ঢাকা: বিদ্যুৎ খাতে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছে সরকার। সে কারণে স্বল্পমেয়াদী রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল থেকে উচ্চদরে বিদ্যুৎ কিনতে গিয়ে দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
অন্যদিকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও গ্যাস সংকটের সামাল দিতে পারছে না। ৪ বছরে বড় অর্জন দু’টি নতুন গ্যাস ক্ষেত্র ও পুরাতন গ্যাস ক্ষেত্রে ৭টি নতুন স্তর আবিষ্কার ও উৎপাদন বেড়েছে দৈনিক ৬০০ এমএমসিএফ(মিলিয়ন কিউবিক ঘণফুট)।
বিদায়ী ২০১২ সালে বছরজুড়েই আলোচনায় ছিল বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আলোচনা। লোডশেডিং থেকে মুক্তির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। চাহিদা পূরণ ও লোডশেডিং দূর করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
মহাজোট সরকার গত ৪ বছরে ৭ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে।
ঘটনাবহুল ২০১২ সালে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র। প্রধানমন্ত্রীর আলোচিত উক্তি ছিল, “দিনে অন্তত একবার লোডশেডিং দিচ্ছি, যাতে মানুষ ভুলে না যায়, লোডশেডিং বলে কিছু একটা ছিল। ”
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে দ্রুত উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুতের কষ্ট লাঘব করতে গিয়ে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার এতে সুফলও পেয়েছে প্রথম দিকে। বিদ্যুতের সমস্যা অনেকটা কেটেও যায়।
তবে শেষ পর্যন্ত অধিকাংশ কেন্দ্র জ্বালানি তেলনির্ভর হওয়ায় বিদ্যুতের উৎপাদন খরচও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে ভর্তুকির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ৭ বার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এ সংকট কিছুটা কাটানোর চেষ্টা করা হলেও সার্বিক অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
সরকারের পরিকল্পনা ছিল, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল দিয়ে অন্তবর্তীকালীন সংকট মোকাবেলা করে দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প বাস্তবায়ন করা। সে পরিকল্পনা মোতাবেক ৩টি রেন্টাল ১৭টি কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়।
সরকার ঘোষণা দিয়েছিল স্বল্প মেয়াদে রেন্টাল কুইক রেন্টাল দিয়ে লোডশেডিং মোকাবেলা করে একই সঙ্গে গ্যাস ও কয়লা ভিত্তিক বেশ কিছু প্রকল্পের কাজ শুরু করা। কিন্তু বড় বড় এসব প্রকল্পের বেশিরভাগই অর্থায়নের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর অগ্রগতি নেই বললেই চলে। একমাত্র বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রকেও সরকার যান্ত্রিক সমস্যা থেকে বের করে আনতে পারেনি। অথচ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সংস্কার করা সম্ভব হলে সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হতো।
অন্যদিকে কয়লাভিত্তিক নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের অগ্রগতিও সামান্যই। প্রথম দিকে এ নিয়ে কোনো কাজই করতে পারেনি সরকার। সাড়ে তিন বছর পর ২০১২ সালের ২৭ জুন বেসরকারি খাতে তিনটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি করা হয়েছে ওরিয়ন গ্রুপের সঙ্গে।
এগুলো হচ্ছে, চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ১৫০-৩০০ মেগাওয়াট, খুলনায় ১৫০-৩০০ মেগাওয়াট ও মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ৩০০-৬৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। চট্টগ্রাম ও খুলনার বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২০১৫ সালের জুনে ও মাওয়া বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে উৎপাদন শুরুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় রামপালে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় সরকার। কিন্তু আজ পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণই শেষ করতে পারেনি। এ কাজে রয়েছে স্থানীয়দের প্রবল আপত্তি।
অন্যদিকে গ্যাস ভিত্তিক বৃহৎ প্রকল্প বিবিয়ানা এক ও দুই যথাসময়ে কাজ শুরু করতেই ব্যর্থ হয়েছে। যথাসময়ে কাজ শুরু করতে না পারলেও এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ারের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সামিট পাওয়ারের মালিক সরকারের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
অন্যদিকে ২০১১ সালের ১২ মে মেঘনাঘাট ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট ও ১৫ মে বিবিয়ানা ৩০০-৪৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট ইউনিট-১ ও একই ক্ষমতার ইউনিট-২ নির্মাণের চুক্তি সই করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
গ্যাসভিত্তিক এই তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে মেঘনাঘাট ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে এবং বিবিয়ানা ইউনিট-১ ও ইউনিট-২ একই বছরের আগস্ট মাসে উৎপাদনে যাওয়ার কথা। কিন্তু দেড় বছর পার হলেও বিবিয়ানা ইউনিট-১ এর কাজই শুরু করতে পারেনি সামিট পাওয়ার। ইউনিট-২ এর কাজ সম্প্রতি কাজ শুরু করেছে।
চুক্তি অনুযায়ী অর্থ সংস্থানে সরকারের কোনো দায় না থাকলেও এখন সামিট বলছে, বিশ্বব্যাংক অথবা এডিবির কাছ থেকে অর্থায়নের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তা না হলে তাদের পক্ষে এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ করা সম্ভব নয়।
সামিটের এ বক্তব্যের পরে তাদের গ্যারান্টি মানি এক কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বাতিল করার কথা ছিল। কিন্তু পিডিবি তা না করে দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে। এতে করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দু’টির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, তেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিট প্রতি খরচ হয় প্রায় ১৮ টাকা, কয়লা দিয়ে সাড়ে ৪ টাকা, আর গ্যাস দিয়ে মাত্র আড়াই টাকার মতো। সে হিসেবে কয়লা ও গ্যাস ভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসলে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না।
বড় প্রকল্পগুলো যথাসময়ে উৎপাদনে না আসায় কুইক রেন্টাল থেকে বের হতে পারছে না সরকার। ২০১২ সালের পর কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নবায়ন না করার ঘোষণা থাকলেও বাধ্য হয়েই ৭টি কেন্দ্রের সঙ্গে ১ বছর করে নতুন চুক্তি করতে হয়েছে। এতে করে বেড়ে যাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘বেসরকারি খাত থেকে বেশি দামে এক সঙ্গে এতো বেশি বিদ্যুৎ কেনার দরকার ছিল না। তার চেয়ে পুরোনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সংস্কার ও কম্বাইন্ড সাইকেলে রূপান্তরিত করা গেলে ভালো সুফল পাওয়া যেতো। সরকার অনেকটাই ভুল পথে হেঁটেছে প্রথম দিকে। তার মাসুল দিতে হচ্ছে জনগণকে। ’’
আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার
২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১১ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার অঙ্গীকার করে। সেটা এরই মধ্যে অর্জিত হয়েছে। ইশতেহারে একইভাবে ২০১৩ সালের মধ্যে উৎপাদন ৭ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছাবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে এ লক্ষ্য অর্জনে অর্থ সংস্থান বড় বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে। সরকারের বিদ্যুৎ উন্নয়নের রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১০-১৬ সাল পর্যন্ত ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে লাগবে ১৭ বিলিয়ন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা।
সরকারি-বেসরকারি খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের ব্যাপারে নিশ্চয়তা পেয়েছে সরকার। বিনিয়োগের জন্য সরকার দেশ-বিদেশে রোড শো’ও করেছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্য মতে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের সময় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। চাহিদা ছিল পাঁচ হাজার ২০০ মেগাওয়াট এবং ঘাটতি ছিল এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট।
সরকার ৪ বছরে উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ৪২৫ মেগাওয়াটে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে লোডশেডিং মোকাবেলা করতে পারছে না সরকার। ঘাটতি কমাতে বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ থাকছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
বর্তমান সরকার গত ৪ বছরে ৬০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এর মধ্যে ২০টি রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল, ১৯টি বেসরকারি ও ২০টি সরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এগুলোর মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ১৩৮ মেগাওয়াট। এর মধ্যে উৎপাদনে এসেছে সরকারি ১২টি ও রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল কেন্দ্রগুলো। যার মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২ হাজার ৭৫১ মেগাওয়াট। বেসরকারি একটি কেন্দ্রও এখন পর্যন্ত উৎপাদনে আসতে পারেনি।
টেন্ডার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরও ১০টি বেসরকারি ও ১০ বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮১৯ মেগাওয়াট।
প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই ইলাহী বাংলানিউজকে বলেন, ‘‘সরকার বিদ্যুৎ খাতে দেওয়া নির্বাচনী ইশতেহার সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছে। আমরা লক্ষ্যমাত্রা এরই মধ্যে অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছি। ’’
তিনি বলেন, সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষণা দিয়েছিল ২০১১ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ৫ হাজারে উন্নীত করতে চায়। এ ছাড়া ২০১৩ সালে ৭ হাজার ও ২০২১ সালে ২০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চায়।
জ্বালানি উপদেষ্টা দাবি করেন, বর্তমানে উৎপাদন ক্ষমতা ৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
গ্যাস খাত
গত ৪ বছরে গ্যাসের উৎপাদন বেড়েছে অনেক। তবে একই সময়ে চাহিদাও বেড়েছে কয়েকগুণ। যে কারণে উৎপাদন বাড়ানোর পরেও সরকারি হিসেবেই বর্তমানে ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৩০০ এমএমসিএফডি। আর জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘাটতি প্রায় ১ হাজার এমএমসিএফডির ওপরে।
এ কারণে গ্যাস সংকট মোকাবেলা করতে ২০১০ সালের আগস্ট থেকে আবাসিকে নতুন গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে শিল্পেও সংযোগ দেওয়া হয়েছে সীমিত আকারে। রেশনিং করা হয়েছে গ্যাস সরবরাহ পদ্ধতি। সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা (৩ ঘণ্টা) পর্যন্ত সিএনজি পাম্প বন্ধ রাখা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। শুকনো মৌসুমে এ বন্ধ থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে ৬ ঘণ্টা করা হচ্ছে।
এরপরও সর্বোচ্চ চাপে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় দিনের বেলা চুলো জ্বলছে মিট মিট করে।
অন্যদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাস সরবরাহ করতে গিয়ে অনেক সময়েই সার কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। গত অক্টোবর মাসে সার কারখানাগুলোতে ২৮৯ এমএমসিএফডি চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় মাত্র ৭৩ এমএমসিএফডি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর দাবি করেন, ‘‘বিগত সরকারের সময়ের স্থবিরতা ও বর্তমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সঠিকভাবে কাজ করতে পারলে সংকট আরও কম থাকতো। ’’
তিনি বলেন, ‘‘বর্তমান সরকারের প্রথম তিন বছরে ৬টি অনুসন্ধান, ৬টি গ্যাস ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও ১২টি ওয়ার্কওভার কূপ খনন করা হয়েছে। এ সময়ে গ্যাসের নতুন স্ট্রাকচার আবিষ্কৃত হয়েছে ৭টি। শ্রীকাইল ও সুন্দলপুরে নতুন দু’টি গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয়েছে। ’’
তিনি জানান, ‘‘বর্তমান সরকার যখন ক্ষমতা গ্রহণ করে, তখন দৈনিক গ্যাস উৎপাদিত হতো ১ হাজার ৭৪৪ এমএমসিএফ। যা বর্তমানে ২ হাজার ২০০ এমএমসিএফ ছাড়িয়েছে। ’’
‘‘টু-ডি সাইসমিক সার্ভে করা হয়েছে ১ হাজার ৪৬০ লাইন কিলোমিটার। এরমধ্যে বাংলাদেশ পেট্টোলিয়াম এক্সপ্লারেশন অ্যান্ড প্রডাক্টশন কোম্পানি (বাপেক্স)৯৯৫ কিলোমিটার লাইন ও আইওসি ৪৬৫ কিলোমিটার লাইন। এ সময়ে থ্রি-ডি সাইসমিক সার্ভে করা হয়েছে ১ হাজার ১৯৭ বর্গকিলোমিটার। ’’
‘‘নেত্রকোনার মদন এলাকা, মাদারীপুর ও খুলনা জেলায় টু-ডি সাইসমিক সার্ভে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থ বছরে এসব এলাকায় ৪৫০ কিলোমিটার লাইন সার্ভে সম্পন্ন করতে চায় সরকার। ’’
‘‘কুমিল্লা জেলায় ১৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় থ্রি-ডি সাইসমিক সার্ভে সম্পন্ন হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই। এছাড়া ২০১৬ সালের মধ্যে আরও ১ হাজার ৩৬০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সার্ভে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ’’
পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যান দাবি করেন, ‘‘মহাজোট সরকার উৎপাদন বৃদ্ধি ও নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধানই শুধু করেনি। একই সঙ্গে সঞ্চালন বিতরণ লাইন নির্মাণেও অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। ৪ বছরে ৫৪২ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হয়েছে। ’’
‘‘চলমান রয়েছে আশুগঞ্জ- বাখরাবাদ সঞ্চালন পাইপ (৩০ ইঞ্চি ব্যাস) ৫৮ কিলোমিটার। এ প্রকল্পটি শেষ হবে আগামী বছরের শেষের দিকে। বাখরাবাদ-সিদ্ধিরগঞ্জ সঞ্চালন পাইপ (৩০ ইঞ্চি ব্যাস)৬০ কিলোমিটার। এ প্রকল্প শেষ হবে আগামী বছরের মার্চে। ’’
‘‘সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল-ভেড়ামারা (ভায়া ঈশ্বরদী)৮০ কিলোমিটার পাইপ লাইন (৩০ ইঞ্চি ব্যাস) প্রকল্পের মূল পাইপ বসানো শেষ হয়েছে। ৫ নদী ক্রসিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ’’
তিনি জানান, ‘‘১২ ইঞ্চি ব্যাসের বনপাড়া-রাজশাহী পাইপলাইনের কাজও প্রায় শেষ। নদী ক্রসিং চলমান রয়েছে। অভিন্ন অবস্থায় রয়েছে ভেড়ামারা-খুলনা ১৬৫ কিলোমিটার পাইপলাইন। ’’
কুমিল্লার বিজরা-চাঁদপুর ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ৪৮ ও ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ৫ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ আগামী বছরের জুন মাস নাগাদ শেষ হবে। বিবিয়ান-ধনুয়া(৩৬ ইঞ্চি ব্যাস) ১৩৭ কিলোমিটার পাইপলাইনের কাজ শেষ হবে বর্তমান সরকারের মেয়াদেই। ’’
‘‘এ ছাড়া প্রস্তাবিত মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ চলতি অর্থবছরের মধ্যেই শেষ হচ্ছে। ’’
তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে, পেট্রোবাংলা গ্যাস চাহিদার যে প্রক্ষেপণ তৈরি করেছে তাতে তেমন একটা সুখবর নেই। যে হারে উৎপাদন বাড়ছে, তার চেয়ে অনেক বেশি হারে বাড়ছে চাহিদা। বেশ কয়েকটি বড় আকারের গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
ঠিক এই যখন অবস্থা তখন নতুন করে আরো ১১টি বড় বড় গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। ২০১৬ সালের মধ্যে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনে যাবে।
পিডিবির একটি সূত্র দাবি করেছে, কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট হলে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে প্রায় ২৫ এমএমসিএফডি এবং অন্য ক্ষেত্রে ১০০ মেগাওয়াটে ২৫ এমএমসিএফডি গ্যাস প্রয়োজন হয়।
এতে ডুয়েল কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট রয়েছে ২ হাজার ৮৩৫ মেগাওয়াট ও কম্বাইন্ড সাইকেল ছাড়া রয়েছে ৪৪৯ মেগাওয়াট। এ হিসেবে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মোট দৈনিক গ্যাস প্রয়োজন পড়বে প্রায় ৬০০ এমএমসিএফডি।
পেট্রোবাংলার একটি সূত্র দাবি করেছে, অনেক ক্ষেত্রে তাদের কোনোই মতামত নেওয়া হচ্ছে না। সে কারণে আগামীতে গ্যাস সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে তারা।
গ্যাস সংকট প্রসঙ্গে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বাংলানিউজকে বলেন, “গ্যাস সম্পদ সীমিত। এতে সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন। ”
উল্লেখ্য, ১৯৫৫ সালে বাংলাদেশের হরিপুর এলাকায় প্রথম গ্যাস ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয়। প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৬১ সালে ছাতক সিমেন্ট কারখানায়। একই বছরে ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ করা হয়। বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৬৮ সালে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে। আর আবাসিকে প্রথম গ্যাস সরবরাহ করা হয় ১৯৬৮ সালে ঢাকায়। গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় সাড়ে ২৩ লাখ।
পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ২৫টি গ্যাস ক্ষেত্রে অবশিষ্ট মজুদ প্রক্কলন (প্রমাণিত ও সম্ভাব্য) করা হয়েছে ১৬ দশমিক ৩২ টিসিএফ। তবে এ হিসেবের সঙ্গে অনেকেই একমত নয়।
বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১২
ইএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- eic@banglanews24.com