সাভার (ঢাকা): নাহিদা বেগম আশুলিয়া এলাকার নরশিংহপুরের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। সকালে কোনো দিন বিদ্যুৎ না থাকলে সেদিন খাওয়া, গোসল ছাড়াই অফিসে যেতে হয় তার।
সম্প্রতি নাহিদা বেগমের মতো এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের সমস্যায় রয়েছেন শিল্পাঞ্চলের কয়েক লাখ পোশাক শ্রমিক। খেয়ে না খেয়ে সঠিক সময়েই অফিসে উপস্থিত হতে হচ্ছে তাদের। ঘন-ঘন বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের জনজীবন।
গত সপ্তাহ থেকে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর আওতাধীন আশুলিয়ার সব কয়টি এলাকায় ঘন-ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। এ কারণে শ্রমিকদের সঙ্গে বিপাকে রয়েছে ছোটো কিছু পোশাক কারখানাও।
নাহিদা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, সকালে উঠে কারখানায় যাবো। উঠে দেখি ঘুম থেকে কারেন্ট (বিদ্যুৎ) নেই। কারেন্ট না থাকলে তো আমরা অচল। পানি থাকে না, রান্না করা যায় না। অপেক্ষা করে চলে গেলাম অফিসে। আবার দুপুরে বাসায় এসেছি তাও কারেন্ট নেই। আজ সারাদিন না খেয়ে গোসল না করেই অফিস করছি। এটা শুধু আজকের ঘটনা না গত দুই তিন দিন থেকে এমন হচ্ছে। সকাল-দুপুর কারেন্টটুকু দিলেও তো আমরা খেয়ে অফিসে যেতে পারি ।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, যত কষ্ট সব আমাদের। বেতন পাই কয় টাকা চাইলের (চাল) দামসহ সব কিছুর দাম বেশি। আমরা আরেক জেলা থেকে এখানে চাকরি করতে আইছি সব কিছু কিনে খাইতে হয় পানিও কিনে খাইতে হয়। কয়েক দিন হলো বিদ্যুৎ একটু পরপর আসে যায়। রাতে গরমে ঘুমানো যায় না।
জানা গেছে, গত সপ্তাহ থেকে আশুলিয়ার জিরানী, ধামসোনা, নরশিংহপুর, আশুলিয়া, পল্লিবিদ্যুৎ, কাঠগড়া, বাইপাইল, নবীনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং দেখা গেছে। আকাশে একটু মেঘ আর হালকা বাতাস পেলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। দিনে অন্তত ১০ বারের অধিক সময় লোডশেডিং হয়।
আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানার নিবার্হী পরিচালক মাহবুবুল আলম রিপন বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন সকাল, দুপুর, সন্ধ্যা ও রাতে বেশ কয়েকবার করে বিদ্যুৎ চলে যায়। এতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছি আমরা। সোমবার দুপুর পর্যন্ত পাঁচ বারের মতো লোডশেডিং হয়েছে। আমাদের কারখানা জেনারেটর রয়েছে তবে ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে গেলে কাজের অনেক হ্যাম্পার হয়। উৎপাদনে অনেক সমস্যা হয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করার দাবি জানাচ্ছি। অশিল্পাঞ্চল ও আবাসিক খাতে সরকারের উচিত আলাদা লাইনের ব্যবস্থা করা। এতে করে বৈদেশিক আয় বাড়বে।
এলাকার শিক্ষার্থীরা জানায়, সামনেই তাদের এসএসসি পরীক্ষা। সন্ধ্যার পর একাধিকবার বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় পড়াশোনা করতে খুব কষ্ট হয়। বার বার লোডশেডিং হওয়ার ফলে লেখাপড়াও ঠিকমতো হয় না। তাই এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের দাবি জানান তারা।
এব্যাপারে ঢাকা পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান কবীর বাংলানিউজকে বলেন, গত তিন দিন থেকে খুব বেশি বিপদে আছি। আমরা সবাই মোটামোটি কিন্তু জানি এখন কেন লোডশেডিং হচ্ছে। তরপরেও দোষটা আসছে ইউটিলিটির ওপর। এখানে আমাদেরও করার কিছু নেই। যেমন আমার ১২২ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। আমি অর্ধেকের মতো পাচ্ছি আর অর্ধেক পাচ্ছি না।
শিল্পাঞ্চলের জন্য আলাদাভাবে বিদ্যুতের বাড়তি মেগা ওয়াট দেওয়া হয় কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের যে চাহিদা, সেই চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পেলে আর কোনা সমস্যা থাকতো না। চাহিদা মতো তো পাচ্ছি না। আমার যেমন এখন দরকার প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিন্তু আমি পাচ্ছি ধরেন ১৭০-৮০ মেগাওয়াট। তাহলে আমার ১২০-২২ মেগাওয়াট পাচ্ছি না। তবে আশা করছি খুব দ্রুতই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, ০৫ জুলাই, ২০২২
এসএফ/এসআইএস