ঢাকা: ঘড়িতে সময় তখন সকাল সাড়ে ১০টা। বাইরে প্রখর রোদ।
আর তাতে অংশ নিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ বিদ্যুৎ বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা। তারা বক্তৃতাতেও দিনের বেলা বাল্ব না জ্বালানোর উপদেশ দিলেন।
১৫ তলার বিদ্যুৎ ভবনের সর্বোচ্চ তলায় হওয়ায় চারদিকে ফাঁকা। আশপাশে ভবনগুলো উচ্চতায় এর ধারের কাছেও নেই। কোনো বড় গাছও নেই যা সূর্যের আলো আসার পথে বাধা হতে পারে। ঠিক এমন একটি হলরুমেই এতগুলো লাইট জ্বালিয়ে নীতিবাক্য আওড়ালেন তারা। অগত্য সেখানে উপস্থিতরা মুখ টিপে হেসেছেন শুধু।
স্বাগত বক্তব্যে রাখেন পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে সাশ্রয়ী-ব্যবহার জরুরি। এজন্য দিনের আলোকে কিভাবে ব্যবহার করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে। দিনের বেলা জানালার পর্দা সরিয়ে দিয়ে লাইট অফ করে রাখতে হবে।
এজন্য ভবন তৈরির সময় এমনভাবে ডিজাইন করতে হবে যাতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে। প্রয়োজনে কঠোর আইন করারও তাগিদ দেন তিনি।
ডিজি মহোদয় যখন এই বাণী শোনাচ্ছিলেন তখনও চারিদিকের গ্লাসে পর্দা টানানো। উপস্থিত মিডিয়াকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করলে কর্তাবাবুদের কান পর্যন্ত গড়ায়। তখন জানালার পর্দা দু’একটি সরিয়ে দেওয়া হলেও লাইট সবগুলোই জ্বলছিলো আগের মতোই।
অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের যুগ্ম সচিব সিদ্দিক জুবায়ের। তিনিও বলেন বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। তিনিও দিনের বেলা লাইট ব্যবহার না করার তাগিদ দিতে ভোলেননি। সাধারণ বাল্ব সরিয়ে শুধু এলইডি বাল্ব ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলেই নাকি ১ হাজার ২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
তিনি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎবাতি, উন্নত প্রযুক্তির ফ্যান, জেনারেটর, এসি, রেফ্রিজারেট ব্যবহারের তাগিদ দেন। এতে ২ হাজার ৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন।
কিন্তু সারাদেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব বাল্ব, এসি, ফ্যান জেনারেটর কিভাবে পরিবর্তন করা যায়। বা পরিবর্তনে কি পরিমাণ আর্থ প্রয়োজন তার কোনই পরিসংখ্যান দেন নি।
পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনকালে হলরুমে পর্দা লাগিয়ে দিয়ে এ ধরণের নিয়ম নীতির কথা বলা কতটা যৌক্তিক জানতে চাওয়া হলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পাওয়ার সেলের ডিজির বক্তব্যের (দিনের বেলা লাইট না জ্বালানো) সঙ্গে আমি একমত না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা সম্ভব না।
অথচ জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নিজেও বিভিন্ন সভায় দিনের বেলা লাইট না জ্বালানোর জন্য বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা এ জন্য জনসচেতনতার কথা বলে আসছেন। অথচ বিদ্যুৎ বিভাগের এই যুগ্ম সচিব বলেন, তিনি না-কি এর সঙ্গে একমত নন।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মন্ত্রণালয়ে নিজ কক্ষে দিনের বেলা কখনই জানালার পর্দা লাগান না। সূর্যের আলোতে কাজ করেন। আর খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এই যুগ্ম সচিব অফিসে নিজের কক্ষে সব সময় জানালার পর্দা লাগিয়ে রাখেন। কাজ করেন লাইট জ্বালিয়ে।
শুধু লাইট জ্বালানোই নয়। এসি চালানোর ক্ষেত্রেও আয়োজকরা ছিলেন অনেক উদার। ৭টি আড়াই টনি এসি ২২ ডিগ্রি তাপমাত্রায় দেওয়া ছিলো। কক্ষটির বাইরে রাখা ফুলের টবগুলো বাতাসে উড়ে যেতে চাইছিলো। অথচ গ্লাস সরিয়ে দেওয়া হলে এসি চালানোর প্রয়োজন আদৌ পড়ত না।
অনেকে মন্তব্য করেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অনুষ্ঠানে বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ করেছেন আয়োজকরা। মুখে বলবেন এক আর করবেন আরেক, তাহলে তো হবে না। শুদ্ধি অভিযান আগে নিজের ঘর থেকে শুরু করতে হয় (চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম) । তবেই তা যুক্তিযুক্ত হয়। সেটা দেখতেও ভালো লাগে।
দিনের বেলায় এতগুলো লাইট জ্বালিয়ে অনুষ্ঠান করা প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি আমি নিজেও খেয়াল করেছি, দিনের বেলায় কেন পর্দা টানাতে হয় আমি বুঝি না। আমাদের সূর্যের আলোকে কাজে লাগানো উচিত। শুধু কথা না বলে তা কাজেও তা দেখানো উচিত।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪/আপডেটেড ১৯৪৫