ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিষয়টি ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ নয়!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৪৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২
বিষয়টি ‘প্রিন্টিং মিসটেক’ নয়!

ঢাকা: বিদ্যুতের দামে মুনাফা লুটতে গরিবের উপরেই খড়গহস্ত হলো বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গরিব শ্রেণীর গ্রাহক বলে পরিচিত পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের জন্য দাম বেশি নির্ধারণ করেছে কমিশন।



শহরের ধনিক শ্রেণী বলে পরিচিত ফ্লাট বাড়ির ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারিরা যখন ইউনিট প্রতি বিদ্যুৎ বিল দেবেন ৪.৯৩ টাকা। একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহারকারি পল্লীর গ্রাহকদের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিপরীতে ২.১৭ টাকা বেশি বিল অর্থাৎ ইউনিট প্রতি ৭.১০ টাকা গুনতে হবে। প্রথমে বিষয়টি প্রিন্ট মিসটেক (মুদ্রণজনিত প্রমাদ) ভাবা হলেও প্রকৃতপক্ষেই সরকার তথা বিইআরসি এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

নতুন সিদ্ধান্তে, প্রথম ধাপে(০-৭৫ ইউনিট)বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের ক্ষেত্রেও পল্লীর গ্রাহকদের ইউনিট প্রতি ৩৩ পয়সা বেশি দাম পরিশোধ করতে হবে।

একইভাবে কৃষি সেচেও পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহকদের অন্যান্য সংস্থার চেয়ে ইউনিট প্রতি ১.২৫ টাকা হারে বেশি বিল দিতে হবে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সেচ গ্রাহকদের জন্য ইউনিট প্রতি দর নির্ধারণ করা হয়েছে ৩.৭৬ টাকা।

সেখানে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবউশন কোম্পানি লি. (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি. (ডেসকো), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্টিবউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) সেচের বিদ্যুৎ বিল নির্ধারণ করা হয়েছে ২.৫১ টাকা।

এ নিয়ে বৃহস্পতিবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া জন্য ডাকা সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তোপের মুখে পড়েন বিইআরসির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইউসুফ হোসেন।

প্রথমে তিনি বলেন বিষয়টি প্রিন্টিং মিসটেক। পরে কমিশনের সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বিষয়টি ভুল নয় বলে নিশ্চিত করলে চেয়ারম্যান বলেন পর্ায়ক্রমে বিষয়টি সমন্বয় করা হবে।

একই ধাপে প্রায় দ্বিগুন পরিমাণ দাম কেন করা হলো এর কোন উত্তর দেননি চেয়ারম্যান।

কমিশন সদস্য ইমদাদুল হক জানান, আগে থেকেই আরইবির বিদ্যুতের দাম বেশি ছিলো। এখন তারা পর্ায়ক্রমে সমন্বয় করার চেষ্টা করছেন।

মূলত আরইবি সিসটেম লসের নামে লুটপাট ঠেকাতে পারছে না। সংস্থাটি গত অর্থ বছরে ১৪ শতাংশ সিসটেম লস করেছে। চলতি অর্থ বছরে তাদের সিসটেম লস ১১.১৩ শতাংশ ধরা হয়েছে। যে কারণে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের মাত্র ৪টি সমিতি ছাড়া প্রায় সবগুলোই লোকসান দিয়ে যাচ্ছে।

সরকার সব সময়েই বলে আসছে সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে তারা কাজ করে যাচ্ছে। যে কারণে চাকুরিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোঠা সংরক্ষণ করছে।

কিন্তু বিদ্যুতের ক্ষেত্রে এই দ্বিমূখী নীতি দেখা যাচ্ছে। তাদের এই নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. সামছুল আলম বাংলানউজকে জানান, এমনটি মেনে নেওয়া কষ্টকর। গ্রামের কৃষক শ্রেণীর বিদ্যুৎ ব্যবহারকারিদের বিদ্যুতের দাম কম হওয়া উচিত।

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে  প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে (জুন/২০১২ হিসেব মতে)। এর মধ্যে চার-তৃতীয়াংশ গ্রাহক আরইবির। তাদের গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে ৯১ লাখ ১২হাজার।

আরইবি বর্তমানে দেশের ৪৪৩ উপজেলার ৪৮ হাজার ৯৬৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তাদের নির্মিত মোট লাইন রয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৮৮ কিলোমিটার।

এদিকে গত সেচ মৌসুমের হিসেবে সারাদেশে ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩১ টি বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্পের মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৯টি আরইবির আওতাভুক্ত।

বিদ্যুৎ খাতে মুনাফা লুটতে এই বিশাল শ্রেণীর গ্রাহকদের টার্গেড করা হয়েছে। যে কারণে কম এবং ধনিক শ্রেণীর গ্রাহকদের চেয়ে আরইবির গ্রাহকদের দাম বেশি গুনতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০২৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২১, ২০১২
ইএস/এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।