ঢাকা: ইন্সুরেন্স ও ৫ শতাংশ পারফমেন্স গ্যারান্টি দিতে রাজি হয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান গ্যাসপ্রম। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত দর থেকে ২ থেকে ৩ শতাংশ কমানোর কথাও গ্যাসপ্রমের প্রতিনিধিরা জানিয়েছে।
সোমবার দুপুরে পেট্রোবাংলার সভাকক্ষে বাংলাদেশের তেল-গ্যাস খাতে বিনিয়োগ চুক্তির বিষয়ে গ্যাসপ্রমের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল পেট্রোবাংলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসের মনসুর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আমরা চুক্তি হলে কি কি বিষয় থাকতে পারে যে সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি আরো জানান, এই আলোচনা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে আরও আলোচনা হবে।
গ্যাসপ্রমের প্রতিনিধি দলের মধ্যে ছিলেন প্রতিষ্ঠানটির আইন বিভাগের প্রধান আলেক্সান্ডার নিকিফোরভ, ইন্সুরেন্স ও ট্যাক্স বিভাগের প্রধান পেট ভি.অলেনিক, ইকোনোমিক এন্ড ফিন্যান্স বিভাগের প্রধান ইমিরলেন টি. টোরোমাইজভ। অন্যদিকে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান, পরিচালক (অপারেশন). পরিচালক (অর্থ) ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
পেট্রোবাংলার সূত্রে জানা গেছে, ৫টি উন্নয়ন কূপ ও ৫টি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য গ্যাসপ্রম মোট ১৯৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছিল।
মোট ১০টি কূপের প্রতিটির গড় ব্যয় ধরা হয়েছিল ১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
গ্যাসপ্রম তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রে ৪টি ও রশিদপুর গ্যস ক্ষেত্রে একটি উন্নয়ন কূপের করতে আর্থিক প্রস্তাবে মোট খরচ ধরা হয় ১০২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এর মধ্যে তিতস গ্যাস ত্রে উন্নয়ন কূপ করার সময়ে যেকোন ধরনের ব্লো-আউট বা দুর্ঘটনা মোকাবেলা এবং বর্তমানে বিভিন্ন কূপে থাকা ছিদ্র চিহ্নিতকরনের খরচ ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আর বাকী ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় ধরা হয় ৫টি উন্নয়ন কুপের।
পেট্রোবাংলার পরিকল্পনা অনুযায়ী তিতাস গ্যাস ক্ষেত্রের ১৯,২০,২১,২২ নং কূপ ও রশিদপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৮ নম্বর কূপ উন্নয়ন করা হবে।
এছাড়া বাপেক্সের নিয়ন্ত্রণাধীন বেগমগজ্ঞ, শাহাবাজপুর, শ্রীকাইল, সেমুতাং ও সুন্দলপুর গ্যাস ক্ষেত্রের ৫টি অনুসন্ধান কূপ খনন করা হবে। এই ৫টি অনুসন্ধান কূপের জন্য গ্যাসপ্রম ৯৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের আর্থিক প্রস্তাব দিয়েছিল।
অনুসন্ধান ও উন্নয়ন কূপ খননের ক্ষেত্রে দেশে অন্যান্য আইওসি গুলোর ব্যয় তুলনামুলক বিশ্লেষণে করলে দেখা যায় অনেক কমে প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাসপ্রম।
পেট্রোবংলা সূত্রজনিয়েছে, শেভরন ভোলার চরকাজলে অনুসসন্ধান কূপে ব্যয় করেছিল ২৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
১৯৯৮ সালে বিবিয়ানা-১ অনুসন্ধান কূপে ব্যয় হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিবিয়ানা-২ এর ২১ দশমিক ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১২ সালে বিবিয়ানাতে ৬টি উন্নয়ন কূপ খননের জন্য মোট প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এছাড়া কূপ খননে থার্ড পর্টি ইঞ্চিনিয়ারং সার্ভিসেস এর ক্ষেত্রে গ্যাসপ্রম পূর্বের প্রস্তাবে আর্ন্তজাতিক খ্যাতনামা কোম্পানী স্লামবার্জারকে দিয়ে কাজ করানোর কথা উল্লেখ করে। এছাড়া ১০টি কূপ কার্যাদেশ পাওয়ার ১৮ মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা বলে গ্যাসপ্রম।
এদিকে এর আগে গত ৫ অক্টোবর সর্বশেষ জ্বালানি বিভাগে গ্যাসপ্রমের ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সমঝোতা বৈঠক করে জ্বালানি বিভাগ।
বিগত বছরে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফরে গ্যাসপ্রমকে বাংলাদেশে তেল-গ্যাস খাতে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানালে তাদের একটি টিম বাংলাদেশ সফর করে এই প্রস্তাব দিয়েছিলো।
পেট্রোবাংলার একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে জানিয়েছে, জ্বালানি সেক্টরে কিছু লোক রয়েছে যারা আমেরিকার দালালি করতে চায়। সে কারণে রাশিয়ান কোম্পানির কম দরের প্রস্তাবও তারা ঝুলে রেখেছে।
অথচ দেশের স্বার্থেই গ্যাসপ্রমের প্রস্তাব বিবেচনা করা উচিত। তার মতে গ্যাসপ্রম কাজ শুরু করলে দরের ক্ষেত্রে একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হবে। যা থেকে সুফল পাবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১১