ভোলা: সাবমেরিন কেবল লাইনের ২টি পয়েন্টে দিয়ে ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ভোলার ৫ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব উপজেলায় গত ৩০ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে রয়েছে।
ফলে প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন মানুষ। ছোট বড়-কারখানার উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হতে আরো ৩ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছেন লক্ষাধিক গ্রাহক।
সমস্যা দূর করতে জেলা সদর থেকে সাময়িকভাবে সামান্য বিদ্যুৎ সরবরাহ হলেও তা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩০ ঘন্টার বেশি সময় ধরে জেলা সদরের বাইরের উপজেলাগুলোতে বিদ্যুৎ না থাকায় পৌর এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে। আর বিদ্যুতের জন্য চালু করা যাচ্ছে না কোনো কারখানা। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল বরফকলগুলো। বাসা-বাড়িতে ফ্রিজে রাখা খাবার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
একদিকে প্রচণ্ড গরম অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের নাভিশ্বাস অবস্থা। রাতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ছে পুরো এলাকা।
দৌলতখানের সংবাদকর্মী মনিরুজ্জামান মহিন জানান, বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ নেই। প্রচণ্ড গরমে একদিকে যেমন মানুষ দিশেহারা অন্যদিকে মানুষের দৈনন্দিন কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কবে বিদ্যুৎ আসবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
বোরহানউদ্দিনের ব্যবসায়ী সুমন ও বিশ্বজিৎ বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যবসায়ীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। উপজেলার সকল কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
লালমোহনের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, স্কুল-কলেজর শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছেন।
ছিদ্দিকুর রহমান ও লিটন জানান, কয়েক দিন পর পরই বিদ্যুৎ সমস্যা লেগেই থাকে। ভোলার মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এখন আবার বিদ্যুৎ নেই, কবে বিদ্যুৎ চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে জনজীবনে মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আলী জানান, বুধবার রাত ১০টার দিকে জাতীয় গ্রিডের সাবমেরিন কেলব লাইনে মারাত্মক ত্রুটি দেখা দেয়। এতে ভোলার ৫ উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। জাতীয় গ্রিডের বরিশাল লাইন থেকে সদরে মাত্র ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
তিনি জানান, তেঁতুলিয়া নদীর ভেতরের সাবমেরিন কেবল লাইনের কাজ চলছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, ভোলার একমাত্র গ্যাসভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট মেশিন ৯ মাসের বেশি সময় ধরে বিকল থাকায় জেলার বিদ্যুৎ সংকট কাটছে না। সেটি চালু করার জন্য বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও তারা চালু করছে না। যার ফলে গ্রাহকদের এতো ভোগান্তি।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম সোবরাব আলী বিশ্বাস জানান, পল্লি বিদ্যুতের আওতায় জেলার দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন উপজেলা ও জেলা সদরের কিছু অংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও বুধবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। কেবল লাইন ফল্ট করায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। প্রায় ৬৫ হাজার গ্রাহক পড়েছেন চরম বিপাকে।
ভেঞ্চাল এনার্জি লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপক হাফিজুর রহমান জানান, আমাদের গ্যাসভিত্তিক ৩৪ দশমিক ৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার প্লান্ট মেশিনটি প্রায় সচল হয়ে গেছে। মে মাসের মধ্যে সেটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুবিধার্থে জাপান থেকে ৬ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন আরো ৪টি মেশিন আনা হয়েছে। মেশিনগুলো এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহে চালু হবে। তখন আর বিদ্যুৎ সমস্যা থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১০ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৪