ঢাকা: বিদ্যুতে সরবরাহ কমিয়ে শিল্পে গ্যাস সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
সোমবার সচিবালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।
সিরাজগঞ্জ ও আশুগঞ্জের দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে। এতে ১’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে বড় ধরনের কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত রোববার তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জানায়, গাজীপুর এলাকার ২৪৫টি কারখানায় গ্যাস না থাকায় উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে।
যদি পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে এসব কারখানাগুলো আগামী ঈদে শ্রমিকদের বোনাস ও বেতন দিতে পারবে না। এর ফলে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হলে, এর জন্য সরকার দায়ী থাকবে। এমন কি গাজীপুরের গার্মেন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়ারও হুমকি দেয় বিজিএমই।
জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের জানিয়েছিলেন, খুব শিগগিরই শিল্পে গ্যাস সরবরাহ করা হবে।
সোমবার গ্যাস সংকট নিরসনে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বৈঠকে বসে রাষ্ট্রায়ত্ব গ্যাস বিতরণী সংস্থাগুলো। এ বৈঠকের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে তা শিল্পে দেওয়া হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসন মনসুর বলেন, শিল্পে কোনো সংকট থাকবে না। শিল্পকে অগ্রাধিকার দিয়েই আমরা গ্যাস সরবরাহ করবো। এ জন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রে কিছু সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হবে।
সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমানোর দাবি তোলা হলেও, তা নাকচ হয়ে যায়। আপাতত সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমানো হচ্ছে না বলেও জানান পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান।
শুধু গাজীপুরের ২৪৫টি গার্মেন্ট ছাড়াও শিল্প এলাকা নারায়ণগঞ্জেও ভয়াবহ গ্যাস সংকট চলছে। এ জেলাতে দিন-রাত মিলিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি গ্যাস থাকছে না।
শিল্পের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার অনেক স্থানেই আবাসিক গ্রাহকেরা গ্যাস সংকটে পড়েছেন। অনেক এলাকায় সকাল সাতটার মধ্যেই গ্যাসের চাপ কমে যায়। আর গ্যাসের চাপ পাওয়া যায় রাত নয়টার পরে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গ্যাসের অভাবে অন্তত ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন কম হচ্ছে। গত আগস্ট মাসের শেষের দিক থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে ৬ হাজার মেগাওয়াট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে ৫ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াটে নেমে আসে।
সম্প্রতি সারকারখানা চালু করায় গ্যাস সংকট তীব্র হয়েছে। দৈনিক ১৮৯ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে ১৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে সার কারখানায়।
সোমবার ২ হাজার ৩৬২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়। এরমধ্যে দেশীয় ৪টি কোম্পানির ৬০টি কূপ দিয়ে ১ হাজার ৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে বহুজাতিক কোম্পানির ২৭টি কূপ দিয়ে ১ হাজার ২৮৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিন সার কারখানায় ২৮৯ মিলিয়ন ঘনফুট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ১৭৩ মিলিয়ন ঘনফুট। বিদ্যুতে ১ হাজার ৩৭৮ মিলিয়ন ঘনফুটের বিপরীতে সরবরাহ করা হয় ৮৩৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এছাড়া শিল্পসহ অন্যান্য খাতে ১ হাজার ২৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হয় বলে পেট্রোবাংলা সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৪