রোববার (২৬ এপ্রিল) শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) প্রতিষ্ঠান গাজী ওয়্যারস লিমিটেড ২০১৪-১৫ অর্থ বছর থেকে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে যথাক্রমে ১৭.৪৭, ১৭.৮২, ১৯.৫৫, ১৬.৪৭, ২১.১৩ ও ৯.২৭ কোটি টাকা রাজস্ব দেয় এবং ১১.৯৮, ১৫.৮৮, ১৬.৪৩, ৮.৮৩, ৮.২৬ ও ১.২৫ কোটি টাকা লাভ করেছে।
গাজী ওয়্যারসের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. গোলাম কবির জানান, এ কারখানার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গাজী ওয়্যারস লিমিটেডের নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ৮ দশমিক ৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতালি হতে ২৫০ মেট্রিক টন উৎপাদন ক্ষমতা সম্পূর্ণ একটি ভার্টিক্যাল এনামেলিং মেশিন ক্রয় করে স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৯ সাল থেকে নতুন মেশিনটির মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়। গাজী ওয়ারস লিমিটেড প্রায় ৫৫ বছরের পুরাতন জাপানি যন্ত্রপাতির মাধ্যমে প্রতি অর্থবছর ৪০০ থেকে ৪৫০ মেট্রিক টন তামার তার উৎপাদন করতো। তবে নতুন এ মেশিনটি যুক্ত হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন অতিক্রম করেছে।
তিনি জানান, নতুন এ মেশিনটি যুক্ত হওয়ায় উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন অতিক্রম করেছে। ৫০ শতাংশ বৈদ্যুতিক শক্তিসহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাঁচামাল ও শ্রমিকের কর্মঘণ্টার সাশ্রয় এবং পুরাতন পদ্ধতির তিনগুণ পর্যন্ত তামার তার উৎপাদন করা সম্ভব। কারখানাটি একটি সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ও উন্নত মানের কাঁচামাল হতে বৈদ্যুতিক তার প্রস্তুত করায় বাজারে একই পণ্য উৎপাদনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাজী ওয়্যারসকে অসম প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বিএসইসির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) গাজী ওয়্যারস লিমিটেডের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এছাড়া পিডিবি, ডিপিডিসি, ডেসকো, পিজিসিবি, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রকল্পসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ কারখানায় উৎপাদিত বৈদ্যুতিক তার ক্রয় করে থাকে। গাজী ওয়্যারসের তামার তার প্রধানত ট্রান্সফর্মার, বৈদ্যুতিক মোটরসহ বিভিন্ন বৈদ্যুতিক ইকুপমেন্ট তৈরি ও মেরামতের কাজে ব্যবহার করা হয়।
বিএসইসির সূত্রে আরও জানা যায়, গাজী ওয়ারস বৃটিশ স্ট্যান্ডার্ড ও বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী প্রস্তুত করা হয়, যা বিএসটিআই ও আইএসও ৯০০১:২০১৫ সনদপ্রাপ্ত। উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ও উৎকর্ষতা অর্জনের জন্য গাজী ওয়্যারস লিমিটেড রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প ক্যাটাগরিতে ‘ন্যাশনাল প্রোডাকটিভিটি অ্যান্ড কোয়ালিটি এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৬' অর্জন করে।
১৯৬৫ সালে ব্যক্তি মালিকানায় চট্টগ্রামের কালুরঘাট শিল্প এলাকায় ৩ দশমিক ৮৯ একর জায়গার ওপর জাপানের ফুরুকাওয়া ইলেকট্রিক কোম্পানির কারিগরী সহায়তায় গাজী ওয়্যারস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৬৬ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার ১৯৭২ সালে এ প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল ও শিপবিল্ডিং করপোরেশনের সঙ্গে একীভূত করে। পরবর্তীতে এ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশনের অঙ্গ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। গাজী ওয়্যারস লিমিটেড বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন-২০১৮ এর তফসিলভুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান।
উল্লেখ্য, গাজী ওয়্যারস লিমিটেডের আধুনিকায়নের লক্ষ্যে অক্টোবর-২০১৮ হতে ‘গাজী ওয়্যারস লিমিটেডকে শক্তিশালী ও আধুনিকীকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কারখানাটিকে শক্তিশালী করে এটির উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষে সরকারি অর্থায়নে ৬৮ কোটি ৯৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, যা ডিসেম্বর ২০২১ সাল নাগাদ সমাপ্ত হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে গাজী ওয়্যারসের ৫০ বছরের বেশি পুরাতন যন্ত্রপাতি পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন যন্ত্রপাতি ও ডিজেল জেনারেটর স্থাপন করা হবে। ফলে কারখানার উৎপাদন ব্যয় কমবে, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানো ও অপচয় কমিয়ে এনে অধিকতর লাভজনক করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৬, ২০২০
জিসিজি/আরআইএস/