রাশিয়ার সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নবভরোনেস প্রকল্প। ৭ ইউনিটের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৪টি ইউনিট চালু আছে।
বাংলাদেশে রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় পাবনা জেলার রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। নিজ দেশের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে আগ্রহী বিভিন্ন দেশকে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তিসহ সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে দেশটি।
বর্তমানে রাশিয়ায় ১০টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৬টি ইউনিট চালু রয়েছে এবং এগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন চলছে। আরও ৬টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নাধীন। এই প্রকল্পগুলোতে মোট ৮টি ইউনিট চালু করা হবে। এছাড়া আরও ২টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নক্শা তৈরির কাজ চলছে। এই প্রকল্প দুটিতে ৬টি ইউনিট থাকবে। পাশাপাশি নবভরোনেসসহ যেসব প্রকল্পের ইউনিটের আয়ু শেষ হয়েছে, সেগুলো সংস্কার করে আধুনিকায়ন করার পরিকল্পনাও রয়েছে। সব মিলিয়ে ১৮টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে মোট ৬৫টি ইউনিট চালু ও চালুর প্রক্রিয়ার আছে।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে প্রায় ৫০০ কিলোমিটার দূরে নবভরোনেসে সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে। এই প্রকল্পকে কেন্দ্র করে সেখানে গড়ে উঠেছে আধুনিক শহর। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসটাম) আমন্ত্রণে গত ১১ ডিসেম্বর নবভরোনেস প্রকল্পটি পদির্শনের সময় সেখানকার বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বে থাকা বিশেষজ্ঞ ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের কাছে এ সব তথ্য জানা গেছে। প্রকল্পের প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রধান নিকলাই এবং তথ্যকেন্দ্রের প্রধান ইউরি বাংলাদেশের সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে কথা বলেন।
বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি রাশিয়ায় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হয় ১৯৫৮ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে। দেশটির সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নবভরোনেস প্রথম প্রকল্প। ভিভিইআর ২১০ মডেলের রিয়্যাক্টর দিয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ১৯৫৮ সালে এবং প্রকল্পটি বিদ্যুৎ উৎপাদনে যায় ১৯৬৪ সালে। এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৯ সালে। বর্তমানে নবভোরনেসে ৪টি ইউনিট চালু আছে। এর মধ্যে ৪ ও ৫ নম্বর ইউনিট এক্সটেনশন টাইমে (বর্ধিত সময়) চলছে এবং ২০৩২ ও ২০৩৬ সালে এই দুটি ইউনিটের মেয়াদ শেষ হবে। ৬ নম্বর ইউনিট চালু হয়েছে ২০১৬ সালে এবং ৭ নম্বর ইউনিট চলতি বছর মে মাসে। এই ৭ নম্বর ইউনিটে রাশিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি ৩জি (+) প্রজন্মের ভিভিইআর ১২০০ মডেলের রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। জাপানের ফুকুসিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকে যেকোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে সক্ষম এই রিয়্যাক্টর উদ্ভাবন করেছে রাশিয়া। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হচ্ছে এই নবভরোনেসের রেফারেন্স প্লান্ট। রূপপুরের দুটি ইউনিটেই ভিভিইআর ১২০০ রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়া এই ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর উদ্ভাবনের পর বিভিন্ন দেশ এটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। এখন পর্যন্ত ফিনল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চীন, ভারত এবং বেলারুশ অত্যাধুনিক এবং সর্বোচ্চ নিরাপদ এই ভিভিইআর-১২০০ রিয়্যাক্টর প্রযুক্তি বেছে নিয়েছে। রোসাটম এসব দেশে ভিভিইআর- ১২০০ প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা করছে। সারা বিশ্বের ১২টি দেশে রোসাটমের বাস্তবায়নাধীন ৩৬টি ভিভিইআর প্রযুক্তির পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। বাংলাদেশের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৩ সালে এবং দ্বিতীয়টি ২০২৪ সালে উৎপাদন শুরু করবে। প্রতিটি ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন এই প্রকল্পে ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৯
এসকে/এজে