ঢাকা: বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যুৎ এ বছর শেষের মধ্যেই চলে আসবে। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সচিবালয়ে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো সরকার বন্ধ রেখেছে। সরকার তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাইছে। ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ কিনতে যেসব চুক্তি হচ্ছে, সেগুলো ক্যাপাসিটি চার্জ বাদ দিয়ে। নো ইলেকট্রিসিটি নো পেমেন্ট- এটিই আমরা হাতে রাখছি।
নসরুল হামিদ বলেন ৭০০ থেকে ৮০০ মেগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ এবং সোলার থেকে অন্তত ৬ হাজার মেগাওয়াট আগামী ২৫ সালের মধ্যে আনা যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে।
এক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক ঝড়ের কারণে আমাদের একটি এফএসআরইউ (ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক মাস ধরে এর কাজ চলছে। আগামী ১৪-১৫ তারিখের দিকে এটি আসবে। ঝড়ের (ঘূর্ণিঝড়) কারণে বিদ্যুতের ৩০ হাজার পোল নষ্ট হয়েছে। অনেক টাকা সরকার থেকে খরচ যায়।
বন্যার কারণে সিলেট অঞ্চলে অনেক বিদ্যুতের সাব স্টেশন পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে যদি বড় বন্যা হয়, তাহলে আমাদের কী ধরনের প্রস্তুতি রাখা দরকার, তা বিবেচনায় রাখাতে হবে।
সরকার আইএমএফকে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কথা বলেছে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি আমরা চলমান রেখেছি। সময় অনুযায়ী আমরা মূল্য সমন্বয় করেছি। এ পর্যন্ত দুবার করেছি। বাকি সমন্বয় যেটি হবে, সময়মতো হবে যখন সরকার আমাদের বলবে, তখন হবে।
তিনি বলেন, তেলের ক্ষেত্রে আমরা প্রতি মাসেই চেষ্টা করছি ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। আমরা চাই যত কমে অ্যাডজাস্ট করা যায়। এটি সরাসরি সবকিছুর সঙ্গে জড়িত। বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই। বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে গ্যাসটা নেয়, একটা আলোচনা চলছে, আমরা দাম বাড়াব। খুচরা পর্যায়ে প্রভাব পড়বে না।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আরও দুটি এফএসআরইউ করব। একটি প্রকল্প নিয়েছি, আগামী ২০২৭ সাল থেকে যাতে আর কোনো ধরনের গ্যাসের সমস্যা না হয়। আমাদের ৪৬টি গ্যাস ফিল্ডে আরও ১০০টি কূপ খনন করা হবে। ১৪৬টি কূপ খননের কাজ চলমান।
গ্যাস অনুসন্ধানে খননের যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তাতে আড়াই থেকে তিন বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, গ্যাস পেলে দেখা যাবে ২০ গুণ টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। আমরা এখানে সরকারের কাছে কিছু টাকা বিনিয়োগ করার জন্য আবেদন করেছি। সরকার চিন্তা-ভাবনা করছে।
তিনি বলেন, আমরা এখন গভীরে খনন করছি। চার হাজার মিটার নিচে চলে যাচ্ছি। মাটির চার-পাঁচ কিলোমিটার নিচে চলে যাব। সেখানে গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাজেট নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এবার আমাদের জ্বালানি খাতে বরাদ্দ এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা। জ্বালানি বিভাগ সাধারণত তাদের নিজস্ব অর্থ ব্যয় করে। গ্যাস কেনার ব্যাপারে তেল কেনার ব্যাপারে আমরা আমাদের নিজেদের অর্থ ব্যবহার করি। উন্নয়ন কাজে আমাদের কিছু সহযোগিতা লাগে, যা আমরা সরকারের কাছ থেকে নিয়ে থাকি। আবার সময়মতো ফেরত দেওয়া হয়। সেটার পরিমাণ এ বছর এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা, খুব বেশি নয়।
এবার বিদ্যুৎ জ্বালানি মিলে মোট বাজেট ৩৮ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা জানিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, 'এবারের বাজেটে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান ফোকাস হলো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। আমরা এ নিয়ে কাজ করছি। আগেও বলেছি, আমাদের পারপাস হল জ্বালানি সাশ্রয় এবং নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ কিভাবে দিতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৪, ২০২৪
এমআইএইচ/আরএইচ