ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিমানে জ্বালানি সংরক্ষণে অদক্ষতা, উদ্যোগেও ধীরগতি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৩ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
বিমানে জ্বালানি সংরক্ষণে অদক্ষতা, উদ্যোগেও ধীরগতি

ঢাকা: ঠিকাদারের নানা অনিয়ম, দায়িত্বে অবহেলার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের গা ছাড়া ভাবের কারণে অনেকটা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোর জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজ।

২০১১ সালের জুলাইয়ে ১০৮ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে জ্বালানি মজুদ সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ শুরু হয় ।

২০১২ সালের ডিসেম্বর নাগাদ কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা থাকলেও তিনবার মেয়াদ বৃদ্ধি হলেও প্রকল্পের নেই কোনো অগ্রগতি। আবারও জুন ২০১৭ সাল নাগাদ প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন।

সরকারের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোতে বিমানের জ্বালানি তেলের বর্তমান মজুদ ক্ষমতা মাত্র ২৭শ’ মেট্রিক টন।

অপরদিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা উড়োজাহাজের জন্য জেট এ-ওয়ান জ্বালানি তেলের দৈনিক চাহিদা ৮০০ মেট্রিক টন। এতে কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোতে থাকা মজুদ দিয়ে মাত্র তিন দিনের জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

এ অবস্থায় কুর্মিটোলা এভিয়েশন জ্বালানি তেলের মজুদ ক্ষমতা ১০ হাজার ২০০ মেট্রিক টনে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। উদ্যোগটি সফল হলে তিন দিনের বদলে ১৩দিন জ্বালানি তেলের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে বলে জানানো হয় ওই প্রতিবেদনে।

প্রকল্পে নিয়োগকৃত পূর্বের ঠিকাদারের অসহযোগিতা ও ঠিকাদারের মালামাল, প্রকল্প এলাকায় সরবরাহ না করায় বাস্তবায়নের শতভাগ মুখ দেখেনি ২০১২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রকল্পটি।

আইএমইডি’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, প্রকল্পে জ্বালানি তেল মজুদের জন্য ট্যাংক নির্মাণ হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্প এলাকায় কোনো অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম কেনা হয়নি।

দ্বিতীয়বার দরপত্রের আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে দরদাতার অনুকূলে এখনও কারাদেশ দেওয়া হয়নি। ট্যাংক নির্মাণ সরঞ্জাম, পাইপ, গেট, গেট ভাল্ব, ইনস্টল ও ফেব্রিকেশন ব্যয়সহ ফ্লোটিং এর কাজ এখনও অসম্পূর্ণ।

এছাড়াও শেষ হয়নি ভূমি উন্নয়ন ও অন্যান্য অবকাঠামোর কাজ।

জানা যায়, প্রকল্পের ভূমি উন্নয়নের জন্য ৭৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত বছরের ডিসেম্বর নাগাদ ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা। ৬৫০ ফুট সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৯৫ শতাংশ।

তবে ট্যাংক ফাউন্ডেশনসহ তিনটি স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণ কাজ শেষ হলেও ট্যাংক ফেব্রিকেশনের ৭৫ শতাংশ কাজ ও ওয়েল্ডিংয়ের কাজ এখনও অসম্পূর্ণ রয়েছে।
 
জ্বালানি তেলের লিকেজ রোধে স্টোরেজ ট্যাংকের বাইরের ওয়ালের তিন দিকের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছ। এক দিকের ফাউন্ডেশনের কাজ শেষ হলেও প্রাচীর নির্মাণ এখনও বাকি।

এদিকে ‘ডেভেলপমেন্ট অব ল্যান্ড কন্সট্রাকশন অব ২৭শ’ মেট্রিক টন জেট এ-ওয়ান ট্রোরেজ ট্যাংক অন ডেভলপমেন্ট ল্যান্ড কুর্মিটোলা অ্যাভিয়েশন ডিপো’ প্রকল্পটি অধরাই রয়ে গেছে।

প্রকল্পের ধীর অগ্রগতির কারণে আইএমইডি বিভাগের শিল্প ও শক্তি সেক্টরের পরিচালক বেগম নাসিমা মহসিন চলতি বছরে ২৬ জানুয়ারি প্রকল্পটি পরিদর্শন করেন। এতে দেখা গেছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে নানা ধরনের অবহেলা করা হয়েছে।

অন্যদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানায়, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের কুর্মিটোলা এভিয়েশন ডিপোর জ্বালানি তেল জেট এ-ওয়ান এর মজুদ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও বিমানের জেট এ ওয়ানের জ্বালানি তেলের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিতকরণের উদ্যোগ এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।

বিপিসি’র পরিচালক (অপারেশন ও পরিকল্পনা) মোসলেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতার কারণে বার বার বিলম্ব হচ্ছে। তবে নতুন উদ্যোগে প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি।

এবার প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবেন বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।
 
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিপিসি’র এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমে যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হয়েছিল তারা সঠিকভাবে কাজ করেনি। বার বার অহেতুকভাবে প্রকল্পের কাজে বিলম্ব করেছে তারা।

তিনি জানান, ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে নতুনভাবে ঠিকাদার অনুসন্ধান করা হচ্ছে। পরে দরপত্র আহ্বানের মধ্যে দিয়ে নতুনভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।

আশা করা যাচ্ছে জুন ২০১৭ সালের মধ্যে এবার প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ করতে পারবো, যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৬
এমআইএস/আরএইচএস/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।