ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

মাতারবাড়ির বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়া প্রকল্পের বাড়ছে সময়-ব্যয়

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
মাতারবাড়ির বিদ্যুৎ ছড়িয়ে দেওয়া প্রকল্পের বাড়ছে সময়-ব্যয়

ঢাকা: জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে মাতারবাড়িতে ১২শ’ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কাজ চলমান। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নির্মাণ করা হবে সঞ্চালন লাইন।

‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্টেনদেনিং’ প্রকল্পের আওতায় এমন উদ্যোগ নেওয়া হবে। তবে প্রকল্পের সময় আড়াই বছর  বাড়ছে। একই সঙ্গে ব্যয় বাড়ছে ১৪৪ কোটি টাকা।

প্রকল্পের মাধ্যমে চট্টগ্রামে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করা হবে। পাশাপাশি ঢাকা এবং চট্টগ্রামের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ক্ষমতার উন্নয়ন ও নিশ্চিতকরণ করা হবে। যার প্রভাব পড়বে পুরো বাংলাদেশে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি)। প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগে পাঠিয়েছে পিজিসিবি।  

৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি জুলাই ২০১৬ থেকে ডিসেম্বর ২০২০ মেয়াদে বাস্তবায়ন হওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এখন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেনদেনিং প্রকল্পের আওতায় ২১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ (ওভারহেড) মেঘনাঘাট মদুনাঘাট ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন স্থাপন করছে পিজিসিবি।

পিজিসিবির প্রস্তাবনার আলোকে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা করেছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য(সচিব) শরিফা খানের সভাপতিত্বে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিজিসিবির কাছে কিছু মতামত দিয়েছে কমিশন। সভায় মূলত প্রকল্পের সময় ব্যয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে তার আগে কিছু মতামত দিয়েছে কমিশন। মতামতের জবাব পেলেও প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের প্রধান (অতিরিক্ত সচিব) কামরুন নাহার বাংলানিউজকে বলেন, পিজিসিবি আমাদের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। মূলত প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। প্রকল্পটি নিয়ে পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পিজিসিবির নিকট থেকে কিছু মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামতগুলো পেলেই প্রকল্পটি একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে। ’

নানা কারণে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ছে বলে জানায় পিজিসিবি। প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে। কিন্তু ১ জুলাই ২০১৬ তারিখে  গুলশানের হলি আর্টিজান সন্ত্রাসী হামলার কারণে প্রকল্পের যৌথ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টিপসকো নিপ্পন ও কোই জাপান ফিল্ড অফিসে আসতে বিলম্ব করে। বাংলাদেশে ফিশ অফিস বিলম্বে মবিলাইজ করা, বিডিংয়ে অংশগ্রহণে একাধিকবার ক্লিয়ারিফিকেশন চাওয়া হয়। এছাড়া ২০২০ সালের মার্চ থেকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক মহামারিতে প্রকল্পের কাজ বিলম্ব হয়। দীর্ঘ সাধারণ ছুটি থাকার কারণে মাঠ পর্যায়ে নির্মাণ কাজ চলমান রাখা সম্ভব হয়নি এবং বিদেশ হতে মালামাল আমদানিতে যথেষ্ট বিলম্ব হয়।

নানা কারণে প্রকল্পের চুক্তি বাস্তবায়ন পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা নিরসন, ঠিকাদারের পাওনা পরিশোধসহ নানা কারণে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়েছে।

অন্যান্য সরঞ্জাম ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি কেনা খাতে ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকার সংস্থান আছে। কিন্তু টার্নকি চুক্তি অনুযায়ী সংশোধিত ডিপিপিতে যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেনা বাবদ ৭৮ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে এ খাতে ২৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা বাড়ছে। প্রকল্পের পরিবর্তিত স্কোপে ২ দশমিক ৬০ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক বিনিময় হারের পরিবর্তনের কারণে ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকল্পের আওতায় আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট বাবদ ২৭৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে।  

সরকারের পরিকল্পনা হলো ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি বাড়িতে বিদ্যুৎ সেবা পৌঁছে দেওয়া। সেই লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সম্প্রসারণসহ এর অবকাঠামো খাতের উন্নয়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকার গ্যাসের ব্যবহার কমিয়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে জাইকার অর্থায়নে মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের কাজ বাস্তবায়নাধীন। এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকা পর্যন্ত সরবরাহের নিমিত্তে প্রয়োজনীয় সঞ্চালন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মেইন পাওয়ার গ্রিড স্ট্রেনদেনিং’ প্রকল্প নেওয়া হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম এলাকায় ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামে নিরবিচ্ছন বিদ্যুৎ সঞ্চালন নিশ্চিতকরণ সম্ভব হবে।

মূল প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে ছিল সরকারি তহবিল থেকে এক হাজার ৩৪০ কোটি ৪০ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৪৫৯ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। বাকি ২ হাজার ৭৬৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে জাইকার কাছ থেকে পাওয়া যাবে। এখন সংশোধিত প্রকল্পে ১৪৪ কোটি টাকা বাড়ছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৫৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৪, ২০২১
এমআইএস/এজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।