ঢাকা: আগের গুলোই নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। সেই সামিট গ্রুপকে নতুন করে দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) আইপিপি সেল-১।
অথচ সামিট গ্রুপের কারণে সরকারের বিদ্যুৎ খাতের সব মহাপরিকল্পনা ভেস্তে যেতে বসেছে। বাড়াতে হয়েছে কুইক রেন্টালের মেয়াদ। এ নিয়ে সরকারকে অনেক সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে।
যদিও বিদ্যুৎ বিভাগের কিছু কর্মকর্তা কুইক রেন্টাল জিইয়ে রাখার পক্ষে। অভিযোগ আছে, এগুলো সচল থাকলে তাদের আখের গোছাতে সহজ হয়। দেশ রসাতলে গেলেও তাতে তাদের যায় আসে না।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে স্বল্প মেয়াদী হিসেবে রেন্টাল, কুইক রেন্টাল, মধ্য মেয়াদী হিসেবে ছোট ছোট তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর করে। আর দীর্ঘ মেয়াদী হিসেবে গ্যাস ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ হাতে নেয়।
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বৃহৎ সাইজের বিবিয়ানা-১ ও ২ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয় প্রথম দিকেই। যথারীতি দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্রই সামিট গ্রুপকে দেওয়া হয়। কিন্তু কোনোটাই নির্ধারিত সময়ে উৎপাদনে আসতে পারেনি।
২০১১ সালের ১২ মে বিবিয়ানা-২ ও বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি করা হয় সামিট গ্রুপের সঙ্গে। বিবিয়ানা-২ ৩৪১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্রটির গত জানুয়ারি মাসে উৎপাদনে আসার কথা ছিল। কিন্তু মাত্র ৩০ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে।
আর বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরুর কথা ছিল ২০১৩ সালের আগস্টে। কিন্তু মেয়াদ গড়িয়ে গেলেও কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয় সামিট। নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হলে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। তারপর কাজই শুরু করতে ব্যর্থ হয় সামিট।
অবশেষে মিডিয়ার কঠোর সমালোচনার মুখে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিবিয়ানা-১ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি বাতিল করে বিদ্যুৎ বিভাগ। কিন্তু জামানত বাজেয়াপ্ত না করে সামিটকে ছাড় দিতে একটি গ্রুপ উঠে পড়ে লেগেছে বলে পিডিবিসূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শেই সামিট মামলা ঠুকে দিয়েছে। সামিট গ্রুপকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষে দুর্বল তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হবে। যাতে সামিট গ্রুপ সহজেই মামলায় জয়ী হয়ে তাদের জামানতের ২৪ কোটি টাকা ফেরৎ পেতে পারে।
সামিটের এই ঢিলেমির পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, এসব বড় বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্র যথাসময়ে উৎপাদনে এলে কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রয়োজন পড়বে না। তখন কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বসিয়ে দিতে পারত সরকার।
আর তাতে সামিটসহ কুইক রেন্টাল সিন্ডিকেটের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কুইক রেন্টালে টিকিয়ে রাখতেই সামিট গ্রুপ এই ছল চাতুরির আশ্রয় নিয়েছে বলে মনে করেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।
এমন একটি কোম্পানিকে নতুন করে আরও দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দেওয়ার সুপারিশ করেছে আইপিপি সেল-১। সামিট গ্রুপ তেলভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টির একটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায়, অন্যটি ঢাকার বসিলা অথবা ওয়াশপুরে স্থাপন করতে চায়। প্রত্যেকটি ৩১০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার।
কিন্তু পতেঙ্গায় যেখানে সামিট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। সেখানে এর আগেও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তুতি চেয়েছিলো। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র না দেওয়ায় তা বাতিল করা হয়।
অন্যদিকে সামটি গ্রুপ দাবি করেছে, বসিলায় তাদের ৯.১০ একর জমি বায়নাপত্র হয়েছে। কিন্তু সামিট গ্রুপ বায়নাপত্রের নামেও জালিয়াতি করেছে বলে পিডিবিসূত্র জানিয়েছে। কারণ সামিট যে বায়নাপত্রের কথা উল্লেখ করেছে তার মেয়াদ ও কার্যকারিতা অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
সামিট গ্রুপ প্রস্তাবিত বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টি ১৫ বছরের জন্য অনুমোদন চেয়েছে। অনুমোদন দেওয়া হলে সরকারকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। কারণ এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দু’টির বিদ্যুতের দর প্রস্তাব করা হয়েছে ১৬ টাকা (প্রতি ইউনিট)।
আইপিপি সেল-১ তার সুপারিশে লিখেছে, গ্যাসের স্বল্পতা এবং কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনে বিলম্ব হওয়ায় ২০২১ সালের মধ্যে ৩০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন রয়েছে।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুহু রুহুল্লাহ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সামিট গ্রুপ নিজের থেকেই তেলভিত্তিক দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। পর্যালোচনা করে মতামতসহ বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১৪