ঢাকা: সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানির সহজপ্রাপ্যতার অভাব এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি উৎসের ঘাটতি দেশের জ্বালানি নিরাপত্তাকে ঝুঁকির সম্মুখীন করতে পারে। সেই সঙ্গে বিদ্যুত সরবরাহে সংকট, গ্যাসের মজুদ হ্রাস আর সামগ্রিক জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি দেশের বর্তমান উৎপাদন পরিস্থিতিকেও বাধাগ্রস্ত করবে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
সম্প্রতি স্বাধীন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’-এর মাসিক ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক নভেম্বর মাসের সংখ্যায় এই আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে।
জ্বালানি সহজপ্রাপ্যতাকে সংজ্ঞায়িত করতে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি মূলত দু’টি বিষয়কে চিহ্নিত করেছে। এরমধ্যে একটি, মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার, আরেকটি জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের সামঞ্জস্য।
এই দু’টি সংজ্ঞাগত বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’ বলছে, দেশে মাথাপিছু জ্বালানির ব্যবহার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। দেশে চাহিদার তুলনায় জ্বালানি সরবরাহ কম থাকায় জ্বালানির সংকট দীর্ঘদিন বিরাজ করতে পারে।
পরিসংখ্যান উল্লেখ করে তারা বলে, ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মাথাপিছু বিদ্যুত ব্যবহারের পরিমাণ ছিল ২১৭ কিলোওয়াট ঘণ্টা। যা একই বছর ভারতে ৫২৯ দশমিক ১ কিলোওয়াট ঘণ্টা, পাকিস্তানে ৩৬৮ দশমিক ৩৮ কিলোওয়াট ঘণ্টা, শ্রীলংকায় ৪৩১ দশমিক ৪৪ কিলোওয়াট ঘণ্টা এবং ভুটানে ১৬১৯ দশমিক ৪৮ কিলোওয়াট ঘণ্টা ছিল।
‘ক্রয়ক্ষমতার স্বল্পতা’ যা জ্বালানির মূল্যের সঙ্গে সম্পর্কিত-এর দিকে দৃষ্টি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বলছে, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম ৭ বার বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের (২০১৪) মার্চ মাসে বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে ৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বৃদ্ধির পর সম্প্রতি বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড বাল্ক ইলেক্ট্রিসিটি ট্যারিফ জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ১৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
যা দেশে জ্বালানি ক্রয়ক্ষমতাকে আরো কমিয়ে দেবে বলে জানায় তারা।
খাত অনুযায়ী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির তারতম্যের দিক নির্দেশ করে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলছে, বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে (১৩২ কেভি) বিদ্যুতের দাম ১২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ, বৃহৎ শিল্প (৩৩ কেভি) এর ক্ষেত্রে, ৮৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ ও মাঝারি শিল্পের (১১ কেভি) ক্ষেত্রে ৭৫ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম ৭১ দশমিক ৬৮ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে, ক্ষুদ্র শিল্প এবং কৃষিতে বিদ্যুতের মূল্য যথাক্রমে ৭০ দশমিক ৫৭ এবং ১০৫ দশমিক ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
দেশে জ্বালানি উৎসের নির্ভরযোগ্যতা- যা জ্বালানির নিরবিচ্ছিন্ন সরবরাহ ও মূল্যের স্থিতিশীলতাকে নির্দেশ করে- এর অভাব পরিলক্ষিত হয়।
অন্যদিকে, অধিকাংশ জ্বালানি উৎসই তাদের উৎপাদন ক্ষমতার চেয়ে কম উৎপাদন করে দেশে মোট জ্বালানি চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে।
মে ২০১৪ তে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ৭ হাজার ৫০ মেগাওয়াটের বিপীরিতে উৎপাদনের পরিমাণ ৬ হাজার ২ শ’ ৯৩ মেগাওয়াট ছিল এবং সেপ্টেম্বর ২০১৩ তে এ চাহিদা ও উৎপাদনের পরিমাণ যথাক্রমে ৬ হাজার ৮ শ’ ৪৪ এবং ৬ হাজার ৭ শ’ মেগাওয়াট ছিল। অর্থাৎ মে ২০১৪ এবং সেপ্টেম্বর ২০১৪ তে লোডশেডিং এর পরিমাণ যথাক্রমে ৫ শ’ ৫০ ও ৯ শ’ ৩২ মেগাওয়াটে দাঁড়ায়।
বর্তমান জ্বালানি নীতি পুনঃনিরীক্ষণের মাধ্যমে কাঠামোগত জটিলতাকে চিহ্নিত করার ওপর জোর দেয় ‘উন্নয়ন অন্বেষণ’। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বড় আকারের বিনিয়োগ ও গবেষণার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করার ওপর গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানায় তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০১৪