অন্যদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশের সরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ২১১ বিলিয়ন ঘনফুট প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা মেটাতে একটি অনশোর তরলায়িত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএমজি) টার্মিনাল নির্মাণ করবে সরকার।
এ টার্মিনালের ধারণ ক্ষমতা হবে বছরে ৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন। যাতে বছরে ১৫ মিলিয়ন টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার সুবিধা থাকবে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কাতারের রাস লাফফান প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৫ এমটিপিএ এলএনজি সরবরাহের জন্য ১৫ বছরের ক্রয় বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
আরও একটি দীর্ঘ মেয়াদি (১০ বছর) চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে ওমানের ওমান ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনালের (ওটিআই) সঙ্গে বছরে ০ দশমিক ৫ থেকে ১ এমটিপিএ এলএনজি সরবরাহের জন্য। এছাড়া বাছাইকৃত সরবরাহকারী ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে ক্রয়-বিক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয় প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ইতোমধ্যেই জাপানি কোম্পানি দিয়ে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হয়েছে। কক্সবাজারের মাতারবাড়ির নিকট এই টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৬ মাস ধরে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ চলবে। এরপরেই মূল কাজ শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যেই টার্মিনাল নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে।
পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মাইনস) প্রকৌশলী মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, মাতাবাড়িতে পেট্রোবাংলা আরও একটি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডির কাজ শুরু হয়েছে। ছয় মাস পরে আমরা মূল কাজ শুরু করতে পারবো। মাতারবাড়িতে বিদ্যুৎহাব হবে, এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এলএনজি টার্মিনাল। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদন মানেই প্রাকৃতিক গ্যাস। এই কাজের জন্য কুয়েত আমাদের নানাভাবে সহায়তা করছে।
পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, স্বল্প ব্যয়সম্পন্ন বিদ্যুৎ বিস্তারের পন্থা অবলম্বনের জন্য প্রয়োজন স্বল্প ব্যয়ভিত্তিক জ্বালানি। জলবিদ্যুৎ, প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লা, এগুলো প্রতিটি স্বল্পব্যয় বিদ্যুৎ বিস্তারের অংশ। তরল জ্বালানি (ফার্নেস অয়েল ও ডিজেল) উচ্চ ব্যয়সাধ্য জ্বালানি। এগুলো ব্যবহার কমেও যাচ্ছে।
ভৌগলিক গঠন বিন্যাসের জন্য বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনাও কম। তবে দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ সমৃদ্ধ। কয়েকটি গ্যাস উৎসের মজুদের ওপর ভর করে বাংলাদেশ এতদিন ভালো সেবা দিয়েছে। যদিও সেগুলো দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য উন্নততর মূল্য নির্ধারণ ও চাহিদা ব্যবস্থাপনাসহ নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারের জন্য আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চলছে।
এলএনজি আমদানির জন্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। মোট ১ লাখ ৩৮ হাজার বর্গমিটার আয়তনের দুটি ভাসমান স্টোরেজ ও পুনর্গ্যাসীকরণ ইউনিট ইতোমধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিটা ইউনিটের সক্ষমতা ৫০০ এমএমএসসিএফডি।
প্রতি বছর ৩ দশমিক ৭৩ মিলিয়ন টনের প্রসেসিং সক্ষমতা সংবলিত প্রথম ইউনিট স্থাপিত হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট এনার্জি বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে এবং ২০১৮ সালে অগাস্ট মাসে এটার উৎপাদন কাজ শুরু হয়। দ্বিতীয়টি সামিট এলএনজি টার্মিনাল কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ২০১৯ সালের এপ্রিলে। উভয় ইউনিটের অবস্থান কক্সবাজার মহেশখালীর নিকট বঙ্গোপসাগরে। নতুন এলএনজি টার্মিনালের অবস্থানও পাশাপাশি হবে বলে জানায় পেট্রোবাংলা।
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২০
এমআইএস/এজে