ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

নাইকোর সম্পদ ক্রোকের আবেদন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩, ২০১৪
নাইকোর সম্পদ ক্রোকের আবেদন

ঢাকা: নাইকো রিসোর্স (বাংলাদেশ) লিমিটেডের সম্পত্তি ক্রোক (জব্দ) করতে চায় বাংলাদেশ। ক্রোকের অনুমতির জন্য পেট্রোবাংলা ঢাকা জেলা জজ কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি আবেদন করেছে।



পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর আবেদন করার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানান, পেট্রোবাংলার আবেদনের ওপর গত মাসে শুনানি হয়েছে। পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১ জুন। গত ১৭ নভেম্বর সম্পদ ক্রোকের অনুমতি চেয়ে মামলা করা হয় বলেও জানান তিনি।

আবেদনে নাইকোর ব্লক ৯-এর স্বত্ত্ব, সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ও বাঙ্গুরা গ্যাসফিল্ডের শেয়ার বাজেয়াপ্ত করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ফেনী গ্যাস ফিন্ডের গ্যাস সরবরাহের বিল বাবদ নাইকোর পাওনা ২৭.৩১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছে।

ছাতক গ্যাসফিল্ডের টেংরাটিলায় দুর্ঘটনার কারণে কানাডিয়ান এই প্রতিষ্ঠানটির মালামাল ক্রোক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। টেংরাটিলায় অনুসন্ধান কূপ খননের সময় নাইকোর অবহেলার কারণে ২০০৫ সালের ৭ জানুয়ারি ও ২৪ জুন দু’দফা বিস্ফোরণ ঘটে।  

বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস পুড়ে যায়। বড় ধরণের ক্ষতি হয় গ্যাসক্ষেত্রটির। গাছপালা পুড়ে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হয়। পেট্রোবাংলা ৭৪৬ কোটি ৫০ লাখ ৮৩ হাজার ৯৭৩ টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে নাইকোর কাছে।  

যদিও পেট্রোবাংলার ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে পরিবেশবাদীদের প্রবল আপত্তি রয়েছে। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, প্রকৃত ক্ষতির চেয়ে অনেক কম দেখানো হয়েছে।
 
নাইকোর কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করলে তারা সাড়া দেয়নি। পেট্রোবাংলা বাধ্য হয়ে ২০০৮ সালের ১৫ জুনে জজ কোর্টে মামলা দায়ের করে। অন্যদিকে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) নাইকোর চুক্তি চ্যালেঞ্জ করে একটি মামলা দায়ের করে।  

মামলায় রায়ে জরিমানা আদায় না হওয়া পর্যন্ত ফেনী গ্যাসক্ষেত্র থেকে সরবরাহ করা গ্যাসের মূল্য পরিশোধ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন জজ কোর্ট। কিন্তু ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোটে যায় নাইকো। হাইকোর্ট আগের রায় বহাল রাখেন। এ কারণে ২শ‘ কোটি টাকা বিল প্রদান থেকে বিরত রয়েছে বাংলাদেশ।  

পরবর্তী সময়ে নাইকো বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের জুলাইয়ে ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সালিসি আদালত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউট (আইসিএসআইডি-ইকসিড) মামলা করে। নাইকো ইকসিডে মোট দু’টি মামলা করে।  

একটি হচ্ছে গ্যাসের বকেয়া বিল আদায় সংক্রান্ত (আরবি/১০/১৮)মামলা। অন্যটি টেংরাটিলা বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণের মামলা (আরবি/১০/১১)।   গ্যাস বিল পরিশোধ সংক্রান্ত মামলাটির শুনানি হবে আগামী ২৮ এপ্রিল।   

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মের্সাস নাইকো রিসোর্স(বাংলাদেশ) লিমিটেড বাংলাদেশের যে ক্ষতি করেছে তার চেয়ে অনেক কম অর্থ দাবি করা হয়েছে।  

প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত। তা নাহলে শুধু সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।