ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আলোর মুখ দেখছে দিঘিপাড়া কয়লাখনি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
আলোর মুখ দেখছে দিঘিপাড়া কয়লাখনি ফাইল ফটো

ঢাকা: বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি সফলতার পর দিঘিপাড়ার দিকে দৃষ্টি প্রসারিত করল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিসিএমসিএল (বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড)। যথাসময়ে কাজ শুরু করা গেলে দেশের দ্বিতীয় হিসেবে উৎপাদনে যুক্ত হবে দিঘিপাড়া কয়লাখনি।


 
সম্প্রতি দিঘিপাড়া কয়লাখনির উন্নয়নে বিসিএমসিএল’র প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে ডিপিপি প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ।
 
বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কয়লাখনি হিসেবে চিহ্নিত বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি। খনির অভ্যন্তরে উচ্চ তাপমাত্রা, পানির উচ্চ তাপমাত্রা, খনিতে পানির উচ্চ প্রবাহ, রূফ ফল্ট (ছাদে ফাটল), আর্দ্রতা (হাই হিউমেডিটি) ও কয়লার স্বত:স্ফূর্ত প্রজ্বলনকে যেকোনো কয়লাখনির জন্য ঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

৪টি ঝুঁকির মধ্যে সবগুলোই বড়ুপুকুরিয়াতে বিদ্যমান। বিশ্বের আর কোনো খনিতে ৪টি ঝুঁকি একই সঙ্গে দেখা যায়নি। সে কারণে বড়পুকুরিয়াকে বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কয়লাখনি হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বলে জানিয়েছেন মাইনিং প্রকৌশলী খান মো. জাফর সাদেক।
 
তিনি জানান, স্বাভাবিক তাপমাত্রা ২৭ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলেও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির অভ্যন্তরে তাপমাত্রা রয়েছে প্রায় ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পানির উষ্ণতা রয়েছে প্রায় ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। খনিতে বাতাসের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ৬০ থেকে ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস  থাকার কথা। বড়পুকুরিয়ায় রয়েছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘণ্টায় পানিপ্রবাহ রয়েছে ১ হাজার ৮০০ কিউবিক মিটার। সেই সঙ্গে রয়েছে রূফ ফল্ট। এর পরেও বিসিএমসিএল খনি পরিচালনায় অনেক সফল হয়েছে।
 
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এ কয়লাখনিটি সফলতার সঙ্গে পরিচালনায় আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে বিসিএমসিএলকে। আর সেই আত্মবিশ্বাস ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চায় দিঘিপাড়া কয়লাখনিতে। ২০১২ সালে খনিটির উন্নয়নের প্রস্তাব দেয় বিসিএমসিএল। এতোদিনে তাদেরকে উন্নয়ন অনুমোদন দিয়েছে সরকার।
 
তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রধান কয়েকটি দাবি রয়েছে। এর মধ্যে হচ্ছে বিদেশি না, উন্মুক্ত না। বিসিএমসিএলকে দেওয়া হলে একটি না মেনে নেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে জাতীয় কমিটিরও কোনো আপত্তি নেই বলে জানা গেছে।
 
জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, বিসিএমসিএল দিঘিপাড়া থেকে কয়লা উত্তোলন করলে আমাদের আপত্তি থাকবে না। তারা যদি সবকিছু স্বচ্ছতার সঙ্গে করে তাহলে জাতীয় কমিটি সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছে।

বিসিএমসিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোনে কোনো কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ও বিসিএমসিএল’র বোর্ড চেয়ারম্যান ইশতিয়াক আহমেদ বাংলানিউজকে ‍জানিয়েছেন, আমরা ডিপিপি প্রণয়নের জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।
 
বিসিএমসিএল’র আর্থিক সক্ষমতা কতোটুকু রয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগে ডিপিপি হোক, তারপর অর্থায়নের বিষয়টি দেখা হবে।
 
দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চলে নবাবগঞ্জ উপজেলার পুটিমারা ও সালখুর ইউপি এবং হাকিমপুর উপজেলা বোয়ালদা ইউনিয়ন এলাকায় অবস্থিত কয়লাক্ষেত্রটি ১৯৯৫ সালে আবিষ্কার করে বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর। সাইচমিক সার্ভের ওই ফলাফল নিরুপণ করার জন্য সেখানে বেশ কয়েকটি কূপ খনন করা হয়। চব্বিশ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত খনিটি। এ কয়লাখনি থেকে বছরে ৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
 
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের হিসাব মতে,িএ পর্যন্ত দেশে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ি, জয়পুরহাটের দিঘিপাড়া, রংপুরের খালাশপীর এবং বগুড়ার কুচমায়সহ পাঁচটি কয়লাখনি আবিষ্কৃত হয়েছে। এসব খনিতে মজুদ রয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৩শ’ মিলিয়ন টন উন্নতমানের কয়লা। এখন শুধুমাত্র বড়পুকুরিয়া থেকে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৫
এসআই/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।