এমন অভিযোগ সিলেটের দক্ষিণ সুরমার পিরিজপুরের ৫২৫ রহমান ভিলার বাসিন্দা আব্দুল মালেকের। অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিলে ভোগান্তির শিকার তিনি।
আব্দুল মালেকের মতো বিপাকে পড়া নগরীর মেন্দিবাগ ৬৩ নম্বর বাসার আতাউর রহমান আতা বলেন, আগের মাসে (জুলাই) ১২শ টাকা বিদ্যুৎ বিল আসে। কিন্তু অক্টোবরে এসেছে ৯ হাজার ৯শ’ ৪৬ টাকা।
ভুক্তভোগী এই গ্রাহক বলেন, মিটার রিডাররা বছরে ১/২ মাস ছাড়া কখনো মিটার দেখে বিল দেয় না। মিটারে রিডিং জমা থাকলেও এ দোষ গ্রাহকের নয়। এজন্য মিটার রিডাররা দায়ী। জমানো ইউনিট দিয়ে বাণিজ্যিক হারে বিল দেওয়া হয়েছে।
নগরীর আগপাড়া মৌসুমি আবাসিক এলাকার বাসিন্দা মামুন হাসান বাংলানিউজকে বলেন, বাসায় ফ্যান, লাইট জ্বলে, ফ্রিজ-টিভি চলে, ইন্ডাস্ট্রিতো চালাই না। জুলাইয়ে ২১শ টাকা বিল এলেও আগস্টে ২ হাজার ৪শ ইউনিট ধরে ২৩ হাজার টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। বিল নিয়ে অফিসে গেলে কর্মকর্তারা বিল রেখে দিয়ে বলেছেন ঠিক করে দেওয়া হবে। তাদের মতো লাখ লাখ গ্রাহককে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল ধরিয়ে দেওয়ায় বিপাকে পড়েছেন।
উদ্ভূত পরিস্থিতির অনুসন্ধান চালায় বাংলানিউজ। বেসরকারি কোম্পানি মুন্সি অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েট এর আওতায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে মিটার রিডিং করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসে।
ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে কিভাবে মিটার রিডাররা বিদ্যুৎখাতে সরকারের বারোটা বাজিয়েছেন, টেনে নিয়েছেন সিস্টেম লসের দিকে-এও জানা যায়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সিলেট বিদ্যুৎ বিতরণ অঞ্চলে ২ লাখ ৪৩ হাজার গ্রাহকের বিপরীতে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত ১৩ জন মিটার রিডার রয়েছেন। এই মিটার রিডাররা অফিসে বা বাসায় অফিস বানিয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা ব্যক্তি অধীনে শত শত লোকজনকে দিয়ে কাজ করাচ্ছেন। নিজেরা হয়েছেন সিবিএ নেতা। অধীনস্থরা গ্রাহকদের রিডিং কমিয়ে দেওয়ার নামে টাকা আদায় করে অনুমান নির্ভর বিল দিয়ে আসছিলেন।
সম্প্রতি ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্পষ্টভাবে অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল ফোন দিয়ে মিটারের ছবি সংগ্রহের মাধ্যমে বিল দিয়ে গেলে মিটারে জমে থাকা ইউনিটসহ অতিরিক্ত বিল গ্রাহকের হাতে পৌঁছে যাবে।
বাড়তি বিদ্যুৎ বিল ইস্যুতে সিলেটজুড়ে তোলপাড় চলছে। এ অবস্থায় অতিরিক্ত বিল নিয়ে হয়রানির শিকার গ্রাহকদের তোপের মুখে পড়েছেন বিদ্যুৎ কর্মকর্তারা। অবশ্য মিটার রিডারদের দুর্নীতির কারণেই গ্রাহকরা বিপাকে পড়েছেন বলেও স্বীকার করেছেন তারা।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সিলেট অঞ্চলের সহকারী পরিচালক (বাণিজ্য পরিষেবা) নাছরীন সুলতানা বাংলানিউজকে বলেন, ছবি তোলা পদ্ধতিতে রিডিং সংগ্রহের ফলে মিটারে জমে থাকা পুরনো ইউনিটগুলোর রিডিং বিল পৌঁছাচ্ছে গ্রাহকের হাতে। বিড়ম্বনায় পড়েছেন গ্রাহক।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সিলেট বিতরণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রতন কুমার বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, সিলেট অঞ্চলে সরকারি নিয়োগপ্রাপ্ত মিটার রিডার রয়েছেন ১৩ জন। তারা নিজেদের অধীনে অসংখ্য লোক নিয়োগ দিয়ে কাজ করিয়েছেন। গ্রাহকদের অনেকের সঙ্গে যোগসাজশ করে কিংবা বাসায় না গিয়ে রিডিং এনে অনুমান নির্ভর বিল দেওয়ায় মিটারে রিডিং জমা ছিল। কোনো সময় বেশি রিডিং দেখে মিটার গায়েব করে দেওয়া হতো। এ কারণে মিটার পুনঃস্থাপন বন্ধ রেখেছি।
এসব অভিযোগে প্রায় ২শ লোককে বাদ দেওয়া হয়েছে। তারা উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন।
তিনি বলেন, ছবি পদ্ধতি চালু হওয়ায় বকেয়া ইউনিট উঠে আসছে। এক্ষেত্রে গ্রাহকরা সাময়িক অসুবিধায় পড়লেও অতিরিক্ত বিল কিস্তিতে পরিশোধের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
প্রধান প্রকৌশলী আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনায় মিটার রিডিং প্রক্রিয়াটি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে ছবি পদ্ধতিতে রিডিং সংগ্রহ হবে। এতে ভুল হওয়ার সুযোগ নেই। সবকিছু সার্ভার থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে। মিটার রিডাররা বাসা-বাড়িতে স্বশরীরে গিয়ে মিটারের ছবি তোলার পরই সার্ভারে সব তথ্য চলে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১৭
এনইউ/এএ