ঢাকা: তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রির সুযোগ রেখে গভীর সমুদ্রে তেল ও গ্যাস খননের চুক্তি করেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কোম্পানি কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা ৩২ মিনিটে উৎপাদন অংশীদারী চুক্তিটি (পিএসসি) সই হয়।
চুক্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে সই করেন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মহিউদ্দিন আহমেদ, পেট্রোবাংলার সচিব ইমাম হোসেন ও কনোকো ফিলিপসের পক্ষে সই করেন এর এশিয়া প্যাসিফিক দক্ষিণ অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম জি লাফালান্ড্রে।
চুক্তিতে বলা হয়েছে, উত্তোলিত গ্যাসের ৫৫ শতাংশ থেকে অনুসন্ধানের জন্য বিনিয়োগ করা অর্থ উঠিয়ে নেবে কনোকো ফিলিপস। বাকি ৪৫ শতাংশ গ্যাস থেকে বাংলাদেশ সরকার পাবে ৫৫ শতাংশ আর কনোকো ফিলিপস ৪৫ শতাংশ। তবে উৎপাদন বৃদ্ধির হারের সঙ্গে বাংলাদেশের হিস্যা বেড়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। অর্থাৎ সম্ভাব্য খনি থেকে যদি প্রতিদিন ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলিত তাহলে বাংলাদেশ সরকার পাবে ৮০ শতাংশ।
অপর দিকে, তেলখনির ক্ষেত্রে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ সরকার পাবে বলে চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর দামের ক্ষেত্রে, এশিয়া প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম ইনডেক্স (এপিপিআই) অনুযায়ী বাজার দর নির্ধারণ করা হবে। তবে প্রতি টন ঘনফুট গ্যাসের দাম ৭০ থেকে সর্বোচ্চ ১৮০ ডলারের উর্ধ্বে কোনো অবস্থাতেই উঠতে পারবে না।
চুক্তিতে প্রথম ধাপে পাঁচ বছর সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এসময়ের মধ্যে যদি কনোকো ফিলিপস সাফল্য অর্জন করতে পারে সেক্ষেত্রে পরবর্তী দুই ধাপে (দুই বছর করে মোট চার বছর) সময় বর্ধিত করা যেতে পারে প্রস্তাব করা হয়েছে।
পাঁচ বছরের প্রথম ধাপকে আবার দুই ভাগে (উপধাপ) বিভক্ত করা হয়েছে। এর প্রথম উপধাপে (তিন বছর) তারা গভীর সমুদ্রে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সাইচমিট সার্ভে করবে। দ্বিতীয় উপধাপে (দুই বছর) কমপক্ষে একটি কূপ খনন করে তাদের সফলতা দেখাতে হবে। এরপরই কেবল তারা পরবর্তী দুই ধাপের জন্য বিবেচিত হবে।
পরবর্তী দুই ধাপে তাদের অনুসন্ধানের অঞ্চল ৫০০ বর্গকিলোমিটার করেও বাড়ানো হবে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাংক গ্যারান্টি হিসেবে কনোপো ফিলিপসকে ৫ কোটি ২০ লাখ মার্কিন ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। কনোকো ফিলিপস প্রথম পাঁচ বছরে (প্রথম ধাপে) তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ৭৭০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে।
চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার (অব.) ইনামুল হক, জ্বালানি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর জোনারেল (অব.) সুবিদ আলী ভুঁইয়া, জ্বালানিসচিব মেজবাহ উদ্দিন, পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর ও ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি।
চুক্তি সম্পর্কে জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী সাংবাকিদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘যারা এই চুক্তির বিরোধিতা করছে, তারা না পড়ে ও না বুঝে তা করছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘চুক্তিতে রপ্তানির যে দাবি তোলা হচ্ছে তা মূলত বাংলাদেশ যদি কখনো তেল-গ্যাস কিনতে অসম্মতি জানায়, কেবল সেক্ষেত্রে তারা বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। তাছাড়া পারবে না। ’
অর্থমন্ত্রী আবুল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘জ্বালানি সংকটের কারণে দেশে প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পূর্ববর্তী জ্বালানিখাতকে স্থবির করে রেখে গেছেন। ’ দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখেই এই চুক্তি করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ চুক্তি না করার সুপারিশ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের বিরোধিতা এবং প্রাপ্ত গ্যাস এলএনজি করে রপ্তানির সুযোগ রেখে পেট্রোবাংলা কার্যালয়ে এ চুক্তি সই হয়।
কনোকোফিলিপস বঙ্গোপোসাগরের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকের যেসব স্থানে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নেই, শুধু সেসব স্থানেই তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করবে।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি বহুদিন ধরেই এ ধরনের চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। গত ১৪ জুন জাতীয় কমিটি এই চুক্তির প্রতিবাদে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও কর্মসূচি দিলেও পুলিশি বাধায় তা প- হয়ে যায়।
চুক্তিটি ২৪ আগস্ট, ২০০৯-এ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়। এর আগে দরপত্র আহ্বান করা হয় ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮-এ। মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয় ২৩ মে, ২০১১-এ।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরে কূপ খনন করবে কনোকো ফিলিপস।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১১