ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে সোনাগাজীর সৌরবিদ্যুৎ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে সোনাগাজীর সৌরবিদ্যুৎ

ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর বিস্তীর্ণ চরের উৎপাদিত সৌরবিদ্যুৎ গড়ে দৈনিক ৭৫ মেগাওয়াট জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে। ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী কিছু দিনের মধ্যে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এখানে আরও ১শ মেগাওয়াট করে তিনটি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে।  এর অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর ও জাপান। যা বাস্তবায়ন হলে এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হাব।  

একসময়ের বিরাণ চরে এখন লাখো নীল ছাতা (সোলার প্যানেল) । সূর্যের আলো পড়ে সেই ছাতায় উৎপন্ন হচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ, যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। পাখির চোখে দেখা এই ছবি একটি বিরাণ চরের বদলে যাওয়ার দৃশ্যপট।  

সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের উপকূলীয় অঞ্চলে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য পূর্ব বড়ধলী মৌজায় এক হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০২১ সালে জুনে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণের কাজ শুরু করে সরকারের মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ২৮৫ একর জমিতে এক লাখ ৭৮ হাজার সোলার প্যানেলে স্থাপন করে। এখানের উৎপাদিত বিদ্যুৎ ১২টি আইটিসির মাধ্যমে এসি বিদ্যুতে রুপান্তরিত হয়ে ৩৩ কেভি ভোল্টেজে উন্নীত করা হচ্ছে। মীরসরাই বেজা গ্রিড সাব স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।

প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৫৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৮৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ থেকে ৬২১ কোটি টাকা ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৮ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় করা হয়।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টিনা সোলার ও এইচওয়াইডিসি জয়েন্ট ভেঞ্চারে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করে। গেল বছরের ৩০ জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প বুঝে নেওয়ার পর ৩১ মার্চ পর্যন্ত পরীক্ষামূলক বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্যিকভাবে এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে মীরসরাই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজার গ্রিডে সাব স্টেশনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ।  

ইজিসিবির উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইব্রাহীম আহমেদ খান বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

৭৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পটি উদ্বোধনের পর আরও ১শ মেগাওয়াট করে তিনটি প্রকল্পের পরিকল্পনা রয়েছে ইজিসিবির। এর অর্থায়ন করবে সিঙ্গাপুর ও জাপান। এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি সৌরবিদ্যুৎকেন্দ্র ইজিসিবি ও জাপানের মারুবেনি করপোরেশন যৌথভাবে নির্মাণ করার চুক্তি সম্পন্ন করে।  

চুক্তি অনুসারে, দুই কোম্পানির অংশীদারত্বে গঠিত হবে ফেনী সোলার পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড। যেখানে সমানভাবে বিনিয়োগ করবেন তারা। অপর দুটি প্রকল্পও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর অর্থায়ন করার কথা রয়েছে সিঙ্গাপুর ও জাপান।

সমুদ্র উপকূলের জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের গতিবেগের ১শ বছরের সমীক্ষা বিবেচনায় গোটা প্রকল্প এলাকায় লবণাক্ত পানি রোধে পাঁচ মিটার উচ্চতার আট কিলোমিটার বাঁধ দেওয়া হয়েছে। কর্মকর্তাদের অফিস ও আবাসিক ভবনের নির্মাণ কাজও শেষ হয়েছে। চারপাশে তারকাটা দিয়ে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। কিছু দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন বলে আশা প্রকল্প কর্মকর্তাদের।  

ইজিসিবির উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুবেল চন্দ্র দাস এ তথ্য নিশ্চিত করেন।  

স্থানীয়রা বলছেন, তাদের জমিতে, আলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও তারা তা পাচ্ছেন না। চলে যাচ্ছে অন্য কোথায়। এ প্রকল্পের বিদ্যুৎ যেন স্থানীয়ভাবে দেওয়া হয় সে দাবি তাদের।  

স্থানীয় চরচান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিলন বলেন, সোনাগাজীর মানুষ জমি দিয়েছে, তাদের জমির ওপর প্রকল্প হচ্ছে এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পাবে এটা ন্যায্যতা। আমরা করছি, সরকার বিষয়টি দেখবে।  

সরকারিভাবে চট্টগ্রামের কাপ্তাই ও সরিষাবাড়ির পর ফেনীর সোনাগাজীর সমুদ্র উপকূলে গড়ে উঠা দেশের বৃহত্তম এই প্রকল্পটিতে প্রথম ধাপে অর্থায়ন করে বিশ্বব্যাংক। সোনাগাজীর পূর্বধলীর ওই চরাঞ্চল হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ হাব। এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৯ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২৪
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।