ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

এশিয়া এনার্জি অকারণেই টাকা দিচ্ছে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪৩ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
এশিয়া এনার্জি অকারণেই টাকা দিচ্ছে! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ফুলবাড়ী কয়লা খনিতে এশিয়া এনার্জির কোনো স্বত্ত্ব নেই। এশিয়ার এনার্জি যা করছে, তার কোনো আইনগত ভিত্তিও নেই বলে জানিয়েছেন জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবুবকর সিদ্দিক।


 
বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেছেন তিনি।
 
আবুবকর সিদ্দিক বলেন, এশিয়া এনার্জিকে সমীক্ষা করে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। তারা যে রিপোর্ট দিয়েছে, বিশেষজ্ঞ কমিটি এটি যথোপযুক্ত নয় বলে উল্লেখ করেছে।
 
তাদের সমীক্ষা সঠিক হয়নি বলে ভূতত্ত্ব অধিদফতরকে সার্ভে করতে বলা হয়েছে। সার্ভে পাওয়া গেলে ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান সচিব।
 
এ বিষয়ে জিসিএম (এশিয়া এনার্জি) সিইও গ্যারি লাই বাংলানিউজকে জানান, কারিগরি কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের সমীক্ষা রিপোর্ট সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিভাগের সচিব। সেই রিপোর্টটি এখনও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হয়নি। সে কারণে এই বিষয়ে এখনই মন্তব্য করা কঠিন।

গ্যারি লাই জ্বালানি বিভাগের সচিবের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেন, ফুলবাড়ী কয়লা খনির মাইনিং লিজ রয়েছে তাদের কাছে। চুক্তি অনুযায়ী তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। অগ্রগতি রিপোর্ট নিয়মিত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হচ্ছে।
 
এশিয়া এনার্জি তো বছর বছর টাকা জমা দিচ্ছে ট্রেজারিতে এ কথার জবাবে সচিব বলেন, ট্রেজারিতে গিয়ে যে কেউ টাকা জমা দিতে পারে। আপনি চাইলেও জমা দিতে পারেন। এশিয়া এনার্জি কোনোভাবেই ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্র দাবি করতে পারে না।
 
এশিয়া এনার্জি সমীক্ষার পর লিজের জন্য আবেদন করেছে। সরকার এতে সায় দেয়নি। তাহলে কীভাবে ফুলবাড়ির স্বত্ত্ব থাকে তাদের হাতে। তারা দাবি করলে তা আইনত অগ্রাহ্য হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ফুলবাড়ী কয়লা ক্ষেত্র লিজ পেতে চায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি’। তারা অনেক আগেই লিখিত প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। বিদেশি কোম্পানির বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে অ্যালার্জি আছে। তাই, সরকারও বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করছে।
 
সচিব বলেন, কয়লা খনিতে কয়লার ওপরে বিশাল পানির স্তর রয়েছে। এই পানি ব্যবস্থাপনা কী হবে সে বিষয়টি সবার আগে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং একটি সার্ভে রিপোর্ট দিয়েছে।
 
সম্প্রতি, এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আন্ডার গ্রাউন্ড কোল গ্যাসিফিকেশন বিষয়ে চিন্তা করা হচ্ছে। বিশ্বে এই প্রযুক্তি উদ্ভব হয়েছে, কিন্তু প্রমাণিত নয়। তাই, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। এই প্রযুক্তি সফল হলে আন্ডার গ্রাউন্ডের গ্যাসিফিকেশন করে কয়লা তোলার চিন্তা করা হবে।
 
ফুলবাড়ী কয়লা খনি অনুসন্ধানের দায়িত্ব পায় অষ্ট্রেলিয়ান কোম্পানি ব্রকেন হিল প্রোপার্টি (বিএইচপি)। তাদের সঙ্গে সমীক্ষা চুক্তি হয়, ২০ আগস্ট ১৯৯৪ সালে। বিএইচপি সম্ভাব্যতা যাচাই করে লাইসেন্স পাওয়ার পর ১৯৯৭ সালে কয়লা খনিটি আবিষ্কার করে। এরপর ১৯৯৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি অনুসন্ধান স্বত্ত্ব এশিয়া এনার্জির কাছে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ ছেড়ে যায়।
 
নিয়মানুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রমের পর তৃতীয় পক্ষ নিয়ে মূল্যায়ন করার কথা। তারপর সম্পাদিত হবে চূড়ান্ত উন্নয়ন চুক্তি। কিন্তু সেই চুক্তি আজও সম্পাদিত হয়নি। বিএইচপির কাছ থেকে স্বত্ত্ব কিনে নেওয়ার পর এশিয়া এনার্জি ১৯৯৮ সালে ফুলবাড়ী কয়লাখনি প্রকল্প থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের পরিকল্পনা করে। ২০০৫ সালের ১১ সেপ্টেম্বর প্রাকসমীক্ষা জরিপের জন্য এক বছরের ছাড়পত্র দেয় পরিবেশ অধিদফতর।
 
কিন্তু সমীক্ষা করতে গিয়ে প্রবল বাধার মুখে পড়ে কোম্পানিটি। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করে তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।

ওই দিন বেলা আড়াইটায় জি.এম. পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে একটি গণমিছিল বের হয়।
 
মিছিলটি ফুলবাড়ী শহরের যমুনা নদীর ব্রিজের কাছে আসলে ব্রিজের সামনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মিছিলটিকে ‍আটকে দেয়। এতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হলে ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত ও আহত হয় প্রায় ২ শতাধিক।
 
 ২৬ আগস্টের এ ঘটনার পর রাতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। পরের দিন ২৭ আগস্ট ১৪৪ ধারা ভেঙে রাস্তায় নামেন জনতা। পিছু হটে বিজিবি (সাবেক বিডিআর) সদস্যরা ফুলবাড়ী শহর ছাড়তে বাধ্য হয়। অকার্যকর হয়ে পড়ে ১৪৪ ধারা।

একই আন্দোলন ২৭, ২৮ ও ২৯ তারিখ পর্যন্ত অতিবাহিত হওয়ার পর ৩০ আগস্ট তৎকালীন সময়ের চারদলীয় জোট সরকার ফুলবাড়ী জনসাধারণের সঙ্গে ৬ দফা চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সমঝোতা করে।
 
পরে জনরোষের ভয়ে নিজের নাম বদলে জিসিএম রিসোর্সেস ধারণ করে এশিয়া এনার্জি। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয় না। ২০০৬ সালের পর বেশ কয়েক দফায় ফুলবাড়ীতে প্রবেশ করতে চেয়ে বাধার মুখে ফেরত যেতে হয়েছে।

এমনকি ১০ কিলোমিটার দূরে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে গিয়েও ধাওয়ার শিকার হয়েছেন কোম্পানিটির কর্তারা।
 
বাংলাদেশ সময়:  ১০৩৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৩ , ২০১৫
এসআই/এবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।