ঢাকা: মূল্য পরিশোধে বিলম্ব হলে সারচার্জ আদায়ের বিধান রেখে কয়লা বিক্রয় নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের কয়লা কেনার সুযোগ রোহিত করা হয়েছে নতুন নীতিমালায়।
সরকারি মালিকানাধিন বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির (বিজিএমসিএল)৮০শতাংশ কয়লার ব্যবহার করে আসছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কিন্তু যথা সময়ে বিল পরিশোধ করেনি পিডিবি। এতে নানা রকম জটিলতা তৈরি হতো। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিজিএমসিএল।
নতুন নীতিমালা হলে পিডিবি ৩০দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে পরবর্তী ৫ শতাংশ সারচার্জ আদায় করতে পারবে বিজিএমসিএল। আর ষাট দিন অতিবাহিত হলে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে কোম্পানিটি।
খসড়া নীতিমালায় ফড়িয়াদের কয়লা ক্রয় পুরোপুরি রোহিত করা হয়েছে। শুধুমাত্র প্রকৃত ব্যবহারকারিরা দীর্ঘ অথবা স্বল্প মেয়াদী চুক্তিতে কয়লা কিনতে পারবে। নিজের প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের নিশ্চয়তা পত্র দিতে হবে। অগ্রাধিকার পাবে বয়লার চালিত শিল্প প্রতিষ্ঠান, স্টীল মিল, বস্ত্র শিল্প প্রতিষ্ঠান, জুট মিল্স, ইটভাটা, চা বাগান ও কয়লা নির্ভর প্রতিষ্ঠান।
কয়লা সরবরাহ গ্রহণের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ৫‘শ মেট্রিক টন পর্যন্ত ২০ কার্যদিবসের মধ্যে, ৫০১ থেকে ২ হাজার মেট্রিক টন ৩০ কার্যদিবস ও ৫ হাজার মেট্রিক টন পর্যন্ত ৪০ কার্যদিবস সরবরাহ নিতে হবে।
নির্ধারিত সময়ে কয়লা উত্তোলন করতে ব্যর্থ হলে (অনধিক ৩০দিন)প্রতি টনে ২৫ টাকা হারে জরিমানা পরিশোধ করতে হবে ক্রেতাকে। এরপরও কয়লা উত্তোলন করতে ব্যর্থ হলে কয়লার ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) আংশিক বা সম্পূর্ণ বাতিল করতে পারবে বিজিএমসিএল।
খসড়া নীতিমালাটি আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থবিভাগে মতামতের জন্য পাঠানো হয়। গত সপ্তাহে আইন মন্ত্রণালয় মতামত দিয়েছে। অর্থ বিভাগের মতামত পাওয়া গেলেই চূড়ান্ত করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর(প্রধানমন্ত্রীর)অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন খনিজ সম্পদ বিভাগের উপ-সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার।
এক মাসের মধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এতদিন কয়লা বিক্রয় নীতিমালা ছিল না। দেশের একমাত্র উৎপাদনে থাকা বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা বিক্রিতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হতো। বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল) বোর্ডের অনুমোদনক্রমে বিক্রি কার্যক্রম পরিচালিত হতো।
২০০৪ সালে উৎপাদনে আসে কয়লা খনিটি। গত ১৭ এপ্রিল নীতিমালার ব্যাপারে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অর্থবিভাগ, পরিবেশ মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎবিভাগ, পিডিবি, পেট্রোবাংলা ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানির প্রতিনিধিদের সাথে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠক খসড়া নীতিমালা গ্রহণ করা হয়।
নতুন নীতিমালাটি শুধু মাত্র বিজিএমসিএল’র জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন কয়লা খনিতে উত্তোলন শুরু হলে আবার নীতিমালা করতে হবে। খসড়া নীতিমালাটির এ বিষয়টি সবচেয়ে দুর্বলতা বলে জানিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা।
বিজিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, খসড়া হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোন মন্তব্য করতে পারছি না।
কোম্পানির মতামত নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমাদের একজন প্রতিনিধি ছিল। পিডিবির কাছ থেকে সারচার্জ আদায়ের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
সরকারি হিসাবে, দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ি, জয়পুর হাটের দীঘিপাড়া, রংপুরের খালাশপীর এবং বগুড়ার কুচমায়সহ পাঁচটি কয়লা খনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব খনিতে মজুদ রয়েছে প্রায় ২৪ হাজার ৫’শ লাখ মেট্রিক টন উন্নত মানের কয়লা। যাতে দেশের বর্তমান মোট চাহিদার হিসাবে ৮১৬ বছরের চাহিদা মিটবে। এ কয়লায় সালফারের উপস্থিতি এক শতাংশেরও কম।
শুধু বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে বছরে ৮ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে। অপর চারটি খনি এখনো সিদ্ধান্তহীনতার কারণে উত্তোলনে যেতে পারছে না। অজুহাত দেখানো হচ্ছে কয়লা নীতিমালা নেই। ২০০৪ সালে কয়লা নীতিমালা প্রণয়নের কাজ শুরু হলেও আজও শেষ করতে পারেনি তিনটি সরকার।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৩
ইএস./সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর