ঢাকা: তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করছে বলে অভিযোগ করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর।
বাংলানিউজকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, “তিতাসের উচ্চ পর্যায়ের কিছু কর্মকর্তা দুর্নীতি করছে। ওই দুর্নীতিবাজদের ধরতে পেট্রোবাংলা তদন্ত শুরু করেছে। ”
মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনির লোকসান ঠেকাতে নেওয়া উদ্যোগ এবং দিঘীপাড়া কয়লা খনি পেট্রোবাংলা লিজ নিলেও অর্থাভাবে কাজ শুরু করতে না পারাসহ বিভিন্ন বিষয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। বাংলানিউজকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারের শেষ পর্ব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
দুর্নীতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, “আমি দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করিনি। শতভাগ স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে কাজ করছি। ”
তিনি বলেন, “তিতাসের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কোম্পানিটির স্বার্থহানি হচ্ছে। যে কারণে পেট্রোবাংলা তিতাসের দুর্নীতির তদন্ত শুরু করেছে। ”
দুর্নীতির কোনো প্রমাণ পেলে তাদের ছাড়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার জন্য। ”
তিনি জানান, গ্যাস সংযোগ প্রদান বন্ধ থাকলেও গোপনে অনেক সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে তার কাছে তথ্য রয়েছে।
মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি প্রসঙ্গে বলেন, “খনিটি কঠিন সময় পার করেছে। প্রতিষ্ঠানটি কখনই লাভের মুখ দেখতে পারেনি। সে কারণে লোকসানি এই খনিটি ব্যবস্থাপনা ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হবে। ”
সরকার ঠিকাদারের কাছ থেকে নির্দিষ্ট দরে পাথর কিনবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, “বিগত সরকারে সময়ে অনেক বেশি লোকসান হয়েছিল। বর্তমান সরকারের সময়ে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপের কারণে গত বছর মাত্র ৬৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ”
অন্য কোনো বিকল্পে না গিয়ে দেশের একমাত্র পাথর খনিটি ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে তিনি জোরালো মতামত ব্যক্ত করেন। তার মতে, কোনদিনই যেহেতু লাভের মুখ দেখা যায়নি, তাহলে কেন লোকসান টানবে সরকার।
ঠিকাদারতো লোকসান দিতে চাইবে না। তারা মুনাফা করতে পারলে সরকার কেন পারছে না— সে প্রসঙ্গে বলেন, “নানা জটিলতা রয়েছে। ”
দিঘীপাড়া কয়লাখনি ২০০৬ সালে লিজ পেলেও পেট্রোবাংলা এখন পর্যন্ত কোন কাজ শুরু করতে পারেনি। এ ব্যর্থতার দায় শিকার করে হাসেন মনসুর বলেন, “আর্থিক সংকট ও প্রযুক্তির অভাবে কাজ শুরু করা যায়নি। ”
কবে নাগাদ এই কাজ শুরু করা হবে সে বিষয়েও দিনক্ষণ বলতে পারেননি তিনি।
তবে সেখানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির মতো আন্ডারগ্রাউন্ড (ক’প) মাইনিং পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হবে বলে জানান তিনি।
কয়লানীতি প্রণয়ন কমিটির সদস্যও তিনি। প্রায় পৌনে ৪ বছরেও কয়লানীতি চূড়ান্ত না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, “কয়লানীতির কারণে তো আর কাজ বসে নেই। আমরা তো বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা তুলছি। গত বছর ৮ লাখ মে. টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। চলতি বছরে ১০ লাখে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ”
এক সময়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা কমিটির বিভিন্ন কর্মসূচিতে হোসেন মনসুরকে দেখা যেত। কিন্তু এখন ওই কমিটি পেট্রোবাংলার অনেক পদক্ষেপকে গণবিরোধী উল্লেখ করে আন্দোলন করছে। এ প্রসঙ্গে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়।
এক বছর আগেও ওই কমিটি সম্পর্কে কথা উঠলেই তিনি একহাত নিতেন। কিন্তু এখন যেন অনেকটা সমীহ করে মতামত দেন। তিনি বলেন, “তাদের সমালোচনা করার অধিকার রয়েছে। আমরা তাদের কিছু ভালো থাকলে গ্রহণ করব। ”
তার সময়ে সাগরে কনোকোফিলিপসকে ব্লক ইজারা দেওয়া ও গাজপ্রমকে ১০টি কূপ খননের দায়িত্ব দেওয়া নিয়ে সমালোচনার জবাবে বলেন, “তাদের বাক স্বাধীনতা রয়েছে। আমরা তো আর বসে নেই। আমাদের কাজ যথা নিয়মে চলছে। আমার সময়ে স্থলভাগে কোনো ব্লক বিদেশি কোম্পানিকে দিইনি। ”
অভিযোগ রয়েছে বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে গ্যাসের আদর্শ মান (গ্যাস স্পেসিফিকেশন) পরিবর্তন করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ড. হোসেন মনসুর বলেন, “আগে যে মান ধরা হয়েছিল, তা বর্তমান প্রেক্ষাপটে অবাস্তব। তাই এই মান পরিবর্তন করা হয়েছে। এখানে কোনো কোম্পানির বিশেষ স্বার্থ দেখা হয়নি। যারা এ কথা বলে, তারা সঠিক বিষয় না জেনেই বলে। ”
সমালোচকদের কথা যে ভাবে প্রচার হচ্ছে তাদের কথা সেভাবে প্রচার হচ্ছে না উল্লেখ করে বলেন, “আমরা অনেক ভালো কাজ করছি। কিন্তু প্রচারের ঘাটতির কারণে মানুষ জানতে পারছে না। ”
বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১২
ইএস/এজে