চট্টগ্রাম: বঙ্গোপসাগরের ১৬ নম্বর ব্লকে প্রাকৃতিক গ্যাস প্রাপ্তির আশায় সাঙ্গু- সান্তোস ফিল্ড লিমিটেডের প্রথম কূপ খননের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অক্টোবরের মধ্যেই সাঙ্গু দক্ষিণ-৪ নামের এই কূপ খননের কাজ শেষ হবে।
নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দ্বিতীয় কূপ সাঙ্গ -১১ এবং জানুয়ারিতে উত্তর-পূর্ব সাঙ্গুতে তৃতীয় কুপ খননের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। তিনটি কূপ খননে মোট সময় লাগবে ১৮ মাস ।
সান্তোস-সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেডের সহ-সভাপতি (গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ) এবিএ সিরাজউদ্দৌলা বাংলানিউজকে জানান, আগামী এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রথম কূপে গ্যাস আছে কি না তা জানা যাবে।
বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ২২০০ মিটার পর্যন্ত কূপ খনন শেষ হয়েছে। ৩৬০০ মিটার গভীরে গিয়ে প্রথম কূপের খনন শেষ হবে।
বৃহস্পতিবার সীতাকুন্ডের সলিমপুরে সান্তোস-সাঙ্গু ফিল্ড প্লান্টের সম্মেলন কক্ষে এ তথ্য দেন সিনিয়র ড্রিলিং ইঞ্জিনিয়ার হাসনাইন ইব্রাহিম।
এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘এক সপ্তাহ পর প্রথম কূপ সাঙ্গু-দক্ষিণে গ্যাস পাওয়া-না পাওযার বিষয়ে জানা যাবে। এছাড়া দ্বিতীয় কুপ সোজা ৬০ ডিগ্রি এঙ্গেলে ডাইরেকশনাল ড্রিলিং পদ্ধতিতে খনন করা হবে। দ্বিতীয় কূপ খননের সময় সাঙ্গুর বর্তমান প্লাটফর্মের উপর রিগ বসানো হবে। তাই ঝুঁকি এড়াতে ওইদিন ২৪ ঘণ্টা বা কিছু সময় সাঙ্গু গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ রাখা হবে। ’
সান্তোসের সহ-সভাপতি এবিএ সিরাজউদ্দৌলা বলেন, ‘প্রথম কূপ দক্ষিণ সাঙ্গুতে গ্যাস পাওয়া গেলেও প্লাটফর্ম এবং পাইপলাইন না থাকায় সেখানে থেকে গ্যাস সরবরাহে সময় লাগবে। সাঙ্গ-১১তে বর্তমান প্লাটফর্মের উপর রিগ বসিয়ে ড্রিলিং করা হবে। ’
তাই এই কূপ থেকে গ্যাস পাওয়া গেলে আগামী জাুনয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি নাগাদ চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য সিঙ্গাপুর থেকে আনা অফসোর রিসিলিউট নামে নতুন রিগের মাধ্যমে গত ২৪ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরের ১৬ নম্বর ব্লকের দক্ষিণ-সাঙ্গুতে প্রাকৃতিক গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খননের কাজ শুরু করে সান্তোস।
এ ব্লকে মোট তিনটি কূপ খনন করবে সান্তোস। এজন্য সান্তোস প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।
উল্লেখ্য, ২০১০ সালে কের্য়ান এনার্জির কাছ থেকে সাগরবক্ষের এই গ্যাসক্ষেত্রটি কিনে নেয় অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক তেল গ্যাস অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান সান্তোস। এর আগে ত্রিমাত্রিক জরিপ শেষে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য নতুন করে কূপ খননের সিদ্ধান্ত নেয় তারা ।
কূপ খননের পর প্রাপ্ত গ্যাসের তাদের অংশ দেশের ভেতরে সরাসরি তৃতীয় পক্ষের কাছে বিক্রি করতে পারবে এমন শর্তে পেট্রোবাংলার সাথে গত সেপ্টেম্বরে চুক্তি করে সান্তোষ সাঙ্গু ফিল্ড লিমিটেড।
এর আগে ১৯৯৮ সাল থেকে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু করেছিল কেয়ার্ন এনার্জি। প্রথমদিকে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক প্রায় ১৮০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া গেলেও বর্তমানে এর মজুদ কমে ১৪ মিলয়নে এসে ঠেকেছে। এ গ্যাসক্ষেত্র থেকে ডিসেম্বরের পর আর গ্যাস পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন সাঙ্গু-সান্তোস ও পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা।
ভাইস প্রেসিডেন্ট এবি এ সিরাজদ্দৌলা জানান, উৎপাদন-বণ্টন চুক্তি অনুযায়ী তিনটি কূপ থেকে বেশি গ্যাস পাওয়া গেলে পেট্রোবাংলা ৮০ শতাংশ, সান্তোষ সাঙ্গু লিমিটেড ২০ শতাংশ আর কম গ্যাস পাওয়া গেলে সান্তোষ ৭০ শতাংশ এবং পেট্রোবাংলা মাত্র ৩০ শতাংশ গ্যাস পাবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১১