ঢাকা: তীব্র তাপপ্রবাহে গায়ে ঘাম নিয়ে যানজট ঠেলে ‘মহাযুদ্ধের ময়দান’ পেরিয়ে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে দেখি বিদ্যুৎ নেই। চড়া মেজাজ আরও বিগড়ে গেল।
সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পর বিদ্যুৎ না থাকায় কল্যাণপুরের বাসিন্দা মাহবুব সাহেব তার অভিজ্ঞতার কথা এভাবেই জানান বাংলানিউজকে। তার প্রতি সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা একই রকম।
অন্ধকারকে দূরে রাখতে বাসায় মোমবাতি জ্বালায়। আট বছরের মেয়েটির কপাল বেয়ে ঘাম। বাধ্য হয়ে কাপড় ছাড়িয়েই হাত পাখা নিয়ে মেয়েক বাতাস করার কর্মে নেমেড় তিনি মাহবুব।
সোমবারের অভিজ্ঞতা: রাত পৌনে আটটায় আসে বিদ্যুৎ। কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস নেওয়া শুরু হলে সাড়ে আটটায় আবার বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে সাড়ে নয়টায়। এ দফায় বিদ্যুৎ থাকে মাত্র পাওয়া যায় ৪০ মিনিট। এবার বিদ্যুতের দেখা পাওয়া যায় রাত সাড়ে ১১টায়।
‘আজ মনে হয় রাতে আর বিদ্যুৎ যাবে না। বাকি রাতটা শান্তিতে কাটাতে পারব। কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। বিছানায় যাবার পর ঘুম ধরতেই রাত সোয়া একটায় বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে রাত দুইটায়। ’ এভাবে গরমে অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটান মাহবুব সাহেবের।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় যখন বাসা থেকে বের হন তখনও তিনি বিদ্যুৎহীন অবস্থায় ভ্যাপসা গরমের মধ্যে মেয়েকে রেখে এসেছেন। কাজে মনযোগ দিতে পারছেন না।
রাতে সব সময় মনে হয়েছে এবার রাস্তায় নেমে পড়ার পালা। ‘এখন ভাঙচুরের সময়’। সরকারকে দাবি জানায়, ‘আমরা ফাঁকা বুলি শুনতে চাই না। নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ চাই। ’
মধ্য বাড্ডার বাসিন্দা বশির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফুঁসছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় অঘটন ঘটতে পারে।
শাজাহানপুর এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘অন্য যে কোনো এলাকার চেয়ে আমাদের এলাকার অবস্থা খারাপ। লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে গরমে টেকা যাচ্ছে না। একই সঙ্গে ট্যাংকে পানি তুলতে না পারায় চরম পানি সংকট দেখা দিয়েছে। ’
রাজধানীর লাখ লাখ পেশাজীবী, শিক্ষার্থী, গৃহিণী রাতদিন একই ধরনের অভিজ্ঞতায় দিন পার করছেন। বাইরে তাপপ্রবাহের মধ্যেও মানুষ বাইরে বের হয়। এরপর বাসায় গিয়ে দেখে বিদ্যুৎ নেই।
এদিকে, রাজধানীর বাইরের অবস্থা আরও চরম। অনেক এলাকায় একবার বিদ্যুৎ গেলে দুই ঘণ্টার আগে আর দেখা মিলছে না। অনেক এলাকায় দিনে রাতে ১০ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং দেওয়ার কথা খোদ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারাই স্বীকার করেছেন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) হিসেবে সোমবার বিকেল চারটায় তিন হাজার ৯৯৩ মেগাওয়াট আর রাত নয়টায় পাঁচ হাজার ১৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়েছে। এ সময়ে লোডশেডিং ছিল এক হাজার ১৩৭ মেগাওয়াট। আর এদিন বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল সাত হাজার ৫৫১ মেগাওয়াট।
পিডিবি তথ্যে দেখা গেছে, সোমবার ঢাকা এলাকায় দুই হাজার ১৬০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে লোডশেডিং ২১৯ মেগাওয়াট, চট্টগ্রামে ৬১০-এর বিপরীতে লোডশেডিং ১২৭ মেগাওয়াট, খুলনায় ৬১৪-এর বিপরীতে ১০৮, রাজশাহীতে ৬২৫-এর বিপরীতে ১১৫, কুমিল্লায় ৪১০-এর বিপরীতে ৮৫, ময়মনসিংহে ৩৬৫-এর বিপরীতে ৫৫, সিলেটে ৩০০-এর বিপরীতে ৫৫, বরিশালে ১২৫-এর বিপরীতে ১৭ এবং রংপুরে ২৫৫-এর বিপরীতে ৫৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং দেওয়া হয়।
গ্যাস এবং তেল ঘাটতির কারণে বিদ্যুৎ কম উৎপাদন করা হয় বলে পিডিবি দাবি করেছে। তবে পিডিবির দেওয়া লোডশেডিং তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার মিল পাওয়া যায়নি।
এদিকে, লোডশেডিংয়ে কারণ হিসেবে বোরো সেচ সামনে আনা হলেও ৯৫ শতাংশ সেচ কমে গেছে বলে পিডিবির একটি সূত্র দাবি করেছে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সেচ মৌসুম শেষ হলেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, মে ১৫, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর