ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ওজোপাডিকোর রিবেট নিতে খুলনায় গ্রাহকদের ভোগান্তি

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২০ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৯
ওজোপাডিকোর রিবেট নিতে খুলনায় গ্রাহকদের ভোগান্তি লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন গ্রাহকরা, ছবি: বাংলানিউজ

খুলনা: মাত্র একটি বুথের সামনে সারিবদ্ধ হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন শত শত গ্রাহক। ছোট জায়গাটিতে সারির মারপ্যাঁচ এড়িয়ে আরও মানুষ ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করছেন। এ নিয়ে চলছে ঠেলাঠেলি হইহুল্লোড়।

মঙ্গলবার (০২ জুলাই) দুপুরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ওজোপাডিকো) খুলনার পাওয়ার হাউজ মোড়ের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এ গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সরেজমিনে এ বিতরণ বিভাগে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে।

গ্রাহকদের তালিকার বইয়ে সাক্ষর ও মোবাইল নাম্বার লিখে টোকেন নিতে বেশি দেরি হচ্ছে। কেউ কেউ ১০-১৫টি প্রি-প্রেইড মিটারের কার্ড নিয়ে এসেছেন।

বর্তমান বিদ্যুৎ বিলের পাশাপাশি বিগত দেড় বছরের রিবেট পাচ্ছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। সেই রিবেট নিতে এসেই তারা পড়েছেন নানা ভোগান্তি ও বিড়ম্বনায়।

গ্রাহকরা প্রি-পেইড মিটারের কার্ড নিয়ে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১, ২, ৩ ও ৪ এর দফতরে গেলে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে একটি টোকেন দিচ্ছে। যে টোকেনে প্রি-পেইড মিটার বসানো থেকে শুরু করে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যবহৃত বিদ্যুৎ মূল্যের ১ শতাংশ রিবেট অনুযায়ী যা হয় তার সম্পূর্ণ টাকা উল্লেখ রয়েছে। গ্রাহক ওই টোকেন নিয়ে তার প্রি-পেইড মিটারে ব্যবহার করতে পারছেন। ১৯ জুন থেকে এ রিবেট দেওয়া হচ্ছে।

গ্রাহকরা অভিযোগ করেন, পাওয়ার হাউজ মোড়ের বিতরণ বিভাগে ৭-৮টি বুথ থাকলেও মাত্র একটি বুথে একজন গ্রাহকদের টোকেন দিচ্ছেন। তিনি আবার খুবই ধীরগতির। যেখানে নারী, পুরুষ, বৃদ্ধ সবাইকেই একই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে।

সাধারণ গ্রাহকরা বলছেন, বিগত দিনের রিবেট ফেরত দেওয়া ওজোপাডিকোর দুর্নীতি-অনিয়ম এবং প্রি-পেইড মিটারের অস্বচ্ছতা বিরুদ্ধে খুলনাবাসীর আন্দোলনের ফসল। তবে ইচ্ছা করে রিবেট নিতে ভোগান্তির ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। এতোগুলো বুথ থাকতেও মাত্র একটি বুথে রিবেট দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। তাও আবার তাদের পরিচিতদের আগে বুথের ভেতরে নিয়ে দিচ্ছে। প্রতিবাদ করা হলে দুর্ব্যবহার করেন বুথে কর্মরতরা।

বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এ রিবেট নিতে আসা আব্দুস সালাম বলেন, মুখ চিনে পরিচিতদের আগে টোকেন দিচ্ছে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাশীন দলের নেতা এমনকি তাদের গাড়ির চালক পরে এসে আগে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমজনতা লাইনে দাঁড়িয়ে তা দেখছে।

অনুরূপভাবে শায়লা নামের এক গ্রাহক বলেন, নারী-পুরুষ সব এই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। এতে নারীদের বিব্রত হতে হচ্ছে। তিনি বলেন, পুরুষরা ধাক্কাধাক্কি করে সামনে আগাতে পারলেও নারীরা তা পারছে না।

আজমল নামের অপর এক গ্রাহক বলেন, ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই আমাদের ভোগান্তিতে ফেলেছে। তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুপুরে আধাঘণ্টা খাওয়ার বিরতি থাকলেও তারা একঘণ্টা লাগাচ্ছেন।

ওজোপাডিকোর একাধিক সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ইতোপূর্বে স্থাপিত প্রায় এক লাখ প্রি-পেইড মিটারের গ্রাহকদের বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) খুচরা বিদ্যুৎ মূল্যহার আদেশ মোতাবেক ১ শতাংশ রিবেট দেওয়া হয়নি। যার আদায় করা রাজস্বের পরিমাণ প্রায় দু’শ কোটি টাকা। ওই টাকার রিবেট অন্তত দু’কোটি টাকা ওজোপাডিকোর কাছেই থাকে। ৩০ এপ্রিল থেকে বর্তমান বিলের সঙ্গে  ১ শতাংশ রিবেট দেওয়া শুরু করে ওজোপাডিকো।

জানা যায়, প্রি-পেইড মিটারের তুঘলকি কারবার এবং ওজোপাডিকোর দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শুরু হওয়া আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই গ্রাহকদের ওই দু’কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনকারীরা শুরুতেই বৈঠক করে বলেছিলেন, গ্রাহকদের রিবেটের দু’কোটি টাকা ফেরত দিতেই হবে। এরপর প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটি, খুলনা গঠন হয়। সংগ্রাম কমিটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে কর্মসূচিও ঘোষণা করে। নগরের প্রাণকেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড়ে করা হয় মানববন্ধনও।

ঠিক এমন সময়ই ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের পুরাতন রিবেট দেওয়ার ঘোষণা দেন।

ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদুল হক বাংলানিউজকে বলেন, একটু কষ্ট করে গ্রাহকদের রিবেট নিতে হবে। নারী-পুরুষ একই বুথ থেকে নিতে হবে। এর বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। তাদের জনবল কম বলে দাবি করেন তিনি।

প্রি-পেইড মিটারে বিদ্যমান দুর্নীতি প্রতিরোধে সংগ্রাম কমিটির সদস্য সচিব মহেন্দ্রনাথ সেন বলেন, গ্রাহকদের রিবেটের টাকা ফেরত দেওয়া তাদের আন্দোলনের ফসল। কিন্তু তা পেতে যে ভোগান্তি হচ্ছে সেটা মেনে নেওয়া যায় না। গ্রাহকরা যাতে না আসে সেজন্য এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রাহকরা ভোগান্তি দেখে না এলে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ টাকাটা মেরে খাওয়ার পায়তারা করছে। এটা বন্ধ করে বুথ বাড়ানোর দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, জুলাই ০২, ২০১৯
এমআরএম/ওএইচ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।