নেপিতো থেকে: ক্ষুধা-দারিদ্র ও সন্ত্রাসকে অভিন্ন শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক জোরদারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী।
তারা বলেছেন, টেকসই গণতন্ত্রের অব্যাহত ধারা চর্চায় এ অঞ্চলের ভাগ্যের পরিবর্তন হতে পারে।
মায়ানমারে বিমসটেক শীর্ষ সম্মেলনের সাইড লাইনে গুরুত্বপূর্ণ দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় এই মনোভাব প্রকাশ করেন দুই দেশের সরকার প্রধান।
মায়ানমার আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এই দ্বি-পাক্ষিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি আহ্বানে সাড়া দিয়ে ত্রিপুরায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশকে দেওয়ার আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকে মনমোহন সিং তৃতীয় দফায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
এ সময় তিনি দারিদ্র্য বিমোচন নারীর ক্ষমতায়ন ও গ্রামীণ জনগণের ভাগ্য উন্নয়নে শেখ হাসিনার সরকারের প্রশংসা করেন।
বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে আলোচনার বিষয়বস্তু তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল।
তিনি বলেন, অত্যন্ত আন্তরিক পরিবেশে দুই সরকার প্রধান প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেছেন। তাদের আলোচনায় দুই দেশের পারস্পরিক বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন প্রসঙ্গ স্থান পায়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অভিন্ন শত্রু ক্ষুধা দারিদ্র্য ও সন্ত্রাস। আমরা এই অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম চালিয়ে যেতে অঙ্গীকারাববদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করা।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ এই অঞ্চলকে একটি সন্ত্রাসমুক্ত অঞ্চল হিসেবে দেখতে চায়। আর সে লক্ষ্যে একযোগে কাজ করতে চায়।
বৈঠকে শেখ হাসিনা বিদ্যুৎখাতে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতার কথা স্মরণ করে সামনের দিনগুলোতে তা আরও বৃদ্ধি করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
বিশেষ করে ভারতের ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের সঞ্চালন লাইনে যুক্ত করার ব্যাপারে মনমোহন সিংয়ের বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার অনুরোধ জানান।
জবাবে মনমোহন সিং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করে বলেন, সম্ভাব্য দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভুটানের আঞ্চলিক উদ্যোগে যৌথভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নককে আরও গতিশীল করবে।
স্থল সীমান্ত প্রটোকল ভারতের লোকসভায় উত্থাপন করায় মনমোহন সিংকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে এই সমস্যা অমিমাংসিত রয়েছে। আমরা আশা করবো ভারতের পার্লামেন্টে বিষয়টি পাস হবে।
তিস্তা চুক্তির বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ব্যাপারে ভারতের ইতিবাচক ও কার্যকর পদক্ষেপের অপেক্ষায় আছি।
মনমোহন সিং তার বক্তব্যে বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে নিকটতম প্রতিবেশী এবং সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বন্ধু। বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশ এক সঙ্গে কাজ করবে।
স্থানীয় সময় দুপুর দেড়টায় শুরু হয়ে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠকটি চলে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং।
বাংলাদেশ সময় ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৪