ঢাকা : ঢাকাসহ সারাদেশে বিদ্যুতের দুর্বিষহ লোডশেডিং চলছে। সকাল দুপুর কিংবা রাত কিছুই মানছেনা লোডশেডিং।
এমনকি টানা তিনদিন ধরে চলমান হরতালে যৌক্তিক কারণেই বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকলেও লোডশেডিং থামছে না। পিডিবি বরাবরের মতোই সোমবার রাত ৮ টায় ৫ হাজার ২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে। আর সে সময়ে চাহিদা ৫ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট ছিলো বলে দাবি করেছে পিডিবি কন্ট্রোল রুম।
পিডিবির চাহিদার হিসেবের সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল কখনও ছিল না। সোমবারের তথ্যেও ঠিক তেমনি মিল পাওয়া যায়নি।
রোববার দেশের অনেক স্থানে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। ঠিক ওইদিনে দেশের প্রায় অর্ধেকের মতো বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয় জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য।
খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা জাইদুল ইসলাম ও বাড্ডা এলাকার বশির হোসেন খান বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে গত রোববার। এদিন দিনে-রাতে কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ বার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করেছে। প্রতিবারেই ১ ঘণ্টার আগে বিদ্যুতের দেখা মেলেনি।
রোববার দেশের ৭৯ টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ছিলো ৭ হাজার ৫৫১ মেগাওয়াট (সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ ও বিকল বাদে)। সেখানে দিনের বেলা প্রায় অর্ধেক পরিমাণ মাত্র ৪ হাজার ৯৯ মেগাওয়াট এবং সন্ধ্যায় মাত্র ৫ হাজার ১২৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
এদিন ঘোড়াশাল ৭৮ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জ ১৫০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা ৫৩ মেগাওয়াটসহ ৬টি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ ইউনিটে ও মেঘনাঘাট ১০০ মেগাওয়াট, মদনগঞ্জ ১০২ মেগাওয়াট, হরিপুর ৮৫ মেগাওয়াটসহ তেলভিত্তিক ১৭ টি ইউনিট বন্ধ রাখা হয়।
অসহনীয় লোডশেডিং চলার পরও কেন এই বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে তার সদুত্তর দিতে চাননি কেউই। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই বলেছেন, অর্থ সংকটের কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন কম করা হচ্ছে।
তবে রংপুর তেলভিত্তিক ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক রোববার বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রাখার সত্যতা স্বীকার করে শুধু বলেন, ‘প্রয়োজন ছিল না। এ কারণে চালানো হয়নি। ’
অথচ খোদ রংপুরেই রোববার অনেক স্থানে দুর্বিষহ লোডশেডিং চলেছে। বেশিরভাগ এলাকায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে।
রংপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর মহাব্যবস্থাপক কাজী মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে জানান, রোববার দিনে তাদের চাহিদা ছিলো ২৮ মেগাওয়াট। সে সময়ে সরবরাহ পেয়েছেন ১৬ আর রাতে ৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ পেয়েছে ২০ মেগাওয়াট।
রংপুরে লোডসেডিংয়ের পেছেনের আসল কারণ জানতে চাইলে রংপুর তেলভিত্তিক ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক আব্দুল মালেক প্রথমে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
‘‘সরকার চেয়েছে। এ জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়নি। সরকার চাইলে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে’’ বলে জানান তিনি।
এদিকে, শিকলবাহা গ্যাসভিত্তিক ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রোববার গ্যাস সংকটের কারণে বন্ধ থাকার কথা স্বীকার করেন কেন্দ্র ব্যবস্থাপক ভূবন বিজয় দত্ত। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘‘আমাদের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র সম্পুর্ণ প্রস্তুত রয়েছে। গ্যাস পেলেই চালানো সম্ভব। ’’
গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চলতি মাসে মাত্র কয়েকদিন চালানো হয়েছে বলেও জানান ভুবন বিজয়।
পিডিবির একটি সুত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছে, সরকার সাশ্রয় করার নির্দেশ দিয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ মূল্যে ঘাটতি থাকায় দিনে দিনে দেনা বাড়ছে পিডিবির।
তবে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) পিডিবিকে ১৫,০০০ মিলিয়ন টাকা ভর্তুকি দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সরকার ৬ হাজার মিলিয়ন টাকা দিয়েছে ঋণ হিসেবে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকেও নানা শর্ত আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে সারাদেশে যখন বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং চলছে ঠিক সে সময়ে আমেরিকায় লম্বা সফরে গেছেন পিডিবির চেয়ারম্যান এএসএম আলমগীর কবির।
এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পিডিবির এক কর্মকর্তা মন্তব্য করলেন, এ যেন সেই রোমের রাজার মতো। রোম যখন পুড়ছিলো, তিনি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। দেশের যাই হোক তাতে কি আসে যায়! সফর মিস করলে তো আর পাওয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, পিডিবির চেয়ারম্যান গত ১৩ এপ্রিল ৫ জনের বহর নিয়ে ১৫ দিনের সফরে আমেরিকা গেছেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিদর্শন করবেন বলে পিডিবি সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০১২
ইএস/
সম্পাদনা : আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর;
জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।