ঢাকা: আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে দেশের ৬২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করছে।
শনিবার দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচনী ইশতেহারে এ ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে তখন দেশে বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর সংখ্যা ছিলো ৪৭ শতাংশ। বিগত পৌনে ৫ বছরে মহাজোট সরকার এর পরিধি ১৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৪-তে উন্নীত করেছে।
তবে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছাতে হলে আগামী ৫ বছরে ৩৮ শতাংশ সুবিধা বঞ্চিতের ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে হবে। একে অসম্ভব বলে মনে করছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা।
সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বিডি রহমত উল্লাহ। ইশতেহার যেন নির্বাচনী বাগাড়ম্বরে পরিণত না হয় সে বিষয়ে নজর রাখার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
বিডি রহমত উল্লাহ বাংলানিউজকে সংবিধান প্রণয়নের সময় প্রত্যেক নাগরিকের জন্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই সুবিধা সুদূরপরাহত।
দেশে বর্তমানে গ্রাম রয়েছে ৮৭ হাজার ৩১৬টি। এর মধ্যে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ৪৯ হাজার ৭৬৮টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করেছে। এর বাইরে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে। বলতে গেলে সবেমাত্র কাজ শুরু করেছে কোম্পানিটি।
এর বাইরে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বিভাগীয় ও জেলা শহরে (উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ছাড়া), রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বিদ্যুৎ বিতরণ করে আসছে।
বলতে গেলে গ্রামে বিদ্যুতায়নের দায়িত্বে রয়েছে আরইবি। সংস্থাটি ৪৯ হাজার ৭৬৮টি গ্রামে বিদ্যুতায়ন করেছে। এছাড়া গ্রামে বিদ্যুৎ দেওয়া হলেও শহর ও গ্রামের মধ্যে রয়েছে চরম বৈষম্য। গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও রয়েছে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা। অথচ শহরে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে শহরের চেয়ে পল্লীবিদ্যুতের দাম নেওয়া হচ্ছে বেশি। এর বাইরে লো ভোল্টেজসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত পল্লীর বাসিন্দারা। অথচ বাহাত্তর সালের সংবিধানে সবার জন্য বিদ্যুতের কথা বলা হয়েছে।
শেখ হাসিনা ইশতেহার ঘোষণায় বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত ও আরো দ্রুততর করা হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে আওয়ামী লীগ সরকার প্রণীত এবং বাস্তবায়নাধীন মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির লক্ষ্য অর্জনের ভেতর দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
২০১৬ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। ২০২১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার মেগাওয়াট। ২০০৮ সালের ইশতেহারেও এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছিলো। এবার ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
কিন্তু শিল্পায়ন, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির সক্ষমতার পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্যমাত্রা ২৪ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করা হয়েছে বলে জানান আওয়ামী লীগ প্রধান।
বর্ধিত বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, ভুটান ও নেপালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন-বণ্টনের ব্যবস্থা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে ইশতেহারে।
পরিকল্পিত ৩০ লাখ সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার সহজলভ্য ও ব্যাপক করা হবে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে।
কয়লা সম্পদের যথাযথ অর্থনৈতিক ব্যবহারের লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ১৩০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে এরইমধ্যে গৃহীত প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা আমদানি করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের ইশতেহারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩
সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাক্টিং আউটপুট এডিটর