ঢাকা: বোরো সেচে সরকার প্রতিশ্রুত রাত ১১টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না কৃষক। এ কারণে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বোরো ক্ষেতে সুষ্ঠুভাবে সেচ দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না বলে চাষীরা অভিযোগ করেছেন।
বোরো চাষীরা ফোনে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, দিনদিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে ভোল্টেজ স্বাভাবিক থাকলেও কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে লো-ভোল্টেজে বিদ্যুৎ সরবরাহ। যে কারণে বিদ্যুৎ থাকলেও অনেক সময় মোটর দিয়ে পানি উঠছে না।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহানুর ইসলাম লেলিন ফোনে বাংলানিউজকে জানান, দিনে রাতে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।
তিনি জানান, গত মঙ্গলবার ভোর ছয়টায় বিদ্যুৎ চলে যায়। আসে পাঁচ ঘণ্টার পর সকাল ১১টায়। ঘণ্টা খানেক থেকে ফের চলে যায়, আসে দেড় ঘণ্টা পর। এভাবে দিনে মাত্র আড়াই ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যায়।
‘রাতে যদি নিরবছিন্ন সরবরাহ পাওয়া যেত তাহলে আমাদের আক্ষেপ থাকত না। কিন্তু কোনোদিনই রাতে নিরবছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। সন্ধ্যার আগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এরপর রাত ১১টায় বিদ্যুৎ আসলেও রাত আড়াইটার দিকে চলে যায় দেখা মেলে ভোরে। ভোরের দফায় বিদ্যুৎ স্থায়ী থাকছে সর্বোচ্চ ১ ঘণ্টা,’ যোগ করেন তিনি।
পীরগঞ্জ এলাকার বিতরণ কর্তৃপক্ষ রংপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, ‘এতদিন লোড ক্যাপাসিটির সমস্যার কারণে সংকট ছিলো। সে কারণে সরবরাহ থাকলেও লোড নেওয়া সম্ভব হতো না। ’
এ কারণে রাতে লোডশেডিং থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, পীরগঞ্জে একটি পাঁচ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন সাব-স্টেশন চালু হয়েছে। এখন আর সমস্যা থাকবে না বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তার বিতরণ এলাকায় দিনে একেবারেই বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না দাবি করে বলেন, দিনে ৩২ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। রাতের প্রথমভাগে ২৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৮ এবং শেষভাগে সর্বোচ্চ ২৬ মেগাওয়ার্ট সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে।
মেহেরপুর এলাকার এক বোরোচাষী বাংলানিউজকে জানান, তারা দিনে রাতে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। এ কারণে তাদের বোরো জমিতে সেচ দিতে সমস্যা হচ্ছে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাসান শাহনাজ বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, তার বিতরণ এলাকায় অফ-পিক আওয়ারে (রাত ১১টা থেকে সকাল ৭টা) ৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে ৬ থেকে ৮ মেগাওয়াট, পিক আওয়ারে ( সকাল ৭ টা থেকে রাত ১১ টা) ২০ মেগাওয়াট চাহিদার সময় সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে মাত্র ১৩ মেগাওয়ার্ট।
সেচ মৌসুমে (জানুয়ারি-এপ্রিল) দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৭ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। যার বিপরীতে ওই সময়ে উৎপাদন হবে ৫ হাজার ৯৪৫ মেগাওয়াট। কিন্তু বতর্মানে উৎপাদন ৫ হাজারের অংকে ঘুরপাক খাচ্ছে পিডিবি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন মৌসুমে সারা দেশে দুই লাখ ৯৯ হাজার ৭৫৬টি সেচ পাম্প রয়েছে। যা বিগত সেচ মৌসুমের চেয়ে ৮ শতাংশ বেশি।
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) আওতায় ১০ মার্চ তারিখ পর্যন্ত ২ লাখ ৫৮ হাজার ২১৪টি, পিডিবির ৩৭ হাজার ৩৭০টি, ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) ৪ হাজার ৯৯ টি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) ৪৯টি এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ডিপিডিসি) আওতায় ২৪টি সেচ পাম্প রয়েছে।
আরইবি সূত্র জানিয়েছে, তাদের বিতরণ এলাকায় মোট সেচ যন্ত্রের মধ্যে ৩১ হাজার ২৬৯টি গভীর নলকূপ, দুই লাখ ১৬ হাজার ৬০২টি শ্যালো এবং ৮ হাজার ৩৪৩টি পাম্প রয়েছে। এতে তাদের বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে এক হাজার ৩২১ মেগাওয়াট।
আরইবির দৈনিক সরবরাহ চিত্রই বলে দিচ্ছে বোরো চাষীরা রাতেও নিরবছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। আরইবি ১৩ মার্চ ভোর পাঁচটায় দুই হাজার ২৬ মেগাওয়াটের বিপরীতে এক হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট, সকাল ১০ টায় দুই হাজার ৮৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে এক হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট, রাত আটটায় দুই হাজার ৯০০ মেগাওয়াটের বিপরীতে এক হাজার ৩০০ মেগাওয়াট ও রাত ১২টায় দুই হাজার ৮৫ মেগাওয়াটের বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র এক হাজার ৭৬০ মেগাওয়াট।
আরইবির পরিচালক নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, গত বছরের চেয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ অনেক বেড়েছে। গত সেচ মৌসুমে এই দিন পর্যন্ত তিন দিন ঘন বৃষ্টি হয়েছিল, এবার একদিনও হয়নি। একদিন বৃষ্টি হলে কমপক্ষে ১০ দিন পানি সেচ না দিলেও চলে। সে কারণে সমস্যা বেশি মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।
সরকার বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ালেও একই সঙ্গে পুরাতন কেন্দ্রগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে লোডশেডিং ঠেকানো যাচ্ছে না বলেও সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৫, ২০১২
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিস্ট্যান্ট আউটপুট এডিটর