ঢাকা: নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে সহজ শর্তে ঋণ এবং অফসোরে (বিদ্যুৎ গ্রিডের আওতামুক্ত) ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।
বায়োগ্যাসের ক্ষেত্রে সরাসরি গ্রাহককে ভর্তুকির টাকা প্রদান করলেও সৌরবিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইডকলের নির্ধারিত সংস্থার মাধ্যমে ভর্তুকি প্রদান করছে।
বিদ্যুতের আওতায় আসেনি বা বিদ্যুতের লাইন স্থাপন ব্যয়বহুল সেসব (পাহাড়ি এবং দুর্গম) অঞ্চলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রসারে কাজ করছে ইনফ্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (ইডকল)।
ইডকল সূত্র জানিয়েছে, তারা সরাসরি কোনও প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না। তাদের তালিকাভুক্ত ৩০টি (এনজিও এবং প্রতিষ্ঠান) সংস্থা সারাদেশে কাজ করছে।
সেইসঙ্গে সংস্থার জন্য নামমাত্র সুদে ঋণ প্রদান করে আসছে ইডকল।
বৃহৎ সহযোগী সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ শক্তি, ব্র্যাক ফাউন্ডেশন, সৃজনী বাংলাদেশ, ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ, গ্রিন হাউজিং অ্যান্ড এনার্জি লি: এবং সোলার ফাউন্ডেশন।
অফসোর এলাকায় ইডকলের এই সেবা পেতে হলে তাদের নিবন্ধিত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
সংযোগী সংস্থা গ্রামীণ শক্তির সহাকারী ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেছেন, আমাদের থেকে সেবা পেতে হলে গ্রাহককে তাদের নিকটবর্তী যে কোন শাখায় যোগাযোগ করতে হবে।
এ কাজ করার জন্য গ্রামীণ শক্তির প্রতিটি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে ছাড়াও সারাদেশে ১০৮৩টি ব্রাঞ্চ অফিস রয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের অফিসে যোগাযোগ করার সর্বোচ্চ ৪ দিনের মধ্যে সোলার প্যানেল বসিয়ে দেওয়া হয়। তবে সরকারের সিদ্ধান্ত মতে এখন শুধু ২০, ৫০ এবং ১৩০ ওয়াট ঘন্টা পিকের সোলার প্যানেল বসানো হচ্ছে।
এর চেয়ে বড় সোলার প্যানেল নিতে হলে ওই গ্রাহক ভর্তুকির আওতায় আসবে না। তবে গ্রামীণ শক্তি তাদের জন্যও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে থাকে।
এক তৃতীয়াংশ টাকা জমা দিলেই গ্রাহককে এ সেবা প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট টাকা ৩৬ মাসের সমান কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য।
একটি ২০ ওয়াট পিকের সোলার প্যানেল বসাতে ১১ হাজার টাকা, ৫০ ওয়াট পিকের ২৬ হাজার ৫শ‘ টাকা এবং ১৩০ ওয়াট পিকের প্রায় ৪৫ হাজার টাকা ব্যয় হয় বলে তিনি জানান।
তিনি বলেন, গ্রামীণ শক্তি দেশের ৫০/৬০ শতাংশ সোলার প্যানেল এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট নিয়ন্ত্রণ করছে।
অন্যদিকে শহরাঞ্চলে বা বিদ্যুৎ গ্রিডের আওতাভুক্ত এলাকায় যারা সোলার প্যানেল বসাতে চান তাদের জন্য তফসিলী ব্যাংকগুলো সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে আসছে।
এজন্য ২০০ কোটি টাকার একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেছেন, গ্যাস সংকটের ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতি - এই সমীকরণের মধ্যে আটকে ছিল বাংলাদেশ। এ সংকট থেকে বের হয়ে আসতে কয়লাচালিত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিষয়টি সামনে চলে আসে ৯০-এর দশকে। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও অনেক বাধা রয়েছে সামনে।
দেশে কয়লার মজুদ পর্যাপ্ত হলেও উত্তোলন প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে ব্যাপক জটিলতা। গত ৭ বছর ধরে ৩টি সরকার ঘুরপাক খেয়েছে খসড়া কয়লা নীতির মধ্যেই। কয়লানীতি চূড়ান্ত হলেও কয়লা উৎপাদনে যেতে সময় লাগবে আরো ৪ থেকে ৫ বছর।
তিনি আরো বলেন, সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে তারা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে অন্যান্য ব্যবস্থার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধিতে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
২০১৩ সালের মধ্যেই সব সরকারি অফিসের ফ্যান এবং বাল্ব ( লাইট) সৌর শক্তির আওতায় আনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্ব-স্ব অফিসকে বলা হয়েছে, তাদের নিজস্ব অর্থায়নে সোলার প্যানেল বসাতে। তবে তারা বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড ( বিপিডিবি) থেকে কারিগরি সহায়তা নিতে পারবে।
বিপিডিবির পাওয়ার সেলের (সাচটেইনেবল এনার্জি) উপ-পরিচালক আল মুদাবির বিন আনাম বাংলানিউজকে বলেছেন, শুধু সরকারি অফিস নয়, সব বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ সংস্থাকে তাদের ফ্যান এবং লাইট সৌর শক্তির আওতায় আনতে বলা হয়েছে।
বিপিডিবি পরিচালক (কর্মাশিয়াল) আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেছেন, দেশে বর্তমানে বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটি ২০ লাখ এবং নতুন সংযোগ পাওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে ৮ লাখ ২০ হাজার। যা মোটেও আশান্বিত হওয়ার মতো চিত্র নয়। জ্বালানির সঙ্গে জাতীয় প্রবৃদ্ধি জড়িত।
সরকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা দ্রুত সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে সর্বাধিক গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ সময় : ১২০৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১১