ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ফেসবুকেও প্রশংসিত তুরিন আফরোজ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
ফেসবুকেও প্রশংসিত তুরিন আফরোজ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের তুখোড় বুদ্ধিমত্তার বেশ আলোচনা রয়েছে আদালত পাড়ায়। কিন্তু এ জনপ্রিয়তা শুধু আদালতেই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে অনলাইনেও।

 

অল্প সময়েই ব্যারিস্টার তুরিনের ফেসবুক ফ্যান পেজে হাজারো লাইক পড়েছে। পেজটিতে বিভিন্ন সংবাদের ভিডিও ক্লিপস, নিজের লেখা নানা কলাম ও পত্র-পত্রিকারও লিংক শেয়ার করেছেন তিনি। যা মুহূর্তেই লাইক-কমেন্টসের ভরে দিচ্ছেন তার ভক্তরা-অনুরাগীরা।  

গত ১৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ-ভারতের মৈত্রী ও এর দ্বি-পক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে একটি পোস্ট করেছেন ব্যারিস্টার তুরিন। এতে যুদ্ধাপরাধের বিচারে ভারতের সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন তিনি।  

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার স্ট্যাটাসে লিখেন- 
‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (আইসিটি) যে বিচারিক কার্যক্রম চলছে, ভারত তা সমর্থন করে। এই সমর্থনের পেছনে দায়িত্ববোধ ছাড়াও রয়েছে গভীর মমত্ববোধ। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে যে শিশুদেশটি জন্ম নিয়েছিল, সে জন্মে ভারতের ভূমিকা ছিল দক্ষ ধাত্রীর মতো। একজন ধাত্রী যেমন অত্যন্ত বিজ্ঞতায় একটি শিশুকে প্রসববেদনার্ত মায়ের জরায়ু চিরে নিয়ে আসেন পৃথিবীর আলোতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভেও ভারতের ভূমিকা ছিল সেই ধাত্রীর মতো। ’ 

‘একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের শিকার হয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা তখন ভারত সরকার করেছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেয়া ছাড়াও অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহও তখন ভারত করেছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মিত্রদেশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সব মিলিয়ে ভারতের তখন খরচ হয়েছিল প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। মিত্রবাহিনী হিসেবে মুক্তিবাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধে অংশ নিয়ে নিহত ও আহত হয়েছিল ভারতের হাজার হাজার সেনা। ’

ভারত ও বাংলাদেশের ‘মৈত্রী’ শুধু দু’টি প্রতিবেশী দেশ বা পারস্পরিক বাণিজ্যিক হিসাব-নিকাশের ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়নি। ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ সফরের সময় এক বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে যদি সূর্য ওঠে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সে আলো ভারতে গিয়ে পৌঁছবে। ’ 

তার এই বক্তব্যের যৌক্তিকতাই স্পস্ট করে ভ্রাতৃপ্রতীম দু’টি দেশের যৌথ প্রচেষ্টা ও নেতৃত্বকে, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ‘সভ্যতার-সূর্যে’ কে আরো অধিকতর উজ্জল করে ছড়িয়ে দেবে সারাবিশ্বের প্রান্তরে। জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু”

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার তুরিন বলেন, ‘একাত্তর নিয়ে কাজ করছি বহুবছর ধরে। গত কয়েক বছর ধরে সর্বক্ষণ যুক্ত আছি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে, যা বাংলাদেশ তথা সারাবিশ্বই জানে। যুদ্ধাপরাধ ও বাংলাদেশ নিয়ে একাধারে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে যে উপলব্ধির জন্ম হয়েছে, আমার ফেসবুক পোষ্টে আমি তা-ই তুলে ধরেছি। ’

‘‘আমার এ উপলব্ধির সঙ্গে সবাই সহমত পোষণ করবেন সে আশা আমি করি না। তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিবেশী ভারতের যে ‘মৈত্রী’, তা অনস্বীকার্য,’’ যোগ করেন তিনি।  

১৯৭১ সালে ঢাকায় জন্ম নেওয়া ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজের বাবা তসলিম উদ্দিন আহমেদ ছিলেন ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা।  
গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর জলঢাকা থানার চাওরাডাঙ্গি হলেও বেড়ে ওঠেছেন ঢাকায়। ভারত সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়েছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন লেডি শ্রী রাম কলেজে। অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করেছেন দিল্লি স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে ।  

এরপর যুক্তরাজ্যের লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি (অনার্স), অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন সিডনি থেকে এলএলএম (ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ল) ও মনাশ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন তিনি।  

ব্যারিস্টার ড. তুরিন আফরোজ বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে অ্যাডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেলের পদমর্যাদায় প্রসিকিউটর হিসেবে কর্মরত।  

এছাড়াও ‘ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়’-এ আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টেরও একজন আইনজীবী তিনি।  

আইন বিষয়ে দেশে-বিদেশে তার অসংখ্য বই ও প্রবন্ধ প্রকাশনা রয়েছে। তার গবেষণার উল্লেখযোগ্য বিষয় হল- আইন ও উন্নয়ন, যুদ্ধাপরাধ আইন, আন্তর্জাতিক আইন, সাংবিধানিক আইনসহ আরও অনেক বিষয়।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০১৬
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।