ঢাকা: আগে রাতে গ্যাস থাকত। কিন্তু ৭ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ রাজধানীর দক্ষিণখানের আইনুছবাগে।
অনেক বার বলার পর সোমবার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির লোকজন গিয়েছিলেন সরেজমিনে। সেই টিমের নেতৃত্বে ছিলেন ওয়েলডার আকমল হোসেন। তারা বিহিত করবেন তো দূরের কথা, ত্রুটিই ধরতেই পারেননি। বলে গেছেন রাতে যখন মেইন লাইনে গ্যাস সঞ্চালন থাকে তখন পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
আকমল হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে লোকজনের দুর্দশা দেখে নিজের কাছেই খারাপ লেগেছে। কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। এ কারণে লজ্জা লেগেছে। ’
তিনি জানান, মেইন লাইনে গ্যাস না থাকায় কোথায় সমস্যা তা চিহ্নিত করা সম্ভব হয় নি। রাতে যেহেতু মেইন লাইনে গ্যাস সরবরাহ থাকে তখন পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোথায় সমস্যা।
আকমল হোসেন জানান, তিনি ব্যবস্থাপক (জরুরি) রবিউল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়েছেন। রাতে টিম পাঠিয়ে দেখার জন্য।
তিতাসের এই স্টাফ জানান, পাইপ লাইনে কোথাও লিকেজ থাকতে পারে। গ্যাস না থাকার সময় হয়তো পানি ঢুকে গ্যাস সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ খান আইনুছবাগ কলেজ রোডের বাসিন্দা গৃহিনী সালমা বেগম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরেই দিনের বেলা গ্যাসের দেখা পাওয়া যায় না। রাতেই কেবল পাওয়া যেতো। তাতে চুলা জ্বলত টিপ টিপ করে।
কিন্তু গত সাতদিন ধরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। কেরোসিন চুলা কিনেছি। আর তা দিয়েই চলছে রান্না। কিন্তু এদিকে বাড়ির মালিক নোটিশ দিয়ে বসে আছে, ‘কেরোসিন চুলো জ্বালানো যাবে না। ’ কেরোসিন চুলো জ্বালালে বাসায় কালি হয়। এখন মাসের শেষ। গ্যাস সিলিন্ডার কেনার মতো টাকাও নেই। বাড়িওয়ালা বলেছেন, তা না হলে বাসা ছাড়তে হবে।
চাঁদ মসজিদ এলাকার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা মিসেস স্বপ্না বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দুর্ভোগের শেষ নেই। প্রতিদিনই আশায় থাকি ‘আজ হয়তো গ্যাস পাব। ’ কিন্তু গ্যাসের দেখা আর মেলে না।
খেদের সাথে তিনি আরো বলেন, সকাল ৮টায় স্কুলে যেতে হয়। দুই ছেলের জন্য কিছুই রান্না করে রেখে যেতে পারি না। ক’দিন ধরেই হোটেলের খাবার খেয়ে দিন চলছে। নিজেরা কোনোভাবে এসব খাবার খেলেও ছেলে দু’টি হোটেলের খাবার মুখেই তুলতে চায় না। আত্মীয়স্বজন এলে তো লজ্জার সীমা থাকে না। তখন নিজেকে বড়ই অসামাজিক মনে হয়।
গৃহিনী শারমিন সুলতানা বাংলানিউজকে জানান, অনেক দিন ফোনে জানিয়েছি কোনই কাজ হয় নি। এমনকি একবারের জন্য দেখতে পর্যন্ত আসেনি তিতাসের লোকজন। বাধ্য হয়ে গত সপ্তাহে তিতাস গ্যাসের হেড অফিস কারওয়ান বাজারে গিয়েছিলাম। তারপরও তাদের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দক্ষিণখান এলাকায় বৈধ সংযোগের চেয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগেই বেশি। এ কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জানান, চোরাই লাইন যখন তৈরি হয় এবং সংযোগ দেওয়া হয় তখন তিতাসকে জানালে এই অবস্থার সৃষ্টি হতো না। শুধুই কি তিতাসের দায়? এলাকাবাসীর কি কোনোই দায় নেই!
তিনি বলেন, বশির নামের একটি লোক কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছে। অনেক অবৈধ পাইপ স্খাপন করে সংযোগ দিয়েছে সে।
গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য তিতাস গ্যাসকে নির্দেশ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলেও জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান
বাংলাদেশ সময়: ২০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০১, ২০১৪