ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বিদ্যুৎ নেই পানি নেই গ্যাস নেই!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০১১
বিদ্যুৎ নেই পানি নেই গ্যাস নেই!

ঢাকা: নানামুখি সংকটে পড়েছেন রাজধানীর মানুষ। বিদ্যুৎ এই আছে, এই নেই।

লাইনে পানি আছে তো গ্যাস নেই। আবার গ্যাস থাকলে, পানি নেই। সবার কাছে, সব স্থানে, সবসময় কেবল হাহাকার আর ‘অদৃশ্য’ কর্তাদের উদ্দেশে গালাগাল। সকাল দুপুর কিংবা রাত সংকটের ঘণ্টা বাজবে কখন কেউ জানে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছেও সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। কেউ কেউ আশার বাণী শোনালেও তা বাঁধা গতের মতোই শোনাচ্ছে, ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

বিদ্যুৎ থাকে কখন?
রাজধানীর মুগদাপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত ৮ ঘণ্টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ ছিল মাত্র পৌনে দুই ঘণ্টা।

মান্ডা এলাকার সোনামিয়ার গলির বাসিন্দা রুবেল মিয়া জানান, মঙ্গলবার প্রথম রমজানের দিনগত রাতে যে ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ভুগেছেন অতীতে কখনও এমন হয়নি। তিনি দাবি করেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় বিদ্যুৎ চলে গেলে দেখা মেলে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিটি পর রাত সাড়ে ৯টায়। সাড়ে ৯টায় বিদ্যুৎ এসে মাত্র ১৫ মিনিট থেকে চলে গিয়ে পৌনে ৩ ঘণ্টা লোডশেডিং থাকার পর বিদ্যুৎ আসে রাত ১টায়।

প্রায় অভিন্ন অবস্থার কথা বলেছেন বনশ্রী এলাকার বাসিন্দা দিদারুল আলম, গোরান এলাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম, খিলাগাঁওয়ের নজরুল ইসলামের। তারা সবাই দাবি করেছেন, সাম্প্রতিককালের মধ্যে গতকালের (মঙ্গলবার) লোডশেডিং ছিল বেশি।

এছাড়া রাজধানীর বাসাবো, ভাসানটেক, মাদারটেক, মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। মিরপুর-১ এলাকার বাসিন্দা নুুসরাত জাহান জানিয়েছেন, ‘সরকার ইফতার এবং সেহরির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বলছে। অথচ সেই সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। আর আমাদের কথা হচ্ছে, কেবল ইফতারের সময় বিদ্যুৎ দিলে আমরা রান্না করব কিভাবে। ’

তিনি বলেন, ‘সরকারকে তো আমরা আড়াই বছর কিছু বলিনি। আড়াই বছর পরে যদি সংকট বাড়ে তাহলে মেনে নেব কিভাবে?’

মেটে না তেষ্টা
বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের সঙ্গে পানি সংকট রাজধানীবাসীর জীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। শাহজাদপুর টিকাটুলি এলাকাসহ অনেক এলাকায় গত দুইদিন ধরে চলছে পানির সংকট।

শাহজাদপুর এলাকার বাসিন্দা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী লুনা খানম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার বাসায় গত দুই দিন ধরে পানি নেই। মাঝে মাঝে সামান্য একটু পানি পাওয়া গেলেও সেই পানি বুড়িগঙ্গার পানির চেয়েও নোংরা। খাওয়া দূরের থাক, ছুঁতেও গা ঘিন ঘিন করে।

ঢাকা ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে মোট পানির চাহিদা থাকে সাধারণত ২৩০ কোটি লিটার। কিন্তু গরম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫০ কোটি লিটারে। অপরদিকে, ওয়াসার উৎপাদন হচ্ছে ২১০ কোটি লিটার। সে হিসেবে স্বাভাবিক সময়ে ঘাটতি থাকছে প্রায় ২০ কোটি লিটার। গরম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানির চাহিদা বেড়েছে, তবে উৎপাদন বাড়েনি।

সাধারণত মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত ধরা হয় শুষ্ক মৌসুম। এ সময়ে পানির স্তর থাকে অনেক নিচে। অতীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট হলেও এবারই প্রথম ভরা বর্ষা মৌসুমে পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

বুধবার বিকেলে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর অফিসে মিটিংয়ে আছেন জানিয়ে বলেন, ‘এখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারব না। ’

‘উড়ে গেছে’ গ্যাস
বনশ্রী এলাকার ডি ব্লকের বাসিন্দা জুলেখা বেগম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বনশ্রী এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরে সকাল থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত গ্যাস থাকে না।

রমজান শুরু হওয়ার পর থেকে রাতেও গ্যাসের সংকট চলছে এমনকি মঙ্গলবার ভোররাতে সেহেরির জন্য রান্না করতে গেলে গ্যাসের চাপ কম থাকায় ফ্রিজ থেকে শুকনা খাবার বের করে সেহেরি সারতে হয়েছে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশিন কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (জেনারেল সার্ভিসেস) মাহফুজার রহমান বাংলানিউজকে বলেছেন, ‘প্রকৃত অর্থে গ্যাসের কোনো সংকট নেই। কোনো কোনো এলাকায় সঞ্চালন লাইনে সমস্যার কারণে কিছুটা গ্যাস সংকট থাকতে পারে। ’

তিনি বলেন রমজানে গ্যাস সরবরাহ নিরবছিন্ন রাখার জন্য ২৭ রমজান পর্যন্ত বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন বন্ধ রাখা, স্টিল রি-রোলিং মিলগুলো বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার এবং শিল্প এবং ক্যাপটিভ গ্রাহক (শিল্প-কারখানা) পর্যায়ে বিভিন্ন এলাকায় পর্যায়ক্রমে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।