ঢাকা: চূড়ান্ত চুক্তি না হলেও ফুলবাড়ী কয়লাখনিকে নিজেদের সম্পদ বলে প্রচার করছে এশিয়া এনার্জি। কোম্পানিটির এই অপতৎপরতাকে সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কমিটি খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ দিয়েছে। কিন্তু তাদের সে সুপারিশ দেওয়ার ১ মাস পার হলেও এশিয়া এনার্জির ওয়েব সাইটে প্রদর্শিত হচ্ছে মালিকানার দাবিটি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কমিটির একাধিক সদস্য।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকার সমালোচনা করে জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি বাংলানিউজকে বলেন, “আমাদের দেশের সম্পদ একটি বিদেশি কোম্পানি নিজেদের দাবি করার সাহস পায় কোথায় আমি বুঝতে পারি না। ”
তিনি বলেন, “এশিয়া এনার্জি তাদের ওয়েব সাইটে ফুলবাড়ী কয়লা খনিকে তাদের প্রধান সম্পদ বলে দাবি করেছে। সেখানে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে ‘Gcm resources is a london-based resource exploration and development company. Its priencipal asset is its undeveloped coal diposite in the Phulbari region of bangladesh.’
বিষয়টি জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির নজরে এলে আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখা দাবি করি। মন্ত্রণালয় জানায়, তারা কিছুই জানে না। এ কারণে তারা মন্ত্রণালয়কে ভর্ৎসনা করেন।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ফুলবাড়ী কয়লা খনি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পায়, অস্ট্রেলিয়ান কোম্পানি ব্রকেন হিল প্রোপার্টি (বিএইচবি)। তাদের সঙ্গে সমীক্ষা চুক্তি হয় ২০ আগস্ট ১৯৯৪ সালে।
বিএইচপি সম্ভাব্যতা যাচাই লাইসেন্স পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে কয়লা খনিটির সন্ধান পায়। এরপর ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান স্বত্ব এশিয়া এনার্জির কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়।
নিয়মানুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর তৃতীয় পক্ষ নিয়ে মূল্যায়ন করার কথা। তারপর সম্পাদিত হবে চূড়ান্ত উন্নয়ন চুক্তি।
কিন্তু আজ পর্যন্ত এশিয়া এনার্জির দেওয়া অনুসন্ধান রিপোর্ট তৃতীয় পক্ষকে দিয়ে মূল্যায়ন করা হয়নি। চূড়ান্ত চুক্তি সম্পাদনের প্রশ্ন অনেক দূরে। স্থানীয়দের আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকার এশিয়া এনার্জির সঙ্গে চুক্তি না করার চুক্তি স্বাক্ষর করে। তৎকালীন বিরোধীদলের নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও ওই সময়ে এক জনসভায় ঘোষণা দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে এশিয়া এনার্জির সঙ্গে চুক্তি করবেন না।
কিন্তু এরই মধ্যে এশিয়া এনার্জি পূর্ববর্তী নাম জিসিএম রিসোর্সেস এর ওয়েব সাইটে (www.gcmplc.com/corporate) ফুলবাড়ী কয়লা খনি তাদের প্রধান সম্পদ বলে উল্লেখ করেছে। যা কোন ভাবেই গ্রহণ যোগ্য হতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন সংসদীয় কমিটি।
সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভূঁইয়া বাংলানউজকে জানান, আমরা ১৯ সেপ্টেম্বর তারিখের সভায় এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।
তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখন পর্যন্ত তাদের কিছুই জানানো হয়নি।
এশিয়া এনার্জি বাংলাদেশ এর প্রধান নির্বাহী গ্যারি লাই বাংলানিউজকে জানান, উত্তরাঞ্চলের কয়লা অনুসন্ধান ও উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি এবং ফুলবাড়ী কয়লা সম্পদ অন্তর্ভূক্ত করে অনুসন্ধান লাইসেন্স ও খনি ইজারা কোম্পানির প্রধান সম্পদ। আমরা কয়লা খনিকে সম্পদ বলে দাবি করিনি।
গ্যারি বলেন, “দেশের মাইন অ্যান্ড মিনারেলস রুলস অনুসারে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় ফুলবাড়ী প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও স্কিম অব ডেভেলপমেন্ট সম্পাদন করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ”
গ্যারি লাই আরও বলেন, “খনির কাজ শুরুর অনুমোদনের মাধ্যমে ফুলবাড়ীর কয়লা ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনসহ অভূতপূর্ব সুফল বয়ে আনবে। হাজারো কর্মসংস্থানের সুযোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতি একটি ধাপ অতিক্রম করতে সক্ষম হবে। আমরা সেই দিনের প্রত্যাশায় রয়েছি। ”
তবে এশিয়া এনার্জির অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানউজকে জানান, যেভাবে ওয়েব সাইটে আর্টিকেল লেখা হয়েছে, তাতে যদি কেউ এই অভিযোগ তোলে তাহলে ভুল বলা যাবে না। প্রিন্সিপাল প্রপার্টি মানেতো প্রধান সম্পদই বোঝায়।
ওয়েব সাইট থেকে ওই মালিকানা দাবির বিষয়টি মুছে ফেলা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এশিয়া এনার্জির এক কর্মকর্তা জানান, তারা চাচ্ছেন মন্ত্রণালয় তদন্ত করুক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০১২
ইএস/এজে