গাইবান্ধা: শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার জেগে থাকা বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলে বিপুল পরিমাণ মূল্যবান খনিজ সম্পদের সন্ধান মিলেছে।
নদীর এ অংশে বালুর ১০ মিটার গভীরতায় প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মিলবে ৩ হাজার ৬৩০ কোটি টাকার খনিজ সম্পদ।
দীর্ঘ গবেষণার পর এমনটাই জানিয়েছে খনিজ সম্পদের গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারোলজি অ্যান্ড মেটালার্জি’র গবেষকরা।
যেসব মূল্যবান খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে সেগুলো হলো- ইলমিনাইট, রুটাইল, জিরকন, ম্যাগনেটাইট, গারনেট ও কোয়ার্টজ।
এর মধ্যে রং, প্লাস্টিক, ওয়েলডিং রড, কালি, খাবার, কসমেটিকস ও ওষুধ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয় রুটাইল। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইতালি, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র মূল্যবান এই খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে।
জিরকন ব্যবহৃত হয় সিরামিক, টাইলস, রিফ্যাক্টরিজ ও মোল্ডিং সেন্ডসে (ছাঁচ নির্মাণে ব্যবহৃত বালু)। বর্তমানে সারা বিশ্বে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারত, চীন, ব্রাজিল, সিয়েরা লিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র এ খনিজ উপাদানটি রপ্তানি করে থাকে।
ম্যাগনেটাইট চুম্বক ও ইস্পাত উৎপাদন, খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা পরিষ্কার করা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গভীর কূপ খননে ব্যবহার হয়ে থাকে। বিশ্বের মাত্র দুটি দেশ মূল্যবান এ খনিজটি সারা বিশ্বে রপ্তানি করে থাকে। দেশ দুটি হলো দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া।
গারনেট হলো ভারী ও মূল্যবান খনিজ। এটি ব্যবহার করা হয় সিরিশ কাগজ উৎপাদন, লোহাজাতীয় পাইপ পরিষ্কার ও বালুতে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য। বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত সারা বিশ্বে খনিজটি রপ্তানি করে থাকে।
খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান জয়পুরহাটের ইনস্টিটিউট অব মাইনিং, মিনারেলজি অ্যান্ড মেটালার্জির পরিচালক ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান বলেন, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার নদ-নদী অববাহিকায় যেসব চর রয়েছে সেগুলো নিয়ে আমরা জিওফিজিক্যাল সার্ভে করি। কোন জায়গায় কোন ধরনের মিনারেলস আছে, এটার প্রাথমিক স্টাডি ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত সম্পন্ন করা হয়। এটি কার্যকরী হওয়ায় ২০১৭ সালে একটি এটিপি প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই প্রকল্প অনুযায়ী ২০২০ সালে জয়পুরহাটে একটি খনিজ গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়। এখানে গবেষণা করে ব্রহ্মপুত্র নদে মূল্যবান খনিজগুলোর সন্ধান মেলে।
তিনি জানান, কয়েক বছর আগে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন বালুচর থেকে দেড় হাজার টন বালু সংগ্রহ করা হয়। খনিজ প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে প্রতি টন বালু থেকে দুই কেজি ইলমিনাইট, ২০০ গ্রাম রুটাইল, ৪০০ গ্রাম জিরকন, ৩.৮ কেজি ম্যাগনেটাইট, ১২ কেজি গারনেট ও ৫০ কেজি কোয়ার্টজ মিনারেল পাওয়া যায়।
ড. মোহাম্মদ নাজিম জামান আরও বলেন, ১০ মিটার গভীরতায় প্রতি এক বর্গকিলোমিটার এলাকা থেকে উত্তোলনের পর নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত বালুর বাজারমূল্য যেখানে ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা। সেখানে সমপরিমাণ এলাকা থেকে প্রাপ্ত খনিজের বাজার মূল্য তিন হাজার ৬৩০ কোটি টাকা। কীভাবে কোন প্রক্রিয়া কোন প্রতিষ্ঠান এসব খনিজ আহরণ করবে, তা গবেষণার মাধ্যমে নির্ধারণ করবে সরকারের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ডিসি) কাজী নাহিদ রসুল বলেন, যেকোনো জেলা তথা দেশের উন্নয়ন- অগ্রগতিতে খনিজ সম্পদ বিশেষ ভূমিকা রাখে। যেমন তেলের কারণে সৌদির অর্থনীতি বদলে গেছে। আমাদের গবেষণা লব্ধ ফলাফল তেমনই বার্তা দিচ্ছে। যা গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম জেলার জন্য টার্নিং পয়েন্ট হবে।
এক্ষেত্রে প্রাপ্ত নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৪
আরএ