটিতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বিপিসির প্রধান স্থাপনা চট্টগ্রামে প্রতি ১০ হাজার মে. টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ট্যাংক নির্মাণ প্রকল্প ২২ ডিসেম্বর থেকে ঝুলে রয়েছে। এই প্রকল্পটির প্রাক্কলিত বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।
এর একদিন আগে অর্থাৎ ২১ ডিসেম্বর থেকে ঝুলে রয়েছে বাঘাবাড়িতে ১০ হাজার মে. টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন তিনটি ডিজেল ট্যাংক নির্মাণ প্রকল্প। এই প্রকল্পে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ কোটি ২০ লাখ টাকা।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেন দাবি করেছেন, জ্যামিতিক হারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যাপক হারে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা। বিপিসির তথ্য বিবরণীতেও জ্বালানি বিশেষজ্ঞের কথার প্রমাণ পাওয়া যায়।
বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি তেলের ব্যবহার ছিল দুই লাখ ৫৪ হাজার ৯৫০ মে. টন যা ২০১০-১১ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৮৭৭ মে. টনে। বাড়ন্ত এই চাহিদা ২০১১-১২ অর্থবছরে ২০ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৩ মে. টন ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে ডিজেলের চাহিদা ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৬৫ হাজার ১৪১ মে. টন ও ফার্নেস অয়েল ১৪ লাখ ১৫ হাজার ৭২২ মে. টন।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে জ্বালানি বিভাগের সচিব মন্তব্য করেন, দেশে বর্তমানে দেড় মাসের জ্বালানি মজুদ করার ক্ষমতা রয়েছে। দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে সরকার একে তিন মাসে উন্নীত করতে চায়।
বিপিসির চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক প্রকল্পগুলো পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আশা করছি খুব শিগগিরই এসব প্রকল্প অনুমোদন হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৭, ২০১২
ইএস/
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর