ঢাকা: আবারো বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যেই নীতিগত সম্মতি দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অফিস করেন। ওই দিনই মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়।
দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে যুক্তি দেখানো হয়, বিদ্যুৎ বিক্রির চেয়ে ক্রয়মূল্য অনেক বেশি পড়ছে। তাই লোকসান দিতে হচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলোকে। লোকসান কমিয়ে আনতেই বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবনা দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শীতকালই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আদর্শ সময়। কারণ এ সময় বিদ্যুতের ব্যবহার কম থাকে। দাম বাড়ালে জনগণের ব্যয়ও খুব একটা বাড়বে না।
প্রধানমন্ত্রীর ওই আশ্বাসের পরই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে মন্ত্রণালয়। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানেই বিতরণ কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ১৫ দশমিক ৫০ শতাংশ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১২ দশমিক ৫৮ শতাংশ, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) ২৩ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ১৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পনি (ওজোপাডিকো)৮ দশমিক ৫১ শতাংশ খুচরা মূল্যবৃদ্ধি করতে চাইছে।
সরকার চাইলেই বিদ্যুতের দাম বাড়াতে পারে না। তাদেরকে একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর এখতিয়ার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) হাতে।
তবে বিইআরসিও সাড়া দিয়েছে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে। ৪ মার্চ বিপিডিবির ও ওজোপাডিকো, ৫ মার্চ ডিপিডিসি, ডেসকো এবং ৬ মার্চ আরইবির দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানীর তারিখও নির্ধারণ করেছে।
দাম বাড়াতে হলে কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয় বিইআরসিকে। নিয়ম রয়েছে বিতরণ কোম্পানিগুলো দাম বৃদ্ধির আবেদন করবে। সঙ্গে দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা তুলে ধরতে হবে--কেন তারা দাম বাড়াতে চায়।
দাম বাড়ানোর প্রস্তাব পেলে প্রথমে কমিশন বৈঠক করে বিষয়টি আমলযোগ্য কি-না তা যাচাই করবে। আমলযোগ্য হলে গণশুনানীর তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সেখানে বিতরণ কোম্পানি ও গ্রাহকদের প্রতিনিধিসহ সবপক্ষের উপস্থিতিতে গণশুনানী গ্রহণ করা হবে।
এরপর বিইআরসি চাইলে দাম বাড়াতেও পারে। আবার নাও বাড়াতে পারে। এটাই আইন। এতে সরকার কিংবা বিতরণ কোম্পানির প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। উন্নত দেশে এটাই হয়ে থাকে।
কিন্তু বিইআরসি’র ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তারা গ্রাহকদের স্বার্থ দেখছে না। সরকারের চাওয়াকেই তারা বেশি গুরুত্ব দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, তারা স্বাধীনভাবেই কাজ করে যাচ্ছেন। গ্রাহকসহ সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থই তারা রক্ষা করে যাচ্ছেন। পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে দাবি তার।
আওয়ামী লীগ অনেক সমলোচনা সত্ত্বেও গত ৫ বছরে ৭ দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। শেষ দিকে এসে আরও একবার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলো। কিন্তু সবকিছু চূড়ান্ত করেও প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয় সমালোচনার মুখে। এবার ক্ষমতা গ্রহণের পরেই দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ নিয়েছে।
দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। তারা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে। তারা দাম বৃদ্ধি প্রতিহত করার ডাক দিয়েছে। কিন্তু সরকার অস্বাভাবিক গতিতে দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহবায়ক প্রকৌশলী শেখ শহীদুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের অব্যবস্থাপনা ও লুটপাটের কারণে দফায় দফায় দাম বাড়াতে হচ্ছে। কুইক রেন্টালের নামে লুটপাট বন্ধ হলে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না। জনগণ এই দামবৃদ্ধির প্রক্রিয়া প্রতিহত করবে। ’
২৬ ফেব্রুয়ারি সংসদে প্রধানমন্ত্রী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন। দাম বাড়ছে কি বাড়ছে না তা সরাসরি না বললেও তিনি বলেছেন, দাম বাড়ালে জনগণের খুব বেশি সমস্যা হবে না।
সংসদ অধিবেশনে প্রশ্নকারী স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে অন্য দেশে কিভাবে দাম ও বিদ্যুৎ বিক্রি করা হচ্ছে--সে দিকে তাকানোর জন্য বলেছেন। একই সঙ্গে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ তো দিতেই হবে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন।
বিইআরসি’র সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে কি হচ্ছে-না তা এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে একে দাম বাড়ানো না বলে সমন্বয় প্রক্রিয়া বলা উচিত। কারণ এখন বিতরণ কোম্পানিগুলো বেশি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করছে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২০ ঘণ্টা, মার্চ ০১, ২০১৪