ঢাকা: জুলাই মাসে আবারও বাড়ানো হচ্ছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। দেশে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুৎ বিপননের ৫সংস্থার মধ্যে আরইবি, ডিপিডিসি, পিডিবি দাম বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর কাছে লিখিত প্রস্তাব জমা দিয়েছে।
বিইআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ ইফসুফ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, কমিশনের একজন সদস্য দেশের বাইরে রয়েছেন তিনি ফিরলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিদ্যুতের দাম না বাড়ানোর পক্ষে।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ১২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (পিডিবি) জুলাই থেকে ৯ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর থেকে আরও ১০ শতাংশ এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. (ডিপিডিসি) ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
অপর দুটি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকে) এবং ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লি. (ডেসকো) এখনও প্রস্তাব জমা দেয়নি বলে বিইআরসি জানিয়েছে।
বিইআরসি সূত্র জানিয়েছে, আরইবি তাদের ১ ডিসেম্বর ২০০৯ তারিখের নির্ধারিত গ্রাহক পর্যায়ের দামের ওপর ভিত্তি করে গত মার্চ মাসে প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এর আগে ফেব্রুয়ারি ২০১১ মাসে গড়ে ৫ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধি করা হয়।
ওই প্রস্তাবে আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে ১০০ মেগাওয়ার্ট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট ২ দশমিক ৬৪ থেকে ১১ দশমিক ৭৪ শতাংশ বর্ধিত করে ২ দশমিক ৯৫ হতে ৩ দশমিক ৩৯ টাকা। ১০১ হতে ৩০০ ইউনিট পর্যন্ত প্রতি ইউনিট বর্তমান মূল্য ২ দশমিক ৯৫ থেকে ৩ দশমিক ২৩ টাকা হতে ১৯ দশমিক ২২ শতাংশ বর্ধিত করে ৩ দশমিক ৩৪ থেকে ৩ দশমিক ৮৫ করা। ৩০১ হতে ৫০০ মেগা ওয়ার্ট বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের প্রতি ইউনিট ৪ দশমিক ২৮ থেকে ৪ দশমিক ৫৬ টাকা থেকে ২০ শতাংশ বর্ধিত করে ৫ দশমিক ১৪ হতে ৫ দশমিক ৪৭ টাকা করা। ৫০০ মে. ওয়ার্ট এর উপরে ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মূল্য প্রতি ইউনিট ৫ দশমিক ৬৪ থেকে ৬ দশমিক ৭২ টাকা থেকে বর্ধিত করে ৬ প্রতি ইউনিট ৭৭ থেকে ৮ প্রতি ইউনিট ০৬ টাকা করার কথা বলা হয়েছে।
এছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট ৫ প্রতি ইউনিট ৬২ থেকে ৫ দশমিক ৬৬ বর্ধিত করে ৬ দশমিক ১৮ থেকে ৬ দশমিক ২৩ এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ইউনিট প্রতি ১০ শতাংশ, সেচ খাতে ৯ দশমিক ৯৩, সাধারণ শিল্প ১২, বৃহৎশিল্পে ১২ এবং রাস্তার বাতির জন্য ইউনিট প্রতি ২০ শতাংশ হারে মুল্য বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়েছে।
আরইবি এর প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২৭ এপ্রিল ২০১১ তারিখে বিইআরসিতে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিইআরসি গণশুনানি গ্রহণ করেন কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইফসুফ হোসেন ও অপর ২ কমিশন সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইমদাদুল হক।
কমিশন সদস্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে শুনানীর বিষয়ে নিশ্চিত করে বলেন, ‘এক দেশে ২ ধরণের মুল্য চলতে পারে না। সে কারণে আমরা সব বিতরণ সংস্থার বিষয়ে শুনানি শেষে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। তবে কমিশন সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ রাষ্ট্রীয় সফরে দেশের বাইরে থাকায় শুনানি স্থগিত রাখা হয়েছে। ’
কমিশন সদস্য ড. সেলিম মাহমুদ দেশে ফিরলে অন্যদের আবেদনের শুনানি শেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি দাম বাড়ানোর বিষয়ে ইঙ্গিত করে বলেন আগামী মাসে (জুলাই) সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
কমিশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ ইফসুফ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি করলে সরকারের ভর্তুকি দিতে হবে ৭০০ কোটি টাকা আর ৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হলে ভর্তুকি দিতে হবে ৫০০ কোটি টাকা।
তিনি বলেন ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে দাম বাড়নোর বিপক্ষে তবে আমার একার কথায় তো হবে না। কমিশন সিদ্ধান্ত নিবে। ’
তিনি আরও বলেন ‘দেশের বর্তমান অবস্থায় কোনভাবেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত হবে না। ’
সরকারের দিক থেকে কোন নির্দেশনা আছে কিনা? এ প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, ‘কমিশন স্বাধীন তবে আমাদের কাজের জন্য আমরা কারও কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। ’
‘তবে দাম বাড়বে দেশের মানুষ কষ্ট পাবে প্রধানমন্ত্রী জানবে না তা তো হতে পারে না। সে কারণে আনঅফিসিয়ালি প্রধানমন্ত্রীর মতামত নেওয়া হবে। ’
দাম বাড়ালে সব ক্ষেত্রে একসঙ্গে বাড়ানোর কথা নিশ্চিত করলেও কত শতাংশ দাম বাড়ানো হচ্ছে সে বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে বাজি হননি তিনি।
বর্তমান সরকারের সময়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়।
বাংলাদেশ সময়: ২০৪২ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১১