ঢাকা: আবারও যে কোনো মুহূর্তে বাড়তে পারে জ্বালানি তেলের দাম। ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন, ফার্নেস অয়েল লিটার প্রতি ২ থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বাড়ানোর একটি প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর বিবেচনার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
মার্চের শেষ সপ্তাহে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র দাবি করেছে।
সূত্রটি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছে, ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এবং ভর্তুকি কমাতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে চলছে এই কার্যক্রম। তবে সরকার সেচ মৌসুমে জ্বালানি তেলের দাম না বাড়ানোর পক্ষে অবস্থান নেয়।
বর্তমান সরকার যে কয় দফায় জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে, প্রতি বারেই রাত ১১টায় ঘোষণা দিয়ে ১২টা থেকে কার্যকর করেছে।
তবে জ্বালানি বিভাগের সচিব মেজবাহ উদ্দিন অতীতের মতোই এবারও বলেছেন, ‘আপনারা সাংবাদিকরা এসব খবর কোথায় পান। ’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) পরিচালক (প্লানিং, অপরেশন) এসএম রেজওয়ান হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘এ ধরণের কোনো বিষয় আমার জানা নেই। ’
পেট্রোল পাম্প মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমি যতটুকু জানি, তাতে সব প্রস্তুত রয়েছে। শুধু ঘোষণা বাকি। যে কোনো সময়ে ঘোষণা আসতে পারে।
নাজমুল হক বলেন, ‘গত মার্চ মাসে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে শুনেছি। তবে সেচ মৌসুমের কারণে এই প্রস্তাব কার্যকর করা হয়নি। ’
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমতির দিকে এই অবস্থায় তেলের দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা আছে কি না এমন প্রশ্নে বলেন, ‘এখন যে তেল বিক্রি হচ্ছে এগুলোতো আর এখন আনা নয়। তবে সরকার যেভাবে লোকসান দাবি করে, তার সঙ্গে আমি একমত নই। ’
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) মনে করে, দাম না বাড়িয়ে সরকারের শেষ রক্ষা হবে না। তারা মনে করেন, সবার আগে প্রয়োজন টাকার দরপতন ঠেকানো। এছাড়া ভর্তুকি তুলে নিতে না পারলে বিপিসির লোকসান ঠেকানো সম্ভব নয়।
বিপিসি চায় আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়। তাদের প্রস্তাব রয়েছে এমন পদ্ধতি করা হোক যাতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে দেশের বাজারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে দাম বেড়ে যাবে। আর কমলে কমে যাবে।
বিপিসি জানিয়েছে, বর্তমানে পরিশোধিত প্রতি ব্যারেল ডিজেল (১৫৯ লিটার) ১২২ থেকে ১২৬ ইউএস ডলারে কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ক্রড অয়েলের বর্তমান বাজার দর ১১০ থেকে ১১২ ইউএস ডলারে ওঠানামা করছে।
প্রতি ব্যারেল ডিজেল যদি ১২৫ ইউএস ডলার হয়, তাহলে প্রতি লিটার ডিজেলের দাম দাঁড়ায় ৬২ টাকা (পরিবহন খরচ ও ট্যাক্স বাদে)।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর কোনোই যুক্তি দেখছি না। সরকার ট্যাক্স ভ্যাট কমিয়ে দিলেই তো এত ভর্তুকি লাগার কথা নয়। ’
তেলের দাম বাড়ালে অর্থনীতি বিরুপ প্রভাব পড়বে উল্লেখ করে বলেন, ‘জিনিসপত্রের যে দাম তাতে নতুন করে তেলের দাম বাড়ালে সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। ’
সরকারকে তেলের দাম বাড়ানোর পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, সরকার সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায়। বর্তমানে ডিজেল ও কেরোসিন লিটার প্রতি ৬১ টাকা, অকটেন ৯৪ টাকা, পেট্রোল ৯১ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে ১০ নভেম্বর, ১৮ সেপ্টেম্বর ও ৫ মে তারিখে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় সরকার।
সর্বশেষ ২৯ ডিসেম্বর দাম বাড়ানোর সময় সরকার তথ্য বিবরণীতে বলেছিলো, বিগত এক বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। পাশাপাশি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য চলতি অর্থবছরে অতিরিক্ত প্রায় ২০ লাখ টন জ্বালানি তেল আমদানি করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে।
এ কারণে জ্বালানি তেল কিনতে সরকারের লোকসান অনেক বাড়ছে। তাই এই খাতে সরকারকে অনেক ভর্তুকি দিতে হবে, যা সরকারের বর্তমান আয় থেকে সংকুলান করা কষ্টসাধ্য।
সরকারের দেওয়া তথ্য বিবরণীতে দাবি করা হয়, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের মূল্য ছিল ব্যারেল প্রতি (এক ব্যারেল=১৫৯ লিটার) ৫১ দশমিক ৫২ ডলার। যা ২০১০ সালের ডিসেম্বরে মূল্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৩ দশমিক ২১ ডলারে। আর গত ২৮ ডিসেম্বর হয়েছে ১২০ দশমিক ২৪ ডলার।
সরকার আরও বলেছে, দেশে বর্তমানে সংগ্রহ ও বিক্রয়মূল্যের মধ্যে ব্যবধানের কারণে ডিজেল, কেরোসিন ও ফার্নেস অয়েল বিক্রিতে সরকারকে লিটার প্রতি যথাক্রমে ২১ দশমিক ৩৪ টাকা, ১৯ দশমিক ৮৪ টাকা ও ৯ দশমিক ৯৫ টাকা ভর্তুকি দিতে হচ্ছে।
গত ২০১০-১১ অর্থবছরে জ্বালানি তেল আমদানিতে বিপিসির লোকসান হয়েছে আট হাজার ১৯৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১২
ইএস/এআর/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর