প্রতি নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা এই এলাকাকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিলেও কেউ কথা রাখে না। এসব জনপ্রতিধিরা তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘাইছড়ি উপজেলায় জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমান সরকার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে তৎকালীন সময়ে উন্নয়ন সমৃদ্ধি নগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে একটি পৌরসভা গঠন করে। তারপরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ অঞ্চলে। এ উপজেলা ১৯৯২ সাল থেকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এলেও খোদ পৌর এলাকার অধীন পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা এখনো বিদ্যুৎ সুবিধা পায়নি।
সরেজমিনে গেলে জানা যায়, উপজেলার পৌর এলাকার অধীন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বটতলী গুচ্ছ গ্রাম, হেডম্যান পাড়া, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তফা কলোনি, ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মাদ্রাসাপাড়া এবং ২ নম্বর ওয়ার্ডের আংশিক এলাকার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ সুবিধাবঞ্চিত।
এই পাঁচটি গ্রামের প্রায় কয়েক হাজার বাসিন্দা জন্মলগ্ন থেকেই বিদ্যুতের সুবিধা পায়নি। তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভ, পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত স্থানীয়রা বিদ্যুতের সুবিধা পেলেও তারা সেই সুবিধা পায় না।
যে কারণে তাদের কৃষিকাজ এখনো পরিচালনা করতে হয় সনাতন পদ্ধতিতে। বিদ্যুতের সুবিধা না পাওয়ায় কৃষিতে উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। চাহিদা অনুসারে ফসল উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে কৃষিতে আধুনিক পদ্ধতি প্রয়োগ করতে না পারায় তাদের আয়ের পরিধিও বাড়ছে না।
এছাড়া ওই এলাকায় অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা আধুনিক মাল্টিমিডিয়া শ্রেণী কার্যক্রম থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
স্থানীয়দের দাবি, বিদ্যুৎ সুবিধা পেলে তাদের গ্রামগুলো অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাবে। সরকার পাবে রাজস্ব। শিক্ষা কার্যক্রমের ব্যাপক প্রসার ঘটবে। তাই বর্তমান সরকার যে বলছে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেবে সেই কার্যক্রমের আওতায় অবিলম্বে তাদের গ্রামগুলোতে যেন দ্রুত সময়ে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়া হয় এ কামনা বর্তমান সরকারের কাছে।
মাদ্রাসাপাড়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ইয়াসিন রানা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা জন্মলগ্ন থেকে এই এলাকায় বসবাস করছি। পৌর এলাকায় বসবাস করেও বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
মোস্তফা কলোনির স্থানীয় বাসিন্দা মো. মোস্তফা বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় চরম ভোগান্তিতে দিন যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলেও আমাদের এলাকায় নাই, সে কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে আমাদের বেগ পেতে হয়।
এ ব্যাপারে বাঘাইছড়ি পৌরসভার মেয়র জাফর আলীর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি পার্বত্য মন্ত্রী ও আমাদের স্থানীয় এমপিকে এসব সমস্যার কথা বারবার বলেছি। কিন্তু এখনো সমস্যা সমাধান করতে পারেননি তারা।
মেয়র আরও বলেন, আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে ওয়াদাবদ্ধ ছিলাম। গ্রামগুলো দ্রুত সময়ের মধ্যে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে আসবো। কিন্তু আমি এখনো সেসব সুবিধা দিতে পারিনি জনগণকে। তাই বলে এখনো আমি হাল ছাড়ছি না। ক্ষমতায় যতদিন আছি, গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করে ছাড়বো। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে প্রয়োজনে বারবার যাবো।
মেয়র বলেন, আমার পৌর এলাকায় যে কয়টি গ্রামে বিদ্যুৎ নেই সেখানে যদি তিনশো থেকে সাড়ে তিনশো বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা যায় তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব গ্রামের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় নিয়ে আসা যাবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড বাঘাইছড়ি উপজেলার আবাসিক প্রকৌশলী সুগত চাকমা বাংলানিউজকে জানান, স্থানীয়রা যদি তাদের চাহিদা মাফিক একটি যৌথ আবেদনের মাধ্যমে রাঙামাটি জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটির আঞ্চলিক শাখাকে জানায় তাহলে তারা স্থানীয়দের চাহিদা ভিত্তিতে বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। এটা নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম কোনো কিছু দরকার নেই।
প্রকৌশলী আরও বলেন, জনগণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে সরকার রাজস্ব পাবে। তাই তারা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড রাঙামাটি আঞ্চলিক শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০২০
আরএ